Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

জনপ্রিয়তাই কাল হল, বলছেন মনোজের বাবা

ছেলের প্রসঙ্গ তুলতেই কয়েক মূহূর্ত চুপ করে থাকেন বৃদ্ধ চন্দ্রশেখর উপাধ্যায়। তার পরে স্বগতোক্তির মতো বলে ওঠেন, ‘‘আর ওই সব কথা বলতে ভাল লাগে না। কষ্ট হয়।’’

কাতর: মনোজ উপাধ্যায়ের বাবা। নিজস্ব চিত্র

কাতর: মনোজ উপাধ্যায়ের বাবা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ভদ্রেশ্বর শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:৩৬
Share: Save:

ছেলের প্রসঙ্গ তুলতেই কয়েক মূহূর্ত চুপ করে থাকেন বৃদ্ধ চন্দ্রশেখর উপাধ্যায়। তার পরে স্বগতোক্তির মতো বলে ওঠেন, ‘‘আর ওই সব কথা বলতে ভাল লাগে না। কষ্ট হয়।’’

২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর রাতে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন হুগলির ভদ্রেশ্বরের তৎকালীন পুরপ্রধান, তৃণমূলের মনোজ উপাধ্যায়। বছর আটষট্টির চন্দ্রশেখর তাঁরই বাবা। দিন কয়েক আগে নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের খুনের ঘটনা যেন একই সরলরেখায় এনে ফেলেছে দুই পরিবারকে!

ক্ষণিকের নীরবতা ভেঙে সেই প্রসঙ্গই টেনে আনেন মনোজের বাবা। বলেন, ‘‘আমার ছেলে জনপ্রিয় ছিল। পুরপ্রধান হিসেবে ভদ্রেশ্বরের সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে দিয়েছিল। নদিয়ার বিধায়কও আমার ছেলেরই বয়সী। ওঁকেও সবাই ভালবাসত। ওঁর পরিবারের অবস্থাও নিশ্চয়ই আমাদেরই মতো। মা-বাবা, স্ত্রী, ছোট ছেলেটা— কেমন আছে বুঝতে পারছি।’’ এর পরেই নিজের বুকে হাত দিয়ে বৃদ্ধ বলেন, ‘‘ছেলের খুনিরা হয়তো সাজা পাবে। কিন্তু ওদের যাবজ্জীবন হোক বা ফাঁসি, আমার বুকের জ্বালাটা কমবে না। ছেলেকেই যে ফিরে পাব না!’’

মনোজের মৃত্যুর তিন মাসের মাথায় মা পার্বতীদেবী মারা যান। দাদা অনিলের কথায়, ‘‘ভাইয়ের শোকেই মা চলে গেল।’’ কথা কেড়ে চন্দ্রশেখর বলেন, ‘‘মনোজ রাতে না ফেরা পর্যন্ত পার্বতী জেগে থাকত।’’ মনোজের মৃত্যুর পর থেকেই সাদা বাড়িটা কেমন যেন ম্রিয়মান ঠেকে পড়শিদের কাছেও।

শুক্রবার কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎবাবু বাড়ির কাছেই সরস্বতী পুজোর উদ্বোধনে গিয়ে খুন হন। পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে তাঁকে গুলি করে আততায়ী। মনোজও খুন হয়েছিলেন‌ বাড়ির অদূরে গেটবাজার এলাকায় জিটি রোডের ধারে, স্থানীয় ক্লাব থেকে ফেরার সময়। খুব কাছ থেকে গুলি করে তাঁকে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা।

প্রথমে ঘটনার তদন্ত শুরু করে ভদ্রেশ্বর থানার পুলিশ। পরে সিআইডি তদন্তভার হাতে নেয়। মূল অভিযুক্ত, ভদ্রেশ্বর পুরসভারই নির্দল কাউন্সিলর রাজু সাউ-সহ ১২ জন গ্রেফতার হয়। ঘটনার ৯০ দিনের মধ্যে চন্দননগর আদালতে চার্জশিট জমা দেয় সিআইডি। বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। এখনও পর্যন্ত ছ’জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। মাস চারেক আগে ধৃতদের অন্যতম মুন্না রায় মারা যায়। বাকিদের ‘কাস্টডি ট্রায়াল’ (অভিযুক্তদের জেলা হাজতে রেখে সাক্ষ্যগ্রহণ) চলছে।

তৃণমূলের একটি সূত্রের বক্তব্য, কাউন্সিলর রাজুর সঙ্গে রাজনৈতিক শত্রুতা ছিল মনোজের। ধৃত বাকিদের সঙ্গেও মনোজের পরিচয় ছিল। কারও কারও সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাও ছিল। কিন্তু পরে তাতে চিড় ধরে। রাজু তাদের একত্রিত করে মনোজকে খুনের ছক কষে। ধৃত সকলেরই বাড়ি মনোজের বাড়ির কাছাকাছি। অনিল বলেন, ‘‘পুরসভায় দুর্নীতি রোধে কঠোর অবস্থান নেওয়ায় ভাই কারও কারও চক্ষুশূল হয়েছিল। দোষীদের চরম সাজা হোক।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘বিধায়ক সত্যজিৎবাবুর খুনিরাও চরম শাস্তি পাক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Manoj Upadhaya Bhadreswar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE