Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

প্লাবিত বাংলাকে নৌকা দিচ্ছে বলাগড়

বলাগড়ের নৌকা-শিল্পের নাম দেশজোড়া। এক সময়ে এখানে ঘরে ঘরে ছিলেন নৌ-শিল্পী। শুধু এ রাজ্যেই নয়, এখানকার নৌকা পাড়ি দিত উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ডের মতো ভিন্ রাজ্যেও। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী শিল্পটি দীর্ঘদিন ধরেই সঙ্কটে রয়েছে। নৌকা তৈরির কাঠ সে ভাবে না-মেলা, কাঁচামালের অভাব, বরাত কমে যাওয়া, সরকারি সাহায্য না-পাওয়া— এমনই নানা কারণে গ্রামবাসীরা অনেকেই অন্য পেশা খুঁজে নিচ্ছেন।

তৈরি: প্রস্তুত হচ্ছে নৌকা। ছবি: সুশান্ত সরকার

তৈরি: প্রস্তুত হচ্ছে নৌকা। ছবি: সুশান্ত সরকার

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
বলাগড় শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৭ ০৯:০০
Share: Save:

ডিভিসি-র ছাড়া জলে ভাসছে দক্ষিণবঙ্গের অনেক এলাকা। সেই জল বলাগড়ে না ঢুকলেও ঘুম উড়েছে ওই এলাকার।

বলাগড়ের বাসিন্দাদের নাওয়া-খাওয়া শিকেয় উঠেছে হঠাৎ চলে আসা প্রচুর নৌকার বরাতে! কী ভাবে সামাল দেবেন, তা ভেবেই তাঁদের হিমসিম অবস্থা!

বলাগড়ের নৌকা-শিল্পের নাম দেশজোড়া। এক সময়ে এখানে ঘরে ঘরে ছিলেন নৌ-শিল্পী। শুধু এ রাজ্যেই নয়, এখানকার নৌকা পাড়ি দিত উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ডের মতো ভিন্ রাজ্যেও। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী শিল্পটি দীর্ঘদিন ধরেই সঙ্কটে রয়েছে। নৌকা তৈরির কাঠ সে ভাবে না-মেলা, কাঁচামালের অভাব, বরাত কমে যাওয়া, সরকারি সাহায্য না-পাওয়া— এমনই নানা কারণে গ্রামবাসীরা অনেকেই অন্য পেশা খুঁজে নিচ্ছেন। কেউ দিনমজুরি, কেউ বা চাষের কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন।

কিন্তু বন্যার মতো বিপর্যয়ে ফের নৌকার মন্দা বাজার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে বলাগড়ে। হুগলির আরামবাগ, খানাকুলের মতো হাওড়ার আমতা, উদয়নারায়ণপুর বা মেদিনীপুর, বর্ধমানের মতো প্লাবিত জেলাগুলির মানুষও এখন ভিড় জমাচ্ছেন এ তল্লাটে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নৌকা নিয়ে ফিরতে চান তাঁরা। এর উপরে রয়েছে সরকারি বরাতও। এই সে দিনই বরাতের জন্য যে সব নৌ-শিল্পী হা-পিত্যেশ করে বসে থাকতেন, তাঁরাই এখন বেজায় ব্যস্ত।

গঙ্গা তীরবর্তী বলাগড়ের শ্রীপুর ও তেঁতুলিয়া এলাকায় প্রায় ৩০০টি পরিবার নৌকা-শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা জানান, আগে নদী-খালে মাছ ধরার জন্য মৎস্যজীবীদের কাছে এখানকার নৌকার কদর ছিল। কিন্তু এখন মাছ ধরার নানা নিষেধাজ্ঞার জন্য তাঁরা খুব বেশি আসেন না। কিন্তু এখন বড় নৌকার প্রচুর চাহিদা। ভাল কাঠের নৌকার দাম স্বাভাবিরক কারণেই চড়া। ১৪-১৫ হাতের নৌকা থেকে ২২ হাতের বড় নৌকাও বানানো হচ্ছে। দাম ২২ থেকে ৮০ হাজার টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে। সাধারণ একটি ছোট নৌকা তৈরি করতে ১০-১২ দিন লাগে। বড় নৌকা বানাতে ৩০ দিনও লেগে যায়। সেই কাজটাই এখন অনেক কম সময়ে করতে হচ্ছে।

অলোক বারিক নামে এক নৌকা-শিল্পী বলেন, ‘‘সরকারি নৌকার যে বরাত মিলছে, তা মূলত বন্যাত্রাণের মালপত্র বিভিন্ন ফ্লাড শেল্টারে পাঠানোর জন্য। সে জন্য খুব ছোট নয়, মাঝারি ২২ হাতের মতো নৌকা বানানো হচ্ছে।’’ মইনুল মণ্ডল নামে আর এক নৌকা-শিল্পীর কথায়, ‘‘সকাল ৭টা থেকে কাজ শুরু করছি। টানা দুপুর তিনটে পর্যন্ত কাজ চলছে। তবু শেষ করতে পারছি না।’’

কাজের জোয়ার এসেছে বলাগড়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rain Flood DVC বলাগড়
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE