Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

অঙ্গনওয়াড়ির বিদ্যুৎ বিল দেবেন মায়েরা

বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ইতিমধ্যে আবেদনও জমা পড়েছে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থায়। বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে বেশি দেরি হবে না বলেই আশা প্রকাশ করেছেন ব্লকের শিশু বিকাশ প্রকল্প আধিকারিক (সিডিপিও) তথাগত নাগ।

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৭ ১২:৪৫
Share: Save:

কষ্টের দিন শেষ হতে চলেছে তুলসীবেড়িয়ার একরত্তিদের। যারা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে যায়।

ফি-বছর গরমের দিনগুলিতে দুধের শিশুগুলি ওই সব কেন্দ্রে গিয়ে ঘেমে-নেয়ে একসা হয়। সেই কষ্ট লাঘব করতে এগিয়ে এলেন মায়েরাই। পাখা চালানোর জন্য বিদ্যুতের বিল তাঁরাই চাঁদা তুলে মেটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে পড়ানো এবং পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয়। কোনও কেন্দ্র সকালে চলে, কোনওটা দুপুরে। যে সব কেন্দ্রের নিজস্ব জমি রয়েছে, সেখানে সরকার ভবন বানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু কোনও কেন্দ্রেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার আইনি সংস্থান নেই। রাজ্যের সর্বত্রই এ ভাবে চলছে কেন্দ্রগুলি।

কিন্তু আর কিছুদিনের মধ্যেই ব্যতিক্রম হতে চলেছে উলুবেড়িয়া-২ ব্লকের তুলসীবেড়িয়া পঞ্চায়েতের ৩১টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। কারণ, সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ আসতে চলেছে। ফলে, লাগানো হবে পাখাও। বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ইতিমধ্যে আবেদনও জমা পড়েছে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থায়। বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে বেশি দেরি হবে না বলেই আশা প্রকাশ করেছেন ব্লকের শিশু বিকাশ প্রকল্প আধিকারিক (সিডিপিও) তথাগত নাগ। তিনি বলেন, ‘‘তুলসীবেড়িয়ায় ৩১টি কেন্দ্রেই মায়েরা বিদ্যুতের বিল মেটাতে চাঁদা দেবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। উদ্যোগটি সফল হলে রাজ্যে তা মডেল হতে পারে।’’

মায়েরা এই বেনজির সিদ্ধান্ত নিলেন কী ভাবে?

এর পিছনে রয়েছে স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। একটি শিল্পসংস্থা তাদের ‘কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি’ তহবিল থেকে তুলসীবেড়িয়ার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে বিদ্যুৎ সংযোগের প্রাথমিক খরচ এবং দু’টি করে পাখা কিনে দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে কয়েক মাস আগে।

মাসে মাসে বিদ্যুতের বিল কী ভাবে মেটানো হবে তা নিয়ে কোনও দিশা দেখতে না পেয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি সিডিপিও-র সঙ্গে যোগাযোগ করে। কিন্তু সেখান থেকেও নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়। তার পরেই সংস্থাটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের শিশুদের মায়েদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করে।

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির কর্ণধার মন্টু শী বলেন, ‘‘সিডিপিও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে বিদ্যুৎ বাবদ টাকা খরচের আইনি সংস্থান না থাকার কথা জানানোর পরেই আমরা মায়েদের সঙ্গে আলোচনা করি। পাখা লাগানো হলে চাঁদা দিয়ে মাসিক বিদ্যুৎ বিল মেটাতে রাজি থাকার কথা জানিয়ে দেন মায়েরা।’’ প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পরেই মন্টুবাবুরা সিডিপিও-র কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে শিল্পসংস্থার আর্থিক সহায়তায় ৩১টি কেন্দ্রে বিদ্যুৎ সংযোগ আনা এবং পাখা কেনার ব্যবস্থা করে ফেলেন।

কামিনা দক্ষিণ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি একটি ‘শিশু আলয়’। অর্থাৎ, মডেল কেন্দ্র। সুন্দর ভবনে শিশুদের খেলার সরঞ্জাম রয়েছে। শিশুদের নিয়মিত ওজন নেওয়া হয়। কিন্তু এখানেও পাখার ব্যবস্থা নেই। মায়েরা নিজেরাই বিদ্যুতের বিল মেটাতে রাজি হওয়ায় ওই কেন্দ্রের কর্মী শ্রাবণী পোল্যে বলেন, ‘‘আলো-পাখা এলে এই কেন্দ্রে সমস্যা থাকবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE