Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ষাঁড়ের হামলায় অতিষ্ঠ শৈবতীর্থ তারকেশ্বর

পথঘাটে ঘুরে বেড়ানোর মাঝে হঠাৎ বিগড়ে যাচ্ছে তার মতিগতি। শিং বাগিয়ে তেড়ে যাওয়াই শুধু নয়, পথচলতি অনেককেই গুঁতো পর্যন্ত মারছে সে। তার আক্রমণে দুই গ্রামবাসী মারা গিয়েছেন। ষাঁড়টিকে অন্য জায়গায় ছেড়ে আসার দাবিতে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন সাধারণ মানুষ। তবে কী ভাবে ষাঁড়ে সামলানো হবে— প্রশাসন, পুরসভা, পঞ্চায়েত কারও কাছেই কোনও সদুত্তর নেই।

ত্রাস: এই ষাঁড় নিয়ে আতঙ্ক তারকেশ্বরে। নিজস্ব চিত্র

ত্রাস: এই ষাঁড় নিয়ে আতঙ্ক তারকেশ্বরে। নিজস্ব চিত্র

দীপঙ্কর দে
তারকেশ্বর শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৪২
Share: Save:

কৃষ্ণবর্ণ ষাঁড়ের দাপটে ত্রস্ত শৈবতীর্থ!

পথঘাটে ঘুরে বেড়ানোর মাঝে হঠাৎ বিগড়ে যাচ্ছে তার মতিগতি। শিং বাগিয়ে তেড়ে যাওয়াই শুধু নয়, পথচলতি অনেককেই গুঁতো পর্যন্ত মারছে সে। তার আক্রমণে দুই গ্রামবাসী মারা গিয়েছেন। ষাঁড়টিকে অন্য জায়গায় ছেড়ে আসার দাবিতে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন সাধারণ মানুষ। তবে কী ভাবে ষাঁড়ে সামলানো হবে— প্রশাসন, পুরসভা, পঞ্চায়েত কারও কাছেই কোনও সদুত্তর নেই।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, তারকেশ্বর মন্দির চত্বর, বাসস্ট্যান্ড, সংলগ্ন সন্তোষপুর, রামনগর-সহ বিভিন্ন এলাকায় ষাঁড়টি ঘোরাফেরা করে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মাসখানেক ধরে তার আচরণে বদল আসে। মাঝেমধ্যেই সে খেপে যাচ্ছে। গত রবিবার ভোরে পূর্ব রামনগর পঞ্চায়েতের কলাইকুণ্ডু গ্রামের অশোক মান্নাকে (৬০) ষাড়টি গুঁতিয়ে দেয়। ভোরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে অশোকবাবু দেখেন, ষাঁড়টি দরজার সামনে শুয়ে রয়েছে। তিনি ষাঁড়টিকে তাড়ানোর চেষ্টা করেন। তখনই ষাঁড়টি পিছন থেকে তাঁকে আক্রমণ করে। তাতে বৃদ্ধের মেরুদণ্ড ভাঙে, চোট লাগে মাথায়। তাঁকে তারকেশ্বর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে কলকাতার পার্ক সার্কাসের একটি নার্সিংহোমে স্থানান্তরিত করা হয়। বৃহস্পতিবার সেখানে তিনি মারা যান।

দিন পনেরো আগে সন্তোষপুর পঞ্চায়েতের ভীমপুর গ্রামের বাসিন্দা গীতারানি সামন্তও ষাঁড়টির গুঁতোয় জখম হন। গ্রামবাসীদের দাবি, ভোরে ষাঁড়টি বছর পঞ্চান্নর ওই মহিলার পেটে শিং ঢুকিয়ে দিয়েছিল। কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে তিনি মারা যান।

কলাইকুণ্ডু গ্রামের বাসিন্দা মনোরঞ্জন হাতি বলেন, ‘‘ভয়ে ভয়ে থাকতে হচ্ছে। ষাঁড়টিকে দেখলেই সবাই পালাচ্ছে। প্রশাসন এবং বন দফতর ব্যবস্থা করুক। এমন জায়গায় পাঠানো হোক, যাতে সেও শান্তিতে এবং আরামে থাকতে পারে আর আমাদেরও রেহাই মেলে।’’ ওই দাবিতে গ্রামবাসীদের তরফে পঞ্চায়েত, পুরসভা, থানা, বিডিও দফতর, বন দফতর সর্বত্রই লিখিত আবেদন জানানো হয়েছে।

ব্লক প্রশাসন বা পুরসভার আধিকারিকরা জানান, তাঁদের ষাঁড় ধরার পরিকাঠামো নেই। বিডিও জয়গোপাল পালের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এটা পুরসভার দায়িত্ব। পুরসভা এবং বন‌ দফতরের সঙ্গে কথা বলব।’’ পুরপ্রধান স্বপন সামন্ত বলেন, ‘‘সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ষাঁড় ধরার দায়িত্ব পুরসভার, এটা কোথাও লেখা নেই।’’

মাস কয়েক আগে একটি ষাঁড়ের দাপটে এমনই অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন শ্রীরামপুরবাসী। অনেকেই তার আক্রমণে জখম হন। শেষে প্রশাসনের মধ্যস্থতায় দমকলকর্মীরা ষাঁড়টিকে ধরেন। ঘুমপাড়ানি ইঞ্জেকশন দিয়ে তাকে পাঠানো হয় লিলুয়ার একটি সংস্থায়।

তারকেশ্বরের ষাঁড়টিরও এমন কোনও গতি হোক, চাইছেন স্থানীয়রা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bull Tarakeswar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE