Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Durga Puja 2020

থিমের অহঙ্কার নয়, পুজোয় মানুষের পাশে হাওড়া

পুজোর বাজেট একে বারে ৫০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে বালিটিকুরি নেতাজি বালক সঙ্ঘ।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

দেবাশিস দাশ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২০ ০৪:০৭
Share: Save:

করোনার ধাক্কায় বিপর্যস্ত ‘শেফিল্ড’ হাওড়া। কাজের অভাবে অধিকাংশ কলকারখানাই ধুঁকছে। একেই অর্থনৈতিক মন্দা, তার উপরে আমপান আর অতিমারির যৌথ তাণ্ডবে পুজো আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে ছিল অধিকাংশ দুর্গাপুজো কমিটি। এরই মধ্যে রাজ্য সরকার অর্থ সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছে। তাতে পুজো কমিটি বা ক্লাবগুলি উৎসাহিত হলেও থিমের বৈচিত্রের দিকে বেশি না ঝুঁকে তারা চাইছে বাজেট কমিয়ে মানুষকে বাঁচানোর লক্ষ্যকেই পাখির চোখ করতে। আর সে জন্যই হাওড়া শহরে এ বার পুজো কিছুটা অন্য রকম।

পুজোর বাজেট একে বারে ৫০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে বালিটিকুরি নেতাজি বালক সঙ্ঘ। সেই টাকায় গত দু’মাস ধরে এলাকার দুঃস্থ মানুষদের এক বেলা করে খাবার খাইয়েছেন ক্লাবের সদস্যেরা। লকডাউনে যখন কেউই রাস্তায় বেরোচ্ছেন না, তখন হাওড়া শহরের যে অঞ্চল থেকে ডাক পেয়েছেন, সেখানেই গাড়িতে করে স্যানিটাইজ়ার স্প্রে করতে ছুটে গিয়েছেন ক্লাবের কর্মকর্তারা। ওই ক্লাবের সম্পাদক বিপ্লব ঘোষ বলেন, ‘‘গত ছ’ মাস ধরে যেখানেই অসহায় মানুষ কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন ছুটে গিয়েছি। পুজোর খরচ অর্ধেক করে দিয়ে সেই টাকায় একটা সংক্রামক ব্যাধির অ্যাম্বুল্যান্স কেনা হয়েছে। পুজোর থিমেও কোভিড সচেতনতা তুলে ধরে মানুষকে পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছি।’’

গত চার মাস ধরে মানুষের পাশে থাকার অঙ্গীকার নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন দাশনগর বালিটিকুরি এলাকার সজীব সঙ্ঘের সদস্যেরাও। ক্লাবের প্রধান উপদেষ্টা বিভাস হাজরা বলেন, ‘‘এলাকায় বহু দুঃস্থ মানুষ আছেন। গত আট সপ্তাহ ধরে তাঁদের জন্য খাদ্যদ্রব্য, স্যানিটাইজ়ার, মাস্ক দেওয়া হয়েছে। পুজোর খরচ ৬০ শতাংশ কমানো হয়েছে। এলাকার দুঃস্থ ৩০০ শিশুকে জামাকাপড় দেওয়া হচ্ছে। পুজোর থিমে করোনাবধকারী মহাশক্তিকে তুলে ধরা হয়েছে।’’

করোনার প্রকোপ হাওড়ায় শুরু হয়েছিল মূলত উত্তর হাওড়া দিয়ে। সেখানে লকডাউনের সময় থেকেই মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সমানে কাজ করে চলেছে সালকিয়া দুর্গোৎসব বারোয়ারি কমিটি। মালিপাঁচঘরা থানার পুলিশের সাহায্যে মানুষকে খাবার পৌঁছনো, হাসপাতালে ভর্তি করা থেকে স্যানিটাইজ়ার, মাস্ক, সবই দেওয়া হয়েছে। কমিটির সভাপতি শমিত ঘোষ বলেন, ‘‘আমাদের ১৪৮ বছরের পুজো। এ বার বাজেট কাটছাঁট করে এই অতিমারির সময়ে কী করে মানুষকে সাহায্য করা যায় সে দিকে লক্ষ রেখেছি।’’

করোনার সময়ে লকডাউনের জেরে সব থেকে বিপাকে পড়েছিলেন উত্তর হাওড়ায় বসবাসকারী শ্রমজীবী মানুষেরা। ওই এলাকায় করোনা যখন ছড়াচ্ছিল তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়েও রাস্তায় নেমেছিলেন তালতলা শক্তি মন্দিরের সদস্যেরা। পুলিশের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাস্তা ‘সিল’ করা থেকে অসহায় মানুষদের খাদ্যদ্রব্য বিতরণ করা, অ্যাম্বুল্যান্স না পাওয়া কোভিড রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছনো, সবই করেছেন নিঃশব্দে। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সেই ব্রত নিয়েই এ বার ক্লাবের ৮৭ বছরের পুজোয় তাই বাজেট গত বারের তুলনায় ৫০ শতাংশেরও বেশি কমানো হয়েছে। ক্লাবের কার্যকরী সম্পাদক সঞ্জয় দাস বলেন, ‘‘করোনার জেরে সমাজের প্রান্তিক সীমায় থাকা মানুষেরা আজ বিপদগ্রস্ত। তেমনই একটি সম্প্রদায় কুমোরেরা। তাঁদের তৈরি মাটির জিনিস দিয়ে পুজোর থিম করা হয়েছে। থাকছে কোভিড নীতি মেনে মানুষকে সচেতন করার সমস্ত ব্যবস্থাও।’’

বাজেট কাটছাঁট করে এ বার পুজোয় আমপান ও কোভিডে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন বেলগাছিয়ার ছাত্র মিলন সঙ্ঘের পুজো উদ্যোক্তারা। দক্ষিণ সিকিমের সাঁইবাবার মন্দিরের অনুকরণে মণ্ডপের প্রবেশ পথে করা হচ্ছে স্যানিটাইজ়ার টানেল। থাকছে ন্যাপস্যাক দিয়ে ম্যানুয়াল স্যানিটাইজ়ারের ব্যবস্থাও। সঙ্ঘের চেয়ারম্যান ভাস্কর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পুজোর বাজেট কমিয়ে ওই টাকায় কমিউনিটি কিচেন চালাবার পাশাপাশি আমরা ৩০০ বিপদগ্রস্ত মানুষকে জামাকাপড় দিচ্ছি। গোটা মণ্ডপ জুড়ে থাকছে ডেঙ্গি ও কোভিড নিয়ে সচেতনতার প্রচার।’’

কোভিড নিয়ে প্রচারের পাশাপাশি গত এক মাস ধরে কমিউনিটি কিচেন চালু করে কম টাকায় মানুষের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করেছে মধ্য বাবুডাঙা সর্বজনীন কমিটি। ওই কমিটির সম্পাদক বাপি মান্না বলেন, ‘‘এলাকার বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন। খেতে পাচ্ছেন না। তাই তাঁদের কম টাকায় খাবার-সহ খাদ্যদ্রব্য আমরা

দিচ্ছি। এই অতিমারির সময়ে কর্তব্যকেই জোর দিয়েছি পুজোর খরচ অর্ধেক করে দিয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2020 howrah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE