উদ্যোগ: ফেরিঘাটের কর্মীদের তৈরি লঞ্চ। নিজস্ব চিত্র
কর্মীদের উদ্যোগ হালে পানি পেল।
কোন্নগর-পানিহাটি ফেরিঘাটে কর্মীদের তৈরি লঞ্চের উদ্বোধন হল রবিবার। জলযানটির নাম দেওয়া হয়েছে— ‘আমাদের সৃষ্টি’।
বছর খানেক আগে ভদ্রেশ্বরের তেলেনিপাড়ায় অস্থায়ী জেটি ভেঙে অন্তত ২৪ জন মারা যান। এর পরেই রাজ্যের বিভিন্ন ঘাটের পরিকাঠামো ঢেলে সাজাতে উদ্যোগী হয় রাজ্য সরকার। হুগলির কোন্নগর থেকে উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটির মাঝে ফেরিঘাটের কর্মীরা অবশ্য তার ঢের আগেই যাত্রী-সুরক্ষা ব্যবস্থা নিতে শুরু করেন। বছর দু’য়েক আগে তাঁরা লঞ্চ তৈরির কাজ হাতে দেন। ঘাটকর্মীদের দাবি, নিজেদের বেতন বাদ দিয়ে লাভের বাড়তি অঙ্ক বাঁচিয়েই এই কাজ করেছেন তাঁরা। খরচ হয়েছে ৪৭ লক্ষ টাকা। কোন্নগর পুরসভা সাহায্য করেছে।
কিন্তু হঠাৎ কেন এমন ভাবনা?
কয়েক বছর আগে রাজ্য সরকার এই ফেরিঘাটে একটি লঞ্চ দেন। গঙ্গাসাগর মেলার জন্য কিছু দিনের জন্য সেটি তুলে নেওয়া হয়েছিল। ভুটভুটি একেবারে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনাও ছিল। তখন একটি লঞ্চের প্রয়োজনীয়তা বোধ সকলেই। সেই ভাবনা থেকেই এই উদ্যোগ। লঞ্চটিতে একশো যাত্রী উঠতে পারবেন। যাত্রী ও কর্মীদের জন্য পৃথক শৌচাগার রয়েছে। কর্মীদের কেবিনও আছে। মাস কয়েক আগে রাজ্য সরকারের তরফে একটি ভেসেলও দেওয়া হয়েছে এই ফেরিঘাটে।
রবিবার সকালে কোন্নগর ফেরিঘাটে লঞ্চটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন স্থানীয় বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল। ছিলেন কোন্নগরের পুরপ্রধান বাপ্পাদিত্য চট্টোপাধ্যায়-সহ অন্যরা। তাঁদের বক্তব্য, ফেরিঘাটের কর্মীরা দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন। পুরপ্রধানের কথায়, ‘‘কয়েক বছর আগে ঘাটের কর্মীরা বেতন বা অন্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন। আর এখন নিজেরাই আস্ত একটা লঞ্চ তৈরি করে ফেললেন। এ জন্য কোনও প্রশংসাই ওঁদের যথেষ্ট নয়।’’
ঘাটকর্মী অনিন্দ্য খাঁড়া বলেন, ‘‘গত দু’বছরের ঘাটের লভ্যাংশ দিয়েই লঞ্চটি তৈরি হল। রাজ্য সরকারের কাছে এটি চলাচলের আবেদন করা হবে। আশা করছি, ছাড়পত্র পেতে সমস্যা হবে না।’’
এর আগে এই ফেরিঘাট পরিচালনার দায়িত্বে ছিল একটি সমবায়। কিন্তু ঘাট পরিচালনা নিয়ে বিস্তর গোলমাল শুরু হয়। তার পরে কর্মীরাই ঘাট পরিচালনার দায়িত্ব নেন। পরিকাঠামো ঢেলে সাজা শুরু হয়। ফেরিঘাট ‘নো স্মোকিং জোন’ করা হয়। সিসি ক্যামেরা বসানো হয়। ঘাটকর্মীদের ‘ইউনিফর্ম’ রয়েছে। প্রতিবন্ধী এবং বয়স্ক যাত্রীদের জন্য রয়েছে হুইলচেয়ার। পুরসভার তরফে পানীয় জলের ব্যবস্থা, সুলভ শৌচাগার তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।
এ বার ঘাটকর্মীদের প্রচেষ্টায় জলে নামল নতুন লঞ্চ। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন যাত্রীরা। তবে এর মধ্যেও ছন্দ কাটল। এ দিনও যাত্রীরা পারাপার লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy