Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
দাবি মৃত সুমন্ত ঘোষের পরিজনদের

আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত ঋণশোধের দুর্ভাবনাতেই

বছর একত্রিশের সুমন্তের অস্বাভাবিক মৃত্যুর জেরে বলাগড়ের পেঁয়াজ চাষিদের দুরবস্থার বিষয়টি সামনে এসেছে। শনিবার সকালে সুমন্তদের বাড়ি যান হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী প্রদীপ সাহা।

পাশে: সুমন্তর বাড়িতে প্রশাসনের কর্তারা। ছবি: সুশান্ত সরকার

পাশে: সুমন্তর বাড়িতে প্রশাসনের কর্তারা। ছবি: সুশান্ত সরকার

নিজস্ব সংবাদদাতা
বলাগড় শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৯ ০৩:০৩
Share: Save:

প্রশাসনের কর্তারা বলছেন, পেঁয়াজ তোলার সময় নিয়ে পরিবারে মতানৈক্যের জেরে বলাগড়ের গৌরনই গ্রামের চাষি সুমন্ত ঘোষ আত্মঘাতী হয়ে থাকতে পারেন। মৃতের পরিজনরা অবশ্য তা নস্যাৎ করে দাবি করলেন, বৃষ্টিতে ফলন নষ্ট হওয়ায় চাষের জন্য নেওয়া ঋণ শোধ করতে পারবেন কি না তা নিয়ে দুর্ভাবনায় পড়েছিলেন সুমন্ত। তার জেরেই ওই ঘটনা।

বছর একত্রিশের সুমন্তের অস্বাভাবিক মৃত্যুর জেরে বলাগড়ের পেঁয়াজ চাষিদের দুরবস্থার বিষয়টি সামনে এসেছে। শনিবার সকালে সুমন্তদের বাড়ি যান হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী প্রদীপ সাহা। সুমন্তের বাবা মথুরবাবু তাঁকে বলেন, চাষ করতে মহাজনের কাছ থেকে মোটা সুদে ঋণ নিয়েছিল ছেলে। ফলন ভাল হলেও বৃষ্টিতে নষ্ট হওয়ায় পেঁয়াজের বাজার নেই। ফলে, পেঁয়াজ বেচে মহাজনের টাকা শোধ করা যাবে না ভেবে ছেলে মনমরা হয়ে পড়েছিলেন। সেই কারণেই আগাছা মারার ওষুধ খান।

ভোট মিটলে বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করা হবে বলে প্রদীপবাবু তাঁকে আশ্বাস দেন। সংবাদমাধ্যমকে প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের উচিত ছিল ভোট ঘোষণার আগেই প্রান্তিক চাষিদের কথা ভাবা।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

মথুরবাবু জানান, তাঁর এক ছেলে, চার মেয়ে। মেয়েরা বিবাহিত। মাস খানেকের মধ্যে সুমন্তের বিয়ে দেওয়ার তোড়জোড় চলছিল। সে জন্য বাড়ি রং করা হয়। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘ছেলে প্রায় দু’লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিল। ওই টাকা শোধের ভাবনাতেই মুষড়ে পড়েছিল। জানি না সরকার কি সাহায্য করবে!’’ তাঁর ক্ষোভ, পঞ্চায়েত থেকে ছেলের দাহের খরচ বাবদ সমব্যাথি প্রকল্পের দু’হাজার টাকা পাননি। পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছেন, ওই টাকা পরিবারটিকে দেওয়া হবে।

শুধু গৌরনই নয়, আশপাশের প্রতাপপুর, টোনা, হামজামপুর, বড়াল, পাণিখোলা গ্রামের পর গ্রামের পেঁয়াজ চাষিদেরও মাথায় হাত। তাঁদের বক্তব্য, কিলোপ্রতি মাত্র দু’টাকা দরে পেঁয়াজ বিকোচ্ছে। ফলে তাঁদের লোকসান হচ্ছে। তাঁরা চাইছেন, চাষিদের বাঁচাতে প্রয়োজনে সরকারি উদ্যোগে পেঁয়াজ কেনার ব্যবস্থা করা হোক।

উদ্যানপালন দফতর সূত্রের খবর, ফলন ওঠার মুখেই টানা বৃষ্টিতে মাঠেই পেঁয়াজ পচে গিয়েছে। কয়েক কোটি টাকার পেঁয়াজের ক্ষতি হয়েছে। সেই হিসেব রাজ্যে পাঠানো হয়েছে।

সুমন্তের জেঠতুতো দাদা প্রশান্ত ঘোষ জানান, আশপাশের প্রায় চারশো বিঘা জমিতে মিনি ডিপ-টিউবওয়েলের মাধ্যমে খেতে জ‌ল দেওয়া হত। কিন্তু বছর চারেক ধরে এলাকার মিনি ডিপ-টিউবওয়েলটি বিকল হয়ে পড়ে আছে। পঞ্চায়েত তা সারাচ্ছে না। জলের অভাবে অন্য চাষ বন্ধ। কম জল লাগে বলে শুধু পেঁয়াজ চাষ করা হয়।

সমস্যার কথা মেনে পঞ্চায়েতের স্থানীয় সদস্য বীরেন ঘোষ বলেন, ‘‘মিনি ডিপ-টিউওয়েলটা সারাতে পঞ্চায়েতে বলেছি।’’ উপপ্রধান অরিজিৎ দাস বলেন, ‘‘ওটা সারিয়ে লাভ হবে না। নতুন কল বসাতে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ। ফলে একটু সময় লাগবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Farmer Suicide Debt
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE