Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
খাওয়া যায় না, হাওড়া জুড়ে অভিযোগ গরিব মানুষদের

হাত ফেরত হয়ে আটা ফের রেশনে

খাতায়-কলমে গ্রাহক নিচ্ছেন। কিন্তু আদতে যাচ্ছে ফড়ের ঘরে। সেই ঘর থেকে কখনও গরু-মোষের পেটে, কখনও আটা-কলেই!

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:২৩
Share: Save:

গরিব মানুষের জন্য রেশনে ২ টাকা কেজি দরে আটা দিচ্ছে সরকার। কিন্তু নিচ্ছে কে?

খাতায়-কলমে গ্রাহক নিচ্ছেন। কিন্তু আদতে যাচ্ছে ফড়ের ঘরে। সেই ঘর থেকে কখনও গরু-মোষের পেটে, কখনও আটা-কলেই!

এ অবস্থা গোটা হাওড়া জেলা জুড়েই। প্রতি সপ্তাহে রেশন দোকানগুলির সামনে ভিড় করছেন ফড়েরা। কিন্তু কেন? গরিব মানুষদের অনেকেরেই অভিযোগ, রেশনের আটা এত নিম্ন মানের যে তা খাওয়া যায় না। তাই ওই আটা তাঁরা বেচে দিচ্ছেন বলে মেনেও নিয়েছেন। দু’দিন আগেই আমতার রসপুরের একটি রেশনে দোকানে দেখা গেল, এক মহিলা ওই আটা নিলেন। তার পরে দোকানের বাইরে বেরিয়েই ঢেলে দিলেন ফড়ের থলেতে। তাঁর হাতে এল পাঁচ টাকা। আটা বিক্রির পিছনে যথারীতি তিনিও নিম্ন মানের অভিযোগ তুললেন। একই অভিযোগে সরব বিজেপি-তৃণমূলও।

জেলা খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের এক কর্তা ফড়েদের দাপিয়ে বেড়ানোর কথা মেনে নিয়ে দাবি করেছেন, এটা বন্ধ করা পুলিশের কাজ। এ বিষয়ে তিনি পুলিশের সঙ্গে কথা বলবেন। কিন্তু নিম্ন মানের আটা সরবরাহের কথা মানেননি। তিনি বলেন, ‘‘আটাকল থেকে আটা আসার পরে রাজ্যের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে তবে তা রেশন দোকানে যায়। বহুবার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। ত্রুটি মেলেনি। তবুও যে হেতু অভিযোগ উঠছে, তাই ফের নমুনা পরীক্ষা হবে।’’ কিন্তু ওয়েস্টবেঙ্গল এম আর ডিলার অ্যাসোসিয়েশন-এর হাওড়া জেলা সম্পাদক বিকাশ বাগ বলেন, ‘‘আটাকলগুলি যেমন আটা দেয় আমরা সেটাই গ্রাহকদের দিই। আমরা জেলা খাদ্য সরবরাহ দফতরে বহুবার নিম্ন মানের আটা দেওয়ার কথা জানিয়েছি। মাঝে মাঝে ভাল আটা দেওয়া হলেও সেটার স্থায়িত্ব মাত্র কয়েকদিন। পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে ফড়েরা।’’

খাদ্য সরবরাহ দফতর সূত্রের খবর, গরিব মানুষদের জন্য এ রাজ্যে ‘খাদ্য সুরক্ষা আইন’ চালু হয়েছে ২০১৫ সালে। প্রথমে ২ টাকা কেজি দরে চাল-গম দেওয়ার কথা হয়। পরে রাজ্য সরকার গম দেওয়ার নীতি থেকে সরে আসে। বদলে আটা দেওয়া শুরু হয়। সরকার অনুমোদিত আটাকলগুলিই গম ভাঙিয়ে আটা রেশন দোকানে পাঠিয়ে দেয়। ‘অতি গরিব’ পরিবার মাসে ২ টাকা কেজি দরে ২০ কেজি আটা এবং ১৫ কেজি চাল পাওয়ার অধিকারী। ‘মাঝারি গরিব’ শ্রেণির জন্য আটা দেওয়া হয় কার্ডপ্রতি মাসে তিন কেজি করে। এ জন্য দাম দিতে হয় কেজিপ্রতি সাড়ে তিন টাকা করে। হাওড়ায় ওই দুই শ্রেণির মানুষেরই আটার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

আমতার এক গরিব মহিলার ক্ষোভ, ‘‘রেশনে যে আটা দেওয়া হয়, তা খাওয়া যায় না। তাই ফড়েদের বিক্রি করে দিতে হয়।’’ ওই এলাকারই এক ফড়ে জানান, এই আটা কিছুটা পশুখাদ্য হিসাবে বিক্রি করেন তাঁরা। বাকিটা যায় আটাকলে। সেখান থেকে ফের রেশন দোকানে।

বছরখানেক আগে নিম্ন মানের আটা নিয়ে শ্যামপুর-১ ব্লকের বালিজাতুরি পঞ্চায়েতের কিছু গ্রামবাসী বিডিও-র কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। প্রশাসনিক তদন্তের পরে ডোমজুড়ের অঙ্কুরহাটির একটি আটাকলের বিরুদ্ধে সাময়িক ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মূলত যিনি অভিযোগ করেছিলেন, তিনি ছিলেন ওই পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা বিজেপির তপন দাস। তিনি বলেন, ‘‘খাদ্য দফতর তখন ব্যবস্থা নেওয়ায় কিছুদিন ভাল আটা দেওয়া হয়েছিল। আবার পরিস্থিতি যে-কে সে-ই।’’

বৃহস্পতিবার আমতা-১ ব্লকের সামাজিক নিরীক্ষার জনশুনানিতেও ১৩টি পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান, উপপ্রধান এবং সদস্যেরাও একই অভিযোগে সরব হন। এক প্রধান ব‌লেন, ‘‘আমাদের কাছেও প্রায়ই ওই অভিযোগ আসছে। নিজেরাও দেখেছি এই আটা মুখে তোলা যায় না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE