Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Containment Zone

মাছ-আনাজ অমিল ‘গণ্ডিবদ্ধ’ হুগলিতে

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ভ্যানে পাঠানো হবে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু আনাজ বা মাছ— কিছুই আসেনি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রকাশ পাল
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২০ ০৫:১৭
Share: Save:

লকডাউনের আওতায় থাকা গণ্ডিবদ্ধ এলাকার বাসিন্দাদের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল প্রশাসন। অভিযোগ, অনেক এলাকাতেই তা
বাস্তবায়িত হয়নি।

শুক্রবার সকাল থেকে আনাজের ভ্যানের অপেক্ষায় রাস্তার দিকে চেয়েছিলেন বৈদ্যবাটীর রামমোহন সরণির বাসিন্দা স্বপনকুমার বেরা। কিন্তু দিনভর তার দেখা মেলেনি। শ্রীরামপুর পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গোয়ালাপাড়া লেনের দীপেন ঘোষের অভিজ্ঞতাও একই।

শ্রীরামপুরে গণ্ডিবদ্ধ এলাকা বৃহস্পতিবার গার্ডরেল দিয়ে রাস্তা আটকে দেওয়া হয়। শুক্রবার ওই পাড়া ছিল সুনসান। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ভ্যানে পাঠানো হবে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু আনাজ বা মাছ— কিছুই আসেনি। পুলিশ-প্রশাসনের দেখা মেলেনি। দীপেন ঘোষ নামে এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘যেটুকু মজুত ছিল, তাতে আজ চলে গিয়েছে। কাল চলবে না। বাড়িতে অসুস্থ মা। তাঁর ওষুধ কিনতে হবে। কাকে বলব? কে পৌঁছে দেবে?’’ স্থানীয় বিদায়ী কাউন্সিলর তথা ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটর নিতাই গুহ বলেন, ‘‘এসডিও বলেছেন, ভ্যানে জিনিসপত্র পাঠানো হবে। ভেন্ডারদের তালিকা হচ্ছে।’’

বৈদ্যবাটীর রামমোহন সরণি বৃহস্পতিবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, ওই রাস্তার ধারে কোনও বাড়িতেই করোনা আক্রান্ত কোনও রোগী নেই। তাই এই রাস্তা বন্ধ করা চলবে না। তাঁদের দাবি মেনে বৃহস্পতিবার রাতেই রাস্তা থেকে ব্যারিকেড সরিয়ে নেওয়া হয়। লকডাউন-এর আওতায় থাকা এলাকাও কমিয়ে দেওয়া হয়। শুক্রবার দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, এলাকা ফাঁকা। দুই প্রান্তে দুই সিভিক ভলান্টিয়ার রয়েছেন। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘এখানে এক জনের করোনা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তিনি বৃহস্পতিবার হাসপাতাল থেকে ফিরে এসেছেন। কেন এখানে লকডাউন হল, বুঝলাম না।’’ আর এক বাসিন্দা স্বপন বেরা বলেন, ‘‘বাজারের কিছু জিনিস দরকার ছিল। কিন্তু ভ্যান তো এলই না। কাল না-এলে বাধ্য হয়ে বেরোতে হবে।’’

ভ্যানের জন্য অপেক্ষা না-করে বাজারে বেরিয়েছিলেন উত্তরপাড়ার লরেন্স স্টিট, জেকে স্ট্রিট, নিউ স্টেশন রোড, ভদ্রকালী এনসি সাহা স্ট্রিটের অনেক বাসিন্দা। চন্দননগরের ছবিটাও মোটের উপরে একই। যদু ঘোষ লেনের বাসিন্দা সোমাশ্রী পাল বলেন, ‘‘বেসরকারি সংস্থায় কাজ করি। না-গেলে কাজ থাকবে না। তখন প্রশাসন বাঁচাবে?’’ চন্দননগর স্ট্র্যান্ডে লোকজনের আনাগোনা চোখে পড়ে। অনেকের মুখেই মাস্ক ছিল না।

গণ্ডিবদ্ধ এলাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী না-পাঠানোর যে অভিযোগ উঠেছে তা নিয়ে চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীরের বক্তব্য, ‘‘মানুষ কিছু রসদ সংগ্রহ করে রেখেছেন। তবে কেউ কিছু পৌঁছে দেওয়ার আবেদন করলে পৌঁছে দেওয়া হবে। তবে এই বিষয়ে কোনও আবেদন বা অভিযোগ পাইনি।’’ চন্দননগর পুরসভার কমিশনার স্বপন কুণ্ডু বলেন, ‘‘নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। পুরসভায় ফোন করে দরকারের কথা জানালেই হবে।’’

নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী গ্রামীণ এলাকাতেও সর্বত্র পৌঁছয়নি বলে অভিযোগ। সিঙ্গুর ব্লকের মির্জাপুর-বাঁকিপুর পঞ্চায়েতের জগৎনগরের বাসিন্দা বাপি চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কেউ খোঁজ নেয়নি। বন্ধুকে দিয়ে মুড়ি আনিয়েছি।’’ যদিও জেলার (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার তথাগত বসুর দাবি, ‘‘পঞ্চায়েতের সঙ্গে কথা বলে যেখানে প্রয়োজন, সেখানে খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।’’

তথ্য সহায়তা: তাপস ঘোষ, দীপঙ্কর দে ও কেদারনাথ ঘোষ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Containment Zone Hooghly Covid 19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE