Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

নেশাড়ুদের দখলে পর্যটন কেন্দ্র, ব্যবস্থা দাবি

এলাকায় পর্যটনের প্রসারে এবং শিশু ও বয়স্কদের সকাল-সন্ধ্যা বেড়ানোর জায়গা হিসেবে প্রায় আট বছর আগে বাগনানের মানকুরে পর্যটন কেন্দ্র ও শিশু উদ্যান তৈরি করেছি জেলা পরিষদ। কিন্তু সেই পার্ক থেকে এখন মুখ ফিরিয়েছেন বহু প্রবীণ। ছোটদেরও আর পার্কে নিয়ে যেতে চান না বহু অভিভাবককই। কেননা, পার্কের দখল নিয়েছে নেশাখোররা। বিকেল থেকেই পার্কের নানা দিকে প্রকাশ্যে মদ-গাঁজার নেশা শুরু হয়ে যায় বলে তাঁদের অভিযোগ।

হতশ্রী পার্ক। ছবি: রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়।

হতশ্রী পার্ক। ছবি: রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাগনান শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৩৭
Share: Save:

এলাকায় পর্যটনের প্রসারে এবং শিশু ও বয়স্কদের সকাল-সন্ধ্যা বেড়ানোর জায়গা হিসেবে প্রায় আট বছর আগে বাগনানের মানকুরে পর্যটন কেন্দ্র ও শিশু উদ্যান তৈরি করেছি জেলা পরিষদ। কিন্তু সেই পার্ক থেকে এখন মুখ ফিরিয়েছেন বহু প্রবীণ। ছোটদেরও আর পার্কে নিয়ে যেতে চান না বহু অভিভাবককই। কেননা, পার্কের দখল নিয়েছে নেশাখোররা। বিকেল থেকেই পার্কের নানা দিকে প্রকাশ্যে মদ-গাঁজার নেশা শুরু হয়ে যায় বলে তাঁদের অভিযোগ। নেশাখোরদের উপদ্রব বন্ধ করার দাবিতে তাঁরা জেলা পরিষদেরও দ্বারস্থ হয়েছেন।

জেলা পরিষদের বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ মানস বসু বলেন, ‘‘গেট না থাকার জন্যই পার্কে যে যখন পারছে ঢুকে পড়ছে। আমরা পার্কটি সংস্কারের পরিকল্পনা করেছি। গেট বসানো হবে। এ ছাড়া, বসার জায়গা, শৌচাগার সংস্কার করা হবে। নিরাপত্তারও ব্যবস্থা করা হবে। তা হলেই নেশাখোরদের উৎপাত বন্ধ করা যাবে বলে মনে হয়।’’ সংস্কারের পরে পার্কটি বাগনান পঞ্চায়েত সমিতির হাতে তুলে দেওয়া হবে বলেও মানসবাবু জানান।

মানকুরে রূপনারায়ণের তীরে মনোরম পরিবেশে ২০০৭ সাল নাগাদ তৎকালীন বামফ্রন্ট পরিচালিত হাওড়া জেলা পরিষদ প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকায় পার্কটি তৈরি করে। পরে আরও কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে পার্কটিতে বসার জায়গা, স্নানাগার, শৌচালয়, শিশুদের জন্য দোলনা-সহ মনোরঞ্জনের নানা জিনিসের ব্যবস্থা করা হয়। শীতের মরসুমে হাজার হাজার পর্যটক এখানে বেড়াতে আসেন। রয়েছে চড়ুইভাতির ব্যবস্থা। সম্প্রতি সেচ দফতর নতুন করে ৫৫ লক্ষ টাকা খরচ করে ওই পার্কের সেচবাংলোটি তৈরি করেছে। ফলে, এলাকাটি স্থানীয় বাসিন্দা তো বটেই, বাইরের লোকেদেরও নজর কাড়ে।

পার্কটি তৈরি হওয়ার পর থেকে মানকুর, বাকসি তো বটেই, আশপাশের গ্রামের বহু লোকও এখানে প্রতিদিন সকাল-বিকেলে ঘুরতে আসতেন। কিন্তু সেই সংখ্যাটা দিন দিন কমছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা বড় অংশেরই অভিযোগ, বিকেল থেকে পার্কে গাঁজার নেশা চলে। সন্ধ্যা নামলেই শুরু হয়ে যায় মদের আসর। চোলাই বিক্রেতারা ছোট ছোট পাউচে চোলাই নিয়ে এসে পার্কের এক পাশে বসে পড়ে। সেখান থেকে শুরু হয়ে যায় বেচাকেনা। প্রতিবাদ জানালে শুরু হয়ে যায় চোখরাঙানি। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় অনেকে অভব্য আচরণও করে। তাই অনেকেই আর পার্কের পথ মাড়ান না।

স্থানীয় এক প্রবীণ প্রবীর প্রামাণিক কয়েক মাস আগে পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেলে নিয়ম করে ওই পার্কে বেড়াতে যেতেন। এখন আর যান না। তাঁর কথায়, ‘‘ওখানে যা সব চলছে, তাতে সম্মান নিয়ে হাঁটাচলা যাবে না। তাই যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। আমরা চাই, প্রশাসন দ্রুত হস্তক্ষেপ করে পার্কে সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনুক।’’ আর এক প্রবীণ বলেন, ‘‘পার্কের পরিবেশ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কলেজের ছেলেমেয়েরা প্রকাশ্যে আপত্তিকর অবস্থায় বসে থাকে। শান্তিতে বেড়ানোর উপায় নেই।’’ একই বক্তব্য আরও অনেকেই।

জেলা পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, পার্কের পরিবেশ নষ্ট হওয়া নিয়ে লিখিত ভাবে কেউ কোনও অভিযোগ জানাননি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE