প্রতীকী ছবি।
ডেঙ্গিকে মহামারি ঘোষণার পরের বছর কিছুটা স্বস্তিতে ছিলেন শ্রীরামপুরবাসী। কিন্তু আবার ফিরে এল সেই আতঙ্ক।
শ্রীরামপুরের চার্চ লেনের বাসিন্দা তুষারকান্তি ঘোষের এ বার পুজোয় ষষ্ঠীর দিন জ্বর আসে। টানা দশমী পর্যন্ত ছিল। বিপদ আঁচ করে তিনি চিকিৎসকের কাছে যান। রক্ত পরীক্ষায় মেলে ডেঙ্গির জীবাণুও। চিকিৎসায় এখন তিনি কিছুটা সুস্থ। শুধু তুষারবাবু নন, অভিজিৎ চৌধুরী, শিবশঙ্কর ঘোষের মতো শ্রীরামপুরের কয়েকজন বাসিন্দাও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত।
বছর দুয়েক আগে শ্রীরামপুর পুর এলাকায় মারাত্মক ভাবে ডেঙ্গি ছড়িয়ে ছিল। অন্তত চার জন মারা গিয়েছিলেন। রাজ্য সরকার সেই সময় শ্রীরামপুরে ডেঙ্গিকে ‘মহামারি’ ঘোষণা করে। তারপরে অবশ্য পুর কর্তৃপক্ষ ডেঙ্গি রোধে কোমর বেঁধে নামেন। সদর্থক কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, পুর বাসিন্দাদের ‘হেল্থ কার্ড’। পুর এলাকার প্রতিটি পরিবারের জন্য আলাদা ওই কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়। পুরকর্মীরা বিভিন্ন দলে এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যের খোঁজ নেওয়া শুরু করেন। জ্বরে আক্রান্তদের চিকিৎসকের কাছে পাঠানো। তাঁর রক্ত পরীক্ষা করানো হয়। পুরকর্মীদের হাতের তালুতে মজুত ছিল সব তথ্য। এই দাওয়াইয়ে ফলও মিলেছিল। ডেঙ্গিকে কব্জায় আনা গিয়েছিল। গতবার এ শহরে ডেঙ্গি সে ভাবে থাবা বসাতে পারেনি।
এ বারও বছরের গোড়া থেকে পুরসভাগুলিকে ডেঙ্গি প্রতিরোধে মাঠে নামার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শ্রীরামপুর পুরসভা যথারীতি কাজ শুরুও করেও। তবু উৎসবের মরসুমে হানা দিয়েছে ডেঙ্গি! প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি পুরসভার কাজে কোনও শিথিলতা দেখা দিয়েছে? ডেঙ্গির কথা অস্বীকার করেননি পুরপ্রধন অমিয় মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমরা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। কেন ফের ডেঙ্গি হল, তার কারণ জানাটা জরুরি। বাড়ি বাড়ি ডেঙ্গির তথ্য সংগ্রহে কর্মীরা নিয়মিত কাজ করছেন।’’
শ্রীরামপুর মহকুমা হাসপাতালে বর্তমানে বেশ কয়েকজন জ্বরের রোগী ভর্তি রয়েছেন। কিছু রোগীর রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। পুরসভার একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের ৭, ১৫, ১৭ নম্বর-সহ কয়েকটি ওয়ার্ডে ডেঙ্গির হদিস মিলেছে।
শহরের চিকিৎসক প্রদীপকুমার দাস বলেন, ‘‘গত দু’তিন সপ্তাহে আমি যত জ্বরের রোগী পেয়েছি, তার মধ্যে অন্তত সাত জনের রক্তে ডেঙ্গি ধরা পড়েছে।’’ টি কে চট্টোপাধ্যায় নামে শহরের আর এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘আমিও ডেঙ্গির রোগী পেয়েছি। তার সঙ্গে ম্যালেরিয়া, টাইফয়েডের রোগীও পাচ্ছি।’’
পরিস্থিতি মোকাবিলায় চিকিৎসকেরা পুরসভাকে কয়েকটি পন্থা বাতলেছেন। তার মধ্যে রয়েছে—বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা করে জ্বরের খবর সংগ্রহ করা। জ্বরে আক্রান্তদের প্রয়োজন অনুয়ায়ী ডেঙ্গি নির্ণয়ের ব্যবস্থা করে চিকিৎসা করা। রোগীদের নিয়ে অযথা আতঙ্ক যাতে না-ছড়ায় তা নিশ্চিত করা। চিকিৎসকদের কথা জনপ্রতিনিধিদের গুরুত্ব দিয়ে শোনা। এলাকা পরিষ্কার রাখতে সচেতনতা বাড়ানো এবং ডেঙ্গির মশা চরিত্র বদলাচ্ছে কিনা, সে ব্যাপারে পতঙ্গবিদদের দিয়ে গবেষণা চালানো।
পুর কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy