Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
শ্রীরামপুর মডেল স্টেশনের হাল

যাত্রী নয়, হকারদেরই প্ল্যাটফর্ম

প্ল্যাটফর্মে ট্রেন ঢুকতেই স্টেশনে যাত্রীদের হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে গেল। কোনওরকমে ভিড় ঠেলে কামরার দিকে এগোতে গিয়েই হাঁটুতে প্রচণ্ড যন্ত্রণা টের পেলেন বছর পঞ্চাশের সাবিত্রী পাল। ভিড়ের চোটে আর পিছনের যাত্রীদের ধাক্কায় খেয়াল করেননি স্টেশনে পেতে রাখা হকারের ডালা।

স্টেশনের মুখ ঢেকেছে হকারে। অসহায় যাত্রীরা। ছবি: দীপঙ্কর দে।

স্টেশনের মুখ ঢেকেছে হকারে। অসহায় যাত্রীরা। ছবি: দীপঙ্কর দে।

প্রকাশ পাল
শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৬ ০১:৩৫
Share: Save:

প্ল্যাটফর্মে ট্রেন ঢুকতেই স্টেশনে যাত্রীদের হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে গেল। কোনওরকমে ভিড় ঠেলে কামরার দিকে এগোতে গিয়েই হাঁটুতে প্রচণ্ড যন্ত্রণা টের পেলেন বছর পঞ্চাশের সাবিত্রী পাল। ভিড়ের চোটে আর পিছনের যাত্রীদের ধাক্কায় খেয়াল করেননি স্টেশনে পেতে রাখা হকারের ডালা। তারই একটা কোণ সজোরে লেগেছে হাঁটুতে। ব্যাথার চোটে ট্রেন আর ধরতে পারেননি সাবিত্রি দেবী। সেদিন আর অফিসে যাওয়া হয়নি।

কোনও খণ্ডচিত্র নয়। পান থেকে চায়ের দোকান, নানা জিনিসের পসরায় প্রায় ঢাকা পড়ে যাওয়া শ্রীরামপুর স্টেশন চত্বর জুড়ে হকারদের দাপটে নিত্যযাত্রীদের ভোগান্তির এই ছবি রোজকার। শুধু সব্জি বাজারই নেই, তা ছাড়া গোটা স্টেশন জুড়ে ‘আলপিন টু এলিফ্যান্ট’ হাজির সবই।

যাত্রীদের অসুবিধা নিয়ে থোড়াই কেয়ার রেলের জায়গা দখল করে বসা হকারদের! শুধু শ্রীরামপুর নয়, উত্তরপাড়া, হিন্দমোটর, কোন্নগর সবর্ত্রই এক ছবি। ফলে বছরের পর বছর যাত্রী- ভোগান্তির ছবিও এক।

হুগলির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মহকুমা শহর। পুলিশ-প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দফতর থেকে আদালত, একাধিক স্কুল-কলেজ রয়েছে শহরে। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ নানা প্রয়োজনে শহরে আসেন। এখানকার বহু মা‌নুষ পেশার তাগিদে কলকাতা বা অন্যত্র যাতায়াত করেন। কিন্তু প্রতিদিন স্টেশন থেকে ট্রেন ধরতে তাঁদের কার্যত কালঘাম ছুটে যায়। কারণ, স্টেশন চত্বর জুড়ে বেআইনি ভাবে গজিয়ে ওঠা দোকান। অথচ রেলের খাতায় শ্রীরামপুর ‘মডেল স্টেশন’। স্টেশনের পরিকাঠামো এবং যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের ‘মডেল’ দেখে নিত্যযাত্রীরা তিতিবিরক্ত। পাশাপাশি প্রতিনয়ত দুর্ঘটনার আশঙ্কায় ভোগেন তাঁরা।

স্টেশনে ঢুকলেই চোখে পড়বে হরেক কিসিমের দোকান। গরমাগরম ঘুগনি, চা-বিস্কুট, ঝালমুড়ি থেকে ঠাণ্ডা জল বা লেবুর সরবত, ছাতা, ঘড়ি, সানগ্লাস, টর্চ, ঘর সংসারের টুকিটাকি—কি নেই! মিলবে এগরোলের দোকানও। চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের গা ঘেঁষেই রয়েছে মাছ বাজার। ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত সেখানে মাছ বিক্রেতাদের ভিড় লেগে থাকে। সব মিলিয়ে, ট্রেনে উঠতে রীতিমতো জাঁতাকলে পড়তে হয় যাত্রীদের। সন্ধ্যাবেলাতেও একই ছবি। বছর কয়েক আগে মাছ বাজারে উচ্ছেদ অভিযান চা‌লানো হয় রেলের তরফে। ক’দিন পরেই যে কে সেই!

নিত্যযাত্রী তথা শ্রীরামপুরের বাসিন্দা সুকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘একে তো প্ল্যাটফর্মের এই দশা, তার উপর স্টেশনের রাস্তা এত অপরিসর হয়ে গিয়েছে যে অফিস টাইমে হাঁটাই যায় না। ট্রেন ধরার তাড়া থাকলে মহা বিপদ হয়। রেল, পুরসভা সবাই মিলে এই সমস্যার সমাধান করুক।’’ আর এক নিত্যযাত্রী দেবাশিস চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘মডেল স্টেশনেরই এই হাল, তা হলে অন্যগুলোর কি অবস্থা তা বোঝাই যায়।’’

স্থানীয় নির্দল কাউন্সিলার নিতাই গুহ বলেন, ‘‘স্টেশনের রাস্তায় যাতে সুষ্ঠুভাবে চলাফেরা করা যায়, সে জন্য ব্যবস্থা নিতে পুরসভায় আলোচনা হয়েছে। রেলের তরফেও বৈঠক হয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকেই উদ্যোগী হতে হবে।’’ ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সন্তোষ সিংহের বক্তব্য, ‘‘হকার-সমস্যা সমাধানে প্রথমে রেলকেই প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে।’’ পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন‌, ‘‘বিভিন্ন স্টেশনেই হকার-সমস্যা রয়েছে। আগে অনেক বার হকার তুলতে গিয়ে রেলের কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন। তবে হকারদের জন্য যাত্রীদের সমস্যা হবে, এটা চলতে দেওয়া যাবে না। আলোচনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’

সূত্রের খবর, মাস কয়েক আগে স্টেশন চত্বরে হকার-সমস্যা নিয়ে বৈঠক হয়। প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার রাস্তার ধার থেকে হকারদের সরিয়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনাও করা হয়। কিন্তু কাজের কাজ আর হয়নি। সমস্যা কবে মেটে, এখন তারই অপেক্ষা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hawker Passenger Train
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE