Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

আলুর দাম না পেয়ে আত্মঘাতী

শুক্রবার সকালে ঘরের সিলিং ফ্যান থেকে গলায় মাফলারের ফাঁস লাগানো অবস্থায় আরামবাগের মজফ্ফরপুর গ্রামের গোলোকবিহারী উলাল (৪৯) নামে ওই চাষির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

কান্না: ভেঙে পড়েছে আত্মঘাতী চাষির পরিবার। ছবি: মোহন দাস

কান্না: ভেঙে পড়েছে আত্মঘাতী চাষির পরিবার। ছবি: মোহন দাস

পীযূষ নন্দী
আরামবাগ শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৫৮
Share: Save:

আলুর দাম মিলছে না বলে কিছুদিন ধরেই অভিযোগ তুলছিলেন চাষিরা। এ বার আরামবাগের এক সম্পন্ন আলুচাষির আত্মহত্যায় ফের সেই অভিযোগ সামনে এল।

শুক্রবার সকালে ঘরের সিলিং ফ্যান থেকে গলায় মাফলারের ফাঁস লাগানো অবস্থায় আরামবাগের মজফ্ফরপুর গ্রামের গোলোকবিহারী উলাল (৪৯) নামে ওই চাষির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁর পরিবারের দাবি, বৃষ্টিতে ধান নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আলুর অভাবী বিক্রি এবং ঋণের ধাক্কা সামলাতে না-পারাতেই আত্মঘাতী হন গোলোকবাবু। তাঁর আত্মহত্যার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আরামবাগের বিডিও বিশাখ ভট্টাচার্য। এলাকাটি হরিণখোলা-১ পঞ্চায়েতের অন্তর্গত। ওই পঞ্চায়েতের সদস্য প্রণতি ঘোষ জানান, ওই ব্যক্তি আলু চাষ করতে গিয়ে ঋণের দায়ে আত্মহত্যা করেছেন। বিষয়টি ব্লক প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।

গোলোকবাবু সম্পন্ন চাষি। তাঁর ৩৫ বিঘা জমি রয়েছে। অনেকটা এলাকা নিয়ে দোতলা পাকা বাড়ি। গোয়ালে আটটি গরু, দু’টি ধানের গোলা। চাষের জন্য হ্যান্ড-ট্রাক্টর রয়েছে। সেচের জন্য খেতে মিনি ডিপটিউবওয়েল বসিয়েছেন। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। দুই ছেলে এমএসসি পাশ করে কলকাতায় বিএড পড়ছেন।

এই অবস্থায় গোলোকবাবুর আত্মঘাতী হওয়া নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়ে যায় চাষি মহলে। তবে, ওই এলাকার চাষিরা জানিয়েছেন, আলু চাষে বিঘাপিছু খরচ প্রায় ২০ হাজার টাকা। আলু হয়েছে গড়ে ৯০ থেকে ১০০ বস্তা। বস্তাপিছু ২৫০ টাকার উপর দাম থাকলে তবেই লাভ হয়। কিন্তু এ বারে দাম না-থাকায় ৮০-৯০ টাকায় বস্তা বিক্রি হয়েছে মাসখানেক আগেও। দাম আরও কমবে ভেবে তখনই আলু বিক্রি করে দেন গোলকবাবু। ফলে, গোলকবিহারীবাবু বিঘাপিছু দাম পেয়েছেন ৮ হাজার টাকার মতো। বিঘাপিছু তাঁর লোকসান হয়েছে ১২ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে লোকসান প্রায় ৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা।

গোলোকবাবুর বড় ছেলে তারকনাথ বলেন, “আলুর দাম নেই। বৃষ্টিতে ধান নষ্ট হয়েছে। বাবার প্রায় ৫ লক্ষ টাকা দেনা ছিল। মানসম্মান নষ্টের আশঙ্কায় বাবা মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন। জমি বিক্রিতেও তাঁর সম্মানে লাগছিল। শেষ পর্যন্ত নিজেকেই শেষ করে দিলেন।’’ গোলোকবাবুর শ্যালক বিদ্যুৎ ঘোষ বলেন, “জামাইবাবু মান-সম্মান নিয়ে খুব স্পর্শকাতর ছিলেন। চাষের জন্য সমবায়ের ঋণের এক লক্ষ টাকা ব্যক্তিগত ঋণ নিয়ে শোধ করেছেন।’’

ওই পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, চাষে ক্ষতির কারণে কিছুদিন ধরে অবসাদে ভুগছিলেন গোলোকবাবু। সেই কারণে আলু চাষ শুরুর সময়ে তাঁকে মাঠে যেতে দেওয়া হয়নি। তাঁর চিকিৎসাও চলছিল। এ দিন সকালে শ্রমিকেরা এসে জমিতে নতুন করে চাষের জন্য আলুবীজ কেনা নিয়ে আলোচনা করেন। শ্রমিকেরা চলে যেতে নিজের দোতলার ঘরে গিয়ে গোলোকবাবু আত্মঘাতী হন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Farmer Suicide Potato
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE