জ্বর, গায়ে ব্যথা, খাবারে অরুচি, বমি ভাবের মতো উপসর্গ নিয়ে সম্প্রতি চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন শ্রীরামপুরের নেতাজি সুভাষ অ্যাভিনিউ-র কলেজ ছাত্রী অঙ্কিতা সেন। রক্ত পরীক্ষায় ধরা পড়ে ডেঙ্গি। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কয়েক বোতল প্লেটলেট নেওয়ার পরে তিনি এখন সুস্থ।
ম্যালেরিয়ার উপসর্গ নিয়ে ইতিমধ্যে শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছেন ২৫ জন। পান্ডুয়ার ওষুধ বিক্রেতা সুবীর মুহুরি জানিয়েছেন, প্রতি দিন অনেকে সর্দি, কাশি, মাথাব্যথা বা জ্বরের ওষুধ কিনতে আসছেন।
দিন পনেরো ধরে জ্বর, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড থাবা বসিয়েছে আরামবাগ-সহ হুগলি জেলার নানা প্রান্তে। এর মধ্যে শ্রীরামপুর এবং উত্তরপাড়ায় দেখা দিয়েছে ডেঙ্গির প্রকোপ। চিকিৎসকদের চেম্বারে ভিড় বাড়ছে। রক্ত পরীক্ষার লাইন দীর্ঘ হচ্ছে রক্ত পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিতে। সরকারি হাসপাতাল এবং গ্রামীণ এলাকাগুলির স্বাস্থ্যকেন্দ্রেরও একই চিত্র। রোগী সামলাতে হিমসিম খাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
চিকিৎসকেরা অবশ্য জানাচ্ছেন, বছরের এই সময়ে আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে জ্বর হয়। বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ে। এ বারও তার অন্যথা হয়নি। চিকিৎসা করা হচ্ছে। প্রয়োজনে রক্ত পরীক্ষা করানো হচ্ছে। কিন্তু জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে চিন্তায় রেখেছে ডেঙ্গি।
শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালের সুপার কমলকিশোর সিংহ জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে কয়েক জনের রক্তে ডেঙ্গির নমুনা পাওয়া গিয়েছে। শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত দু’সপ্তাহে জ্বরের উপসর্গ থাকা অনেকেরই রক্ত পরীক্ষা করানো হয়। ২২ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়া গিয়েছে। শহরের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘সন্ধ্যা ছ’টায় চেম্বারে বসছি। রাত সাড়ে ৯টা-১০টা পর্যন্ত জ্বরের রোগীর বিরাম নেই।’’
এই পরিস্থিতিতে কী করছে স্বাস্থ্য দফতর? দিন কয়েক আগে হুগলির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতর থেকে এক প্রতিনিধি দল শ্রীরামপুরে আসে। তারা জলাশয় থেকে মশার লার্ভা নিয়ে পরীক্ষা করে দেখেন। কিন্তু সচেতনতার জন্য স্বাস্থ্য দফতর বা পুরসভা সে ভাবে উদ্যোগী হয়নি বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষের। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শ্রীরামপুর এবং উত্তরপাড়া থেকে ডেঙ্গির খবর পাচ্ছি। দুই পুরসভার সঙ্গে সমন্বয়ে স্বাস্থ্য দফতর কাজ শুরু করেছে। ওয়ালশ হাসপাতালে ‘ফিভার ক্লিনিক’ খোলা হয়েছে।’’
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ডেঙ্গির জীবাণু বহনকারী এডিস ইজিপ্টাই মশা পরিষ্কার জমা জলে বংশবৃদ্ধি করে। ফলে জল যাতে না জমে, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। শ্রীরামপুরের চিকিৎসক প্রদীপ দাস বলেন, ‘‘আতঙ্কিত হওয়ার মতো কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। কিন্তু দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে শহরের অন্যত্রও মশাবাহিত রোগ ছড়াবে। পুরসভা, আইএমএ বা নাগরিক সমিতির তরফে সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেওয়া যেতে পারে।’’ শ্রীরামপুর শহরের বাসিন্দাদের অনেকেই মনে করেছেন, কামান দেগে মশা নিধন করলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে। কিন্তু সেটাই এখনও পুরসভার তরফে করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। শ্রীরামপুরের উপ-পুরপ্রধান উত্তম নাগ অবশ্য দাবি করেছেন, ডেঙ্গি প্রতিরোধের লক্ষ্যে পুরসভার তরফে অভিযান চালানো হচ্ছে। প্রচার চলছে। নর্দমায় তেল ছড়ানো হচ্ছে। সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। তবেই পুরোপুরি প্রতিরোধ করা যাবে।
জেলার অন্যত্র যাঁরা জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের চার-পাঁচ দিনের আগে জ্বর কমছে না। আক্রান্তেরা দুর্বল হয়ে পড়ছেন। চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতাল বা চন্দননগর মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছেন, ওই দুই জায়গায় এখনও কারও রক্তের নমুনায় ডেঙ্গির জীবাণু ধরা পড়েনি। তবে, জ্বর হলেই তাঁরা চিকিৎসকদের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আরামবাগ মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক সিদ্ধার্থ দত্ত জানিয়েছেন, জ্বর নিয়ে সতর্ক থাকতে মহকুমা জুড়ে রক্তের নমুনা সংগ্রহের কাজ চলছে। বিভিন্ন পঞ্চায়েতের সহযোগিতায় এডিস ইজিপ্টাই প্রজাতির মশার প্রজননের উৎসগুলো চিহ্নিত করতে প্রচারও চালানো হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy