Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বৃষ্টি ও বন্যায় মাছ চাষে ক্ষতি ১২৯ কোটি

সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টি ও বন্যায় রাজ্যের অন্যান্য জেলার মতো হাওড়াতেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাছ চাষ। পুকুর প্লাবিত হওয়ায় বড় মাছ যেমন বেরিয়ে গিয়েছে, তেমনই ডিমপোনা, ধানিপোনা, চারাপোনার উৎপাদক পুকুরও ভেসে গিয়েছে।

মনিরুল ইসলাম
হাওড়া শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৫ ০২:০৮
Share: Save:

সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টি ও বন্যায় রাজ্যের অন্যান্য জেলার মতো হাওড়াতেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাছ চাষ। পুকুর প্লাবিত হওয়ায় বড় মাছ যেমন বেরিয়ে গিয়েছে, তেমনই ডিমপোনা, ধানিপোনা, চারাপোনার উৎপাদক পুকুরও ভেসে গিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হ্যাচারিও (যেখানে মাছেদের প্রজনন ঘটানো হয়)। ফলে, নতুন করে চারাপোনা তৈরি করে পুকুরে ছেড়ে মাছ চাষিরা যে চাষ করবেন, সেখানেও সমস্যা তৈরি হয়েছে। অবস্থা ফেরাতে বেশ কয়েক মাস লেগে যাবে বলে মনে করছেন মৎস্য দফতরের আধিকারিকেরা। ফলে, মাথায় হাত পড়েছে চাষিদের।

জেলা মৎস্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়ায় মোট ৫ হাজার ৪১ হেক্টর জলাশয় প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া, চাষিদের মাছ চাষের সরঞ্জামও নষ্ট হয়েছে। মাছ চাষে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৪ হাজার ৭০০ টন। যার আর্থিক মূল্য ১২৯ কোটি টাকা বলে ওই দফতরের কর্তাদের দাবি। ক্ষতিগ্রস্ত মাছচাষির সংখ্যা প্রায় ৪৬ হাজার ৬০০ জন। মৎস্য চাষ সম্প্রসারণ আধিকারিকদের সংগঠন, ‘পশ্চিমবঙ্গ প্রফেশনাল ফিশারিজ গ্র্যাজুয়েট অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি নারায়ণ বাগ জানান, এই অবস্থায় রাজ্য সরকারকে মাছচাষিদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি যথাযথ ভাবে দেখার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বৃষ্টি-বন্যায় রাজ্যে মাছ চাষে ক্ষতির কথা মেনে নিয়ে মৎস্য দফতরের অধিকর্তা মালবিকা ঝাঁ বলেন, ‘‘আমরা কেন্দ্রের কাছে ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট পাঠিয়েছি। কেন্দ্রের কাছে মাছচাষিদের নতুন করে ঋণ দেওয়ার ব্যাপারেও আবেদন জানানো হয়েছে। ব্যাঙ্কগুলিও যাতে ঋণ দিতে উদ্যোগী হয়, তারও আবেদন জানানো হয়েছে। আমরাও বিভিন্ন হ্যাচারি থেকে দ্রুত ডিমপোনা উৎপাদন করে চাষিদের মধ্যে বিতরণ করা যায় কি না দেখছি।’’

মৎস্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়া, হুগলি-সহ রাজ্যের ১২টি জেলার মাছ চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে বৃষ্টি-বন্যায় রাজ্যে প্রায় ৯২ হাজার ৪৫৬ হেক্টর জলাশয় প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মাছচাষির সংখ্যা প্রায় ৬ লক্ষ। কিন্তু কেন্দ্রীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের নিয়ম অনুযায়ী হেক্টরপিছু ৮২০০ টাকা ক্ষতি ধরে মাত্র ৮১ কোটি টাকা ক্ষতির হিসাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই টাকায় কতটা ক্ষতিপূরণ দেওয়া যাবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন মৎস্য দফতরের আধিকারিকেরা। কারণ, ক্ষতির পরিমাণ এর থেকে অনেক বেশি।

ফি-বছর এপ্রিল মাস থেকে চাষিরা মাছের ডিমপোনা উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করেন। ডিমপোনা থেকে ধানিপোনা, চারাপোনা হয়ে মাছেদের সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম ওজন হতে সময় লাগে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস। কিন্তু এ বার জুলাই-অগস্টেই পুকুর ভেসে যাওয়ায় প্রচুর ছোট মাছ বেরিয়ে গিয়েছে।

উলুবেড়িয়ার মাছচাষি দিলীপ দত্তের ১৫০ বিঘা পুকুর পুরোপুরি প্লাবিত হয়ে গিয়েছে। তাঁর দাবি, ক্ষতির পরিমাণ ৩০ লক্ষ টাকারও বেশি। বাগনানের আন্টিলার মাছ চাষি বিশ্বনাথ সামন্তও ১৫০ বিঘা পুকুরে মাছ চাষ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘সব পুকুরই ডুবে গিয়েছিল। জল কমলেও এখনও তা মাছ চাষের উপযোগী হয়নি। বুঝতে পারছি না কী করব! প্রায় ৭ লক্ষ টাকার ক্ষতি হল।।’’ একই রকম হা-হুতাশ শোনা গিয়েছে হুগলির রাজবলহাটের মাছচাষি গণপতি রায় বা বর্ধমানের সাঁওতা এলাকার মাছচাষি লোকনাথ কোঙারের গলাতেও। বিশেষ করে যাঁরা ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করেছিলেন, তাঁরা আরও সমস্যায় পড়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Farmers poor drainage system howrah hooghly
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE