Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
ফের শিল্পাঞ্চলের অগ্নি-সুরক্ষা বিধি মানা নিয়ে প্রশ্ন

রবার কারখানায় আগুন ডানকুনিতে

শনিবার সকালে ডানকুনির জগন্নাথপুরে একটি রবার কারখানায় আগুন লাগে।

তৎপর: আগুন নেভাতে ব্যস্ত দমকলকর্মীরা। শনিবার ডানকুনিতে। ছবি: দীপঙ্কর দে

তৎপর: আগুন নেভাতে ব্যস্ত দমকলকর্মীরা। শনিবার ডানকুনিতে। ছবি: দীপঙ্কর দে

নিজস্ব সংবাদদাতা
ডানকুনি শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৯ ০১:৪১
Share: Save:

ফের একটি কারখানায় আগুন। ফের ডানকুনি শিল্পাঞ্চলের অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠল।

শনিবার সকালে ডানকুনির জগন্নাথপুরে একটি রবার কারখানায় আগুন লাগে। কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় দমকল আগুন নেভায়। দমকল আধিকারিকেরা জানান, কারখানায় কোনও অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থাই ছিল না। কয়েক মাস আগে এই শিল্পাঞ্চলেরই রঘুনাথপুরের একটি ছাতা কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে এক শ্রমিক মারা গিয়েছিলেন। জখম হন কয়েকজন। কিন্তু তারপরেও শিল্পাঞ্চলের কারখানাগুলিতে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা যে যথাযথ গড়ে ওঠেনি, এ দিনের ঘটনা তারই প্রমাণ বলে স্থানীয়দের দাবি। তাঁদের ক্ষোভ, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে কিছুদিন হইচই হয়। কিন্তু তারপরে আর প্রশাসনের নজর থাকে না। তবে, এ দিনের ঘটনার পরে শিল্পাঞ্চলের হাল-হকিকত জানতে দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু দফতরের আধিকারিকদের ডেকে পাঠিয়েছেন বলে দমকল সূত্রের খবর।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, জগন্নাথপুরে দিল্লি রোডের ধারে কয়েক কাঠা জমি ভাড়া নিয়ে রবার কারখানাটি চালু হয় বছর খানেক আগে। এখানে ভূগর্ভস্থ তেলের পাইপের পুরনো রবারের ভিতরের লোহা, পিতল বের করে বাজারে বিক্রি করা হয়। ডানকুনি, উত্তরপাড়া, শ্রীরামপুর-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে দমকলের ১০টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে আসে। পুলিশও পৌঁছয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দুপুর হয়ে যায়।

কারখানার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা সন্তোষ জয়সওয়ালের দাবি, ‘‘ভিতরে রান্না হচ্ছিল। তা থেকেই আগুন লাগে। দু’টো ট্রে‌লার-সহ অনেক সামগ্রী পুড়ে গিয়েছে।’’ তবে, কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। দমকলের আধিকারিকরা জানান, প্রথম দিকে জলের সমস্যা হয়েছিল। পুলিশের মধ্যস্থতায় একজনকে রাজি করিয়ে তাঁর পুকুর থেকে জল নেওয়া হয়। স্থানীয়দের দাবি, কারখানায় শুধু রবারই নয়, বেশ কিছু অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারও মজুত ছিল। সেগুলি ফেটে যাওয়ায় আগু‌ন আরও ছড়ায়।

দমকল বিভাগের শ্রীরামপুরের ডিভিশনাল ফায়ার অফিসার সনৎকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘কী ভাবে আগুন লেগেছে, তা তদন্তসাপেক্ষ। এখানে আগুন নেভানোর কোনও ব্যবস্থাই ছিল না।’’ সংশ্লিষ্ট রিষড়া পঞ্চায়েতের স্থানীয় সদস্য মৃত্যুঞ্জয় মেটের দাবি, পঞ্চায়েতের অনুমতি ছাড়াই ওই কারখানা চলছিল।

স্থানীয়দের দাবি, শুধু ওই কারখানা নয়, অগ্নি-সুরক্ষা বিধির তোয়াক্কা না-করে শিল্পাঞ্চলের বহু কারখানা চলছে। অনেক কারখানার দমকলের ছাড়পত্রও নেই। দমকল অফিসাররা জানান, অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ জানতে চাইলে সহায়তা করা হয়। বিধি অনুযায়ী কারখানা বা ব্যবসাস্থলে গিয়ে ‘ফায়ার অডিট’ (অগ্নি নির্বাপণের যথাযথ ব্যবস্থা বা কারখানার নিজস্ব ‘ইনবিল্ট সিস্টেম’ রয়েছে কিনা দেখা) করে নোটিস দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। পুরনো কল-কারখানায় অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা যথাযথ না-থাকলেও নোটিস দেওয়া হয়। দমকল অফিসার সনৎবাবু বলেন,‘‘আমরা গত কয়েক মাসে ৫০-৬০টি নোটিস পাঠিয়েছি বিভিন্ন সংস্থাকে। মাসে নিয়মমাফিক দু’টি কারখানায় ফায়ার-অডিট করা হয়। তবে, আগুন রুখতে কারখানা কর্তৃপক্ষকে অনেক বেশি সচেতন এবং সতর্ক হতে হবে।’’

কিন্তু দমকলের সতর্কবার্তার পরেও ক’টি কারখানায় বিধি মানা হচ্ছে, সে প্রশ্ন থাকছেই। স্থানীয় এক প্রৌঢ়ের প্রশ্ন, ‘‘বিনা অনুমতিতে কী করে বিপজ্জনক ভাবে এই ধরনের কারখানা চলে?’’ রবার পোড়ানোয় জগন্নাথপুরের ওই কারখানার বিরুদ্ধে পরিবেশ দূষণের অভিযোগও রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fire Dankuni Fire Brigade
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE