দুর্বার: দামোদরের উপর বাঁকপোতা সেতু। নিজস্ব চিত্র
বৃষ্টি বাড়লে ভাসবে আমতা-২, উদয়নারায়ণপুর— এ বারও আশঙ্কা করছে প্রশাসন।
তাই বর্ষা নামতেই শুরু হয়ে গিয়েছে প্রস্তুতি। যদিও প্লাবনের হাত থেকে হাও়ড়ার এই দুই ব্লককে বাঁচাতে এর আগে প্রায় ৩০ কোটি টাকা খরচ করে একটি খালের জল বহন ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু তাতে খুব একটা উপকার হবে না বলেই মনে করছেন প্রশাসনের কর্তারা। তাই আগে ভাগেই নির্দেশিকা এসে গিয়েছে রেশন ডিলারদের কাছে, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য মজুত করা হচ্ছে উঁচু জায়গায়, ত্রাণ শিবির হিসাবে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে প্রাথমিক স্কুল ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিকে।
কিন্তু কেন এমন আশঙ্কা প্রশাসনের?
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ষায় ডিভিসি জল ছাড়লেই প্লাবিত হয় উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা-২ ব্লক । দামোদরের পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত এই দু’টি ব্লক ‘স্পিল’ এলাকার অন্তর্গত। তাই এখানে একমাত্র ভরসা জমিদারি আমলের পুরনো বাঁধ। ডিভিসির চুক্তি অনুযায়ী সেচ দফতর বাঁধ দিতে পারে দামোদরের পূর্ব পাড়ে— উলুবেড়িয়া শহর এলাকায়। তাই ডিভিসি ১ লক্ষ কিউসেকের বেশি জল ছাড়লেই ভেসে যায় উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা-২ ব্লক।
বাড়তি জল যাতে দামোদর থেকে রূপনারায়ণে গিয়ে পড়তে পারে, সে জন্য বছর দশেক আগে আমতা-২ ব্লকের থলিয়া থেকে বাগনানের বাকসি পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার একটি খাল তৈরি করেছে সেচ দফতর। স্থানীয়দের কাছে তা ‘শর্টকাট চ্যানেল’ নামে পরিচিত। এতদিন ওই খালের জলবহন ক্ষমতা ছিল ৩০ হাজার কিউসেক। কিন্তু গত দু’তিন বছরের প্রবণতা বলছে বৃষ্টি বাড়লে ডিভিসি গড়ে দু’-আড়াই হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে। গত বছর জুলাই মাসেও প্লাবিত হয়েছিল ওই দুই এলাকা। তারপরেই ‘শর্টকাট চ্যানেল’ সংস্কার করে নাব্যতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সেচ দফতর। ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে সেই খাল সংস্কার করে প্রায় ৬০ হাজার কিউসেক বহনের ক্ষমতা তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও বিশেষ লাভ হবে না বলে মনে করছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা।
তাঁদের দাবি, দু’বছর আগে ভেঙে যাওয়া বকপোতা সেতু মেরামত করে ফের যান চলাচলের উপযুক্ত করে তোলা হয়েছে। সে জন্য দামোদরের দু’পাশে সেতুর নীচে জমানো হয়েছে বোল্ডার। দামোদরের পাড় উঁচু হয়ে গিয়েছে। আর তাতেই ধাক্কা ফুলে উঠছে দামোদরের জল। গত বছরও সঙ্কীর্ণ ওই এলাকায় জল ধাক্কা খেয়ে ভাসিয়ে দিয়েছে পাড়। বকপোতা থেকে হাওড়া-হুগলির সীমান্ত এলাকা ডিহিভুরসুট পর্যন্ত প্রায় ৯ কিলোমিটার অংশে বিভিন্ন জায়গায় জমিদারি বাঁধ ভেঙে উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা ২ ভেসেছিল সে বার।
সেচ দফতরের হাওড়া ডিভিশনের এক কর্তা জানান, বকপোতায় জল না আটকালে তা সরাসরি শর্টকাট চ্যানেল পর্যন্ত পৌঁছে যেত এবং রূপনারায়ণে পড়ত। ওই খালের জল বহন ক্ষমতা বেড়েছে, তাই বন্যার প্রকোপ অনেকটাই কমত। কিন্তু বকপোতার পুরনো সেতুর জন্য এ বছরও শর্টকাট চ্যানেল সংস্কারের সুফল মিলবে না। তাঁর দাবি, ‘‘বন্যা হলেও জল নামার কাজে এই চ্যানেল অনেকটা সহায়তা করবে। ফলে মানুষের বন্যা পরবর্তী দুর্ভোগ কমবে।’’
কিন্তু তাতে সুরাহা কোথায়? ওই কর্তাই বলেছেন, বকপোতায় নতুন সেতু তৈরি হলেই ভেঙে দেওয়া হবে পুরনো সেতু— তা হলেই সমাধান। নতুন সেতু তৈরির কাজ অবশ্য চলছে পুরনো সেতুর পাশেই। পূর্ত (সড়ক) বিভাগের হাওড়া ডিভিশনের এক কর্তা জানান, অক্টোবর মাসেই নতুন সেতুর কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। তার আগে বন্যার প্রস্তুতি সেরে রাখছে জেলা প্রশাসন।
উদয়নারায়ণপুরের বিধায়ক সমীর পাঁজা বলেন, ‘‘গত বন্যায় ভেঙে যাওয়া জমিদারি বাঁধের অংশ মেরামত করা হয়েছে। শর্টকাট চ্যানেলও সংস্কার হয়েছে। কিন্তু বকপোতা সেতুর কাজ শেষ হয়নি। এই অবস্থায় ডিভিসি মাত্রাতিরিক্ত জল ছাড়লে বন্যা হবে ধরে নিয়েই আমরা সব রকম প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy