Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বন্‌ধে বোমা পড়ল স্কুলে

সেই বন্‌ধে রেল-সড়ক অবরোধ এবং বিক্ষিপ্ত অশান্তি তো হলই, দুই জেলার দু’টি স্কুলে ‘হামলা’রও অভিযোগ উঠল বিজেপির বিরুদ্ধে।হুগলির পান্ডুয়ার মুজিবর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ে বোমা পড়ল। তবে কেউ হতাহত হয়নি।

এই স্কুলেই বোমা পড়ে। নিজস্ব চিত্র।

এই স্কুলেই বোমা পড়ে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
চুঁচুড়া ও উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:১৯
Share: Save:

ইসলামপুর-কাণ্ডে বুধবার বন্‌ধ ডেকেছিল বিজেপি। সেই বন্‌ধে রেল-সড়ক অবরোধ এবং বিক্ষিপ্ত অশান্তি তো হলই, দুই জেলার দু’টি স্কুলে ‘হামলা’রও অভিযোগ উঠল বিজেপির বিরুদ্ধে।

হুগলির পান্ডুয়ার মুজিবর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ে বোমা পড়ল। তবে কেউ হতাহত হয়নি। উলুবেড়িয়ার কামিনা হাইস্কুলে আবার শিক্ষকদের ঢুকতে বাধা দেওয়া এবং গেটে তালা মেরে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রেও অভিযোগের তির বন্‌ধ সমর্থকদের দিকে। পুলিশের হস্তক্ষেপে শিক্ষকেরা স্কুলে ঢোকেন। পড়ুয়ারা অবশ্য আসেনি।

বিজেপি-র তরফে এ দিন স্কুলগুলিতে পঠনপাঠন বন্ধ রাখার আবেদন জানানো হয়েছিল। পান্ডুয়ার ওই স্কুলটি অবশ্য খোলা ছিল। শ’পাঁচেক পড়ুয়াও এসেছিল। বেলা সওয়া ১২টা নাগাদ তৃতীয় পিরিয়ড চলছিল। তখন স্কুলের শৌচাগারের পাশে বোমা পড়ে। বোমার শব্দে স্কুলে আতঙ্ক ছড়ায়। পুলিশ গিয়ে ঘিরে ফেলে স্কুল। স্কুল কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, বন্‌ধ সমর্থকরাই ওই ঘটনা ঘটিয়েছে। বিজেপি নেতৃত্ব অভিযোগ মানেননি। পুলিশ জানিয়েছে, বিস্ফোরণস্থল থেকে মাটির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে পরীক্ষার জন্য।

স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র নয়ন ঘোষের গলায় বিকেলেও আতঙ্ক, ‘‘ওই আওয়াজে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। এখনও কানে বাজছে।’’ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রদীপকুমার বাগ বলেন, ‘‘ক্লাস নিচ্ছিলাম। আচমকা প্রচণ্ড শব্দে চমকে উঠি। ধোঁয়ায় সব ঢেকে গেল।’’ স্কুল সভাপতি দুলাল ঘোষ বলেন, ‘‘আবেদন সত্ত্বেও স্কুল বন্ধ রাখিনি। সে কারণে বোমা ছোড়া হতে পারে। গোটা বিষয়টি থানায় লিখিত ভাবে জানিয়েছি।’’

অভিযোগ উড়িয়ে বিজেপির হুগলি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুবীর নাগের দাবি, ‘‘আমাদের কেউ ও কাজ করেননি। তৃণমূ‌লের গোষ্ঠীকোন্দলের জেরে ওই ঘটনা।’’ পক্ষান্তরে, পান্ডুয়ার তৃণমূল নেতা সঞ্জয় ঘোষ ব‌লেন, ‘‘বিজেপি স্কুলেও গুন্ডাগিরি করতে ছাড়ছে না। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে।’’ উলুবেড়িয়ার স্কুলের ঘটনাটি নিয়ে বিজেপির (গ্রামীণ) জেলা সভাপতি অনুপম মল্লিক বলেন, ‘‘ওই স্কুলে ঠিক কী হয়েছে, জানি না। স্কুলছাত্রের মৃত্যুর প্রতিবাদে বন্‌ধ বলে সব স্কুলকেই আমরা বন্ধ রাখতে অনুরোধ করেছিলাম।’’

বন্‌ধে মিশ্র প্রভার পড়ে দুই জেলায়। অফিস-কাছারি, স্কুল খোলা থাকলেও উপস্থিতি ছিল কম। অবরোধে মানুষের ভোগান্তি বাড়ে। অবরোধ তুলতে পুলিশের পাশাপাশি তৃণমূলের লোকজনকে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গিয়েছে। কোন্নগর, রিষড়া, বৈদ্যবাটী, চুঁচুড়া, পান্ডুয়া, ডানকুনি-সহ নানা জায়গায় রেল অবরোধে ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হয়। তবে অবরোধ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অজয় কুমার জানান, জোর করে বন্‌ধ করার চেষ্টা করায় ৬১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হুগলির গ্রামীণ পুলিশের আওতাধীন এলাকায় বন্‌ধের তেমন প্রভাব পাড়েনি। পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন বলেন, ‘‘মোট ৩২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’

রাস্তায় গাড়ি কম চলেছে। কয়েকটি রুটে বাসের দেখা কার্যত মেলেনি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক রুটের বাস উধাও হয়ে যায়। শিল্পাঞ্চলে বন্‌ধের তেমন প্রভাব পড়েনি। উত্তরপাড়ায় জিটি রোডে গাড়ি-চালকদের গোলাপ এবং মিষ্টি বিতরণ করেন যুব তৃণমূল কর্মীরা।

হাওড়ার গ্রামীণ এলাকায় অফিস, স্কুল-কলেজ, কারখানা খোলা থাকলেও দোকান-বাজার আংশিক বন্ধ ছিল। আমতা, শ্যামপুর, বাগনান, উলুবেড়িয়া, সাঁকরাইল‌— সর্বত্রই অটো, ছোট গাড়ি ছিল কম। শ্যামপুর এবং আমতায় বিভিন্ন রুটে বাস চলেনি। ফুলেশ্বর এবং আন্দুলে প্রায় আড়াই ঘণ্টা রেল অবরোধ হয়। সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ দুইল্যা স্টেশন রোডের কাছে আন্দুল রোড অবরোধ হয়। আন্দুল বাসস্ট্যান্ডে বন্‌ধ সমর্থনকারীরা গাড়ির টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করেন। উলুবেড়িয়ার খলিসানি, মনসাতলা, জোড়াকলতলা, বীরশিবপুর, মহিষরেখায় মুম্বই রোড অবরোধ করা হয়। খলিসানি এবং জোড়াকলতলায় পুলিশের গাড়ি, লরি, বাসে ভাঙচুর, বীরশিবপুরে একটি কারখানা বন্ধ করে দেওয়া ও বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে বন্‌ধ সমর্থনকারীদের বিরুদ্ধে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেয়। বাগনান-আমতা এবং উলুবেড়িয়া-আমতা রোডের বিভিন্ন এলাকাতেও অবরোধ হয়।

বন্‌ধ-এর প্রচারে উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগে পুলিশ মঙ্গলবার রাতে ৮৬ জন বিজেপি সমর্থককে গ্রেফতার করেছিল। বুধবার ৯১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁদের মধ্যে ১৫ জনকে ধরা হয়েছে গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে। বন্‌ধ ব্যর্থ বলে দাবি করে গ্রামীণ জেলা তৃণমূল সভাপতি পুলক রায় বলেন, ‘‘জনজীবন স্বাভাবিক ছিল। চোরাগোপ্তা ভাবে কিছু জায়গায় হামলা চালিয়ে বিজেপি তাদের উপস্থিতি প্রমাণ করতে চেয়েছে।’’ পক্ষান্তরে, বিজেপির গ্রামীণ জেলা সভাপতি অনুপম মল্লিকের দাবি, বন্‌ধ সর্বাত্মক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bandh Trouble Nuisance Inhuman Bomb
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE