Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Forest Department

পোষমানা পাখিকে বন দফতরের হাতে দিয়ে মনখারাপ চাষির

উলুবেড়িয়া জগৎপুরের বাসিন্দা গৌতমবাবু জানান, আমপানের ঝড়ে আহত হয়েছিল পাখিটি।

পাখি হাতে গৌতম দাস। —নিজস্ব িচত্র

পাখি হাতে গৌতম দাস। —নিজস্ব িচত্র

সুব্রত জানা
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২০ ০৭:১৩
Share: Save:

আমপানের তাণ্ডবে বিপন্ন এক পরিযায়ী পাখি মুখ থুবড়ে পড়েছিল খোলা মাঠে। রক্তাক্ত হয়েছিল দু’টি ডানা। ঘরে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করে তাকে সুস্থ তোলেন এক চাষি। অনেকটা হাঁসের মতো দেখতে কমন পোচার্ড প্রজাতির পাখিটিকে সোমবার বন দফতরের হাতে তুলে দিলেন তার উদ্ধারকর্তা গৌতম দাস।

উলুবেড়িয়া জগৎপুরের বাসিন্দা গৌতমবাবু জানান, আমপানের ঝড়ে আহত হয়েছিল পাখিটি। মাঠের মধ্যে পড়ে ছটফট করছিল। ডানা দিয়ে রক্ত ঝরছিল। মাঠ থেকে তাকে ঘরে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ইচ্ছা ছিল, সুস্থ করে উড়িয়ে দেবেন। কিন্তু তা হয়নি। মায়া পড়ে গিয়েছিল পাখিটির উপরে। কিন্তু সমস্যা তৈরি হয় অন্য যায়গায়। ওই চাষির কথায়, ‘‘অনেকেই পাখিটি চড়া দামে কিনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিক্রি করতে চাইনি। আশঙ্কা ছিল, পাখিটিকে মেরে ওর মাংস বিক্রি করবে ওরা।’’ কিন্তু এ ভাবে কতদিন রক্ষা করা যাবে ওকে, প্রশ্নটা উঁকি মারছিল মনে। তাই গৌতমবাবু সিদ্ধান্ত নেন, কষ্ট হলেও তিনি পাখিটিকে বন দফতরের হাতে তুলে দেবেন। এ দিন সেই কাজ সম্পন্ন করে আশ্বস্ত হয়েছেন তিনি। তবে মনটা ভাল নেই ওই চাষির। ‘‘একটা মায়া পড়ে গিয়েছিল,’’ বললেন তিনি।

‘‘পাখিটা মাঠের মধ্যে থাকলে অন্য কোনও জন্তুতে মেরে ফেলত। তাই ওকে বাড়ি এনেছিলাম। ভেবেছিলাম কিছুটা সুস্থ করে পরিবেশে ছেড়ে দেবে। তার পরে ও আমার সঙ্গী হয়ে উঠেছিল,’’ বলছেন গৌতমবাবু।

চিকিৎসার পরে যখন পাখিটি মোটামুটি সুস্থ, তখন তাকে সেই মাঠে ছেড়ে দিয়ে আসবেন বলে ঠিক করেছিলেন গৌতম। তাঁর কথায়, ‘‘ভেবেছিলাম পাখিটা ছেড়ে দিলে উড়ে যাবে। প্রতিদিন যখন চাষ করতে যেতাম, সঙ্গে করে নিয়ে যেতাম ওকে। তারপর জমিতে ছেড়ে দিতাম। কিন্তু ও কিছুতেই যেতে চাইত না। দিনের শেষে ওকে নিয়েই বাড়ি ফিরতাম। বাড়ির মধ্যেই ঘোরাঘুরি করত। মাঝেমধ্যে পুকুরে গিয়ে খাবার সংগ্রহ করে আবার ফিরে আসত।’’

অনেকেই গৌতমবাবুর বাড়ি আসতেন পাখিটিকে দেখতে। অনেকে তাকে কিনতে চডা দাম দিতেও প্রস্তুত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘পাখিটা কেউ কিনে তার মাংস খাবে, এটা চাই না। তাই পাখিটা বিক্রি করিনি।’’ তখনই পাখিটিকে বন দফতরের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন গৌতমবাবু। সেই ইচ্ছার কথা তিনি জানিয়েছিলেন বন্ধুবান্ধবদের। সেই খবর পেয়ে বন দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন স্থানীয় শিক্ষক অজয় দাস।

এ দিন বন দফতরের হাতে পাখিটিকে তুলে দেওয়া হয়। গৌতমবাবুর স্ত্রী বাসন্তীদেবী বলেন, ‘‘অনেক চেষ্টায় সুস্থ করেছিলাম ওকে। সব সময় ঘরের মধ্যে ঘোরাঘুরি করত। ডাকলে কাছে আসত। এখন চলে যেতে মনটা খারাপ লাগছে।’’

পক্ষীপ্রেমী চিকিৎসক মৃত্যুঞ্জয় খাঁড়া বলেন, ‘‘ওই পাখিরা শীতের সময়ে পূর্ব ইউরোপ থেকে এখানে আসে। শীতের শেষে ফিরে যায়।’’ উলুবেড়িয়া বন দফতরের রেঞ্জ আধিকারিক সুকুমার সরকার বলেন, ‘‘গড়চুমুক প্রাণিস্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে

নিয়ে যাব ওকে। কিছুদিন চিকিৎসার পরে পরিবেশে ছেড়ে দেওয়া হবে।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘এক সময় কিছু লোক এই পাখিগুলি ধরে তাদের

মাংস চড়া দামে বিক্রি করত। আমরা নিয়মিত প্রচার চালিয়ে মানুষকে সচেতন করতে পেরেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Forest Department Cyclone Amphan Bird
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE