Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

জলেই তিন কোটি টাকার নিকাশি

অভিযোগ, টাকা খরচ হলেও নিকাশির সমস্যা মেটেনি। উপরন্তু অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পাইপলাইন বসানো ও গালিপিট তৈরি হওয়ায় বর্ষায় মরণফাঁদ হয়ে গিয়েছে ওই অংশ।

বেহাল: বর্ষায় রাস্তার হাল এমনই। নিজস্ব চিত্র

বেহাল: বর্ষায় রাস্তার হাল এমনই। নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস দাশ
শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৮ ০৮:১০
Share: Save:

চিকিৎসায় খরচ হয়েছে তিন কোটি টাকা। তাতে রোগ তো সারেইনি, বরং সারা গায়ে ঘা নিয়ে রোগী এখন কোমায়।

হাওড়ার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা পঞ্চাননতলা রোডের এমনই হাল এখন। ওই রাস্তার জল জমার সমস্যা মেটাতে মাত্র পৌনে এক কিলোমিটার রাস্তা কেটে পাইপ বসাতেই এই খরচ। অভিযোগ, টাকা খরচ হলেও নিকাশির সমস্যা মেটেনি। উপরন্তু অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পাইপলাইন বসানো ও গালিপিট তৈরি হওয়ায় বর্ষায় মরণফাঁদ হয়ে গিয়েছে ওই অংশ। এ দিকে, মাত্র পৌনে এক কিলোমিটার অংশের জন্য এত টাকা খরচ করেও সমস্যা না মেটায় বড় দুর্নীতির গন্ধ পাচ্ছে পুরসভারই একাংশ।

মধ্য হাওড়ার ব্যস্ত রাস্তা বলে পরিচিত দু’কিলোমিটার লম্বা পঞ্চাননতলা রোড। রাস্তার বেশির ভাগ অংশে সামান্য বৃষ্টিতে হাঁটু জল জমে যায়। ভারী বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। আশপাশের গলি ছাপিয়ে জমা জল ঢুকে যায় গৃহস্থের রান্নাঘরে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে এলাকার নর্দমাগুলি পরিষ্কার না হওয়ায় নিকাশি ব্যবস্থাই ভেঙে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন পাইন বলেন, ‘‘প্রতি ফেব্রুয়ারিতে কিছুটা হলেও নর্দমা পরিষ্কার করা হত। এ বার সেটাও হয়নি। বর্ষায় পাইপ বসানো শুরু করেও তা শেষ হল না। ফলে গোটা রাস্তা এখন মরণফাঁদ হয়ে রয়েছে।’’

কাজ শেষ হওয়ার আগেই গাড়ির ভারে বিভিন্ন জায়গায় পাইপলাইন ও গালিপিট ভেঙে ঢুকে গিয়েছে মাটির নীচে। পুরকর্তাদের একাংশের অভিযোগ, ওই পাইপ পাতা হয়েছে মাটির নীচে কোনও কংক্রিট না করেই। গালিপিটগুলি বসানো হয়েছে ইটের উপরে। এমনকি পাইপের ধার দিয়েও দেওয়াল তোলা হয়নি। তাই কোথাও কোথাও কাজ শেষের আগেই গাড়ির চাপে রাস্তা ধসে পড়েছে। এলাকার বাসিন্দা পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘পাইপ বসাতে গিয়ে এমন হাল হয়েছে যে হাঁটাচলাও করা যাচ্ছে না। পাইপ বসানোর আগে জল বেরোবে কী ভাবে তা নিয়ে কোনও ভাবনা-চিন্তাই করা হয়নি।’’ ফলে এরই মধ্যে সেখানে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে। বাধ্য হয়ে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

পুরসভা সূত্রের খবর, ওই রাস্তার বৃষ্টির জমা জল বার করার জন্য গত বছর পঞ্চাননতলায় একটি পাম্প হাউস করা হয়েছিল। এ জন্য বেলিলিয়াস রোড থেকে পঞ্চাননতলা পাম্প হাউস পর্যন্ত জমা জল পাম্প করে চার্চ রোড ও মহাত্মা গাঁধী রোড দিয়ে বার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। দায়িত্ব দেওয়া হয় এক ঠিকাদার সংস্থাকে। তারা আবার সাব-কন্ট্রাক্ট দেয় আরও একটি সংস্থাকে। সে কাজেও লাভ হয়নি। কারণ রাস্তার ঢাল রয়েছে গঙ্গার উল্টোদিকে অর্থাৎ পশ্চিমে ড্রেনেজ ক্যানেল রোডের দিকে। সেখানে পাম্প হাউসের পাইপ বসানো হয়েছে পূর্ব ঢালে। তাই জমা জল বেরোতে পারে না।

যার উদ্যোগে এই পাইপ বসানোর সিদ্ধান্ত সেই তিন নম্বর বরোর চেয়ারম্যান গৌতম দত্ত বলেন, ‘‘বর্ষার আগেই ওই কাজ শেষ হত। যে সংস্থাকে কাজ করতে দেওয়া হয়েছিল তারা ঠিক মতো কাজ করেনি। তাই সংস্থাটিকে সরিয়ে অন্য সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়েছি।’’

হাওড়া পুরসভার মেয়র রথীন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কেন এত টাকা খরচ হবে, তা ইঞ্জিনিয়ারদের খোঁজ নিয়ে দেখতে বলেছি। এমন করে কাজ কেন হল তা জানতে চেয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Drainage System Water Logging
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE