ফরেন্সিক পরীক্ষার চলছে। (ইনসেটে) নিহত সুলেখা মুখোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র
বছর পেরোতে চলল। কিন্তু ব্যান্ডেলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা সুলেখা মুখোপাধ্যায় খুনের ঘটনার ফরেন্সিক রিপোর্ট এখনও জমা পড়ল না আদালতে। ফলে, ধৃত অভিযুক্তেরা জামিন পেয়ে হামলা করতে পারে, এই আশঙ্কায় ভুগছেন সুলেখাদেবীর ভাই এবং সাক্ষীরা।
চন্দননগর কমিশনারেট সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, ওই রিপোর্ট ফরেন্সিক বিভাগ থেকে আসে। রাজ্যের বিভিন্ন ঘটনার ফরেন্সিক তদন্তের রিপোর্ট ওই বিভাগ থেকে ক্রম অনুযায়ী দেওয়া হয়। ফলে, তা পেতে দেরি হয়। পুলিশ কমিশনার অজয় কুমার অবশ্য বলেন, ‘‘ওই রিপোর্ট যাতে দ্রুত মেলে সে জন্য আমরা ইতিমধ্যেই তদ্বির করেছি। পেলেই আদালতে জমা দেওয়া হবে। এর মধ্যে অভিযুক্তেরা জামিন পেয়ে গেলে তাদের উপরে নজর রাখা হবে। সাক্ষীদের এবং আক্রান্ত পরিবারের লোকজনকেও যথাযথ নিরাপত্তা দেওয়া হবে।’’
গত বছর ২৭ অক্টোবর সকালে চমকে গিয়েছিলেন ব্যান্ডেলের কাজিপাড়ার বাসিন্দারা। তাঁদের পড়শি, সত্তরোর্ধ্ব সুলেখাদেবীকে যে কেউ ধারাল অস্ত্র দিয়ে গলার নলি কেটে খুন করতে পারে, তা তাঁরা ভাবতে পারেননি। লোপাট হয়ে গিয়েছিল আলমারিতে থাকা নগদ কয়েক হাজার টাকা, গয়না এবং মূল্যবান কিছু জিনিস। সুলেখাদেবী বাড়িতে একাই থাকতেন। ভরসা ছিল শুধু দুই পরিচারিকা।
তদন্তে নামে পুলিশ। ওই সকালে সুলেখাদেবীর সাড়া না-মেলার কথা পড়শিরা জানতে পেরেছিলেন তাঁর পরিচারিকা মাধবী কর্মকারের থেকে। সুলেখাদেবীর বাড়ির দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। সেই দরজা ভেঙে ঢুকে সুলেখাদেবীর ভাই, ওই এলাকারই বাসিন্দা শুভেন্দু মুখোপাধ্যায় খুনের কথা জানতে পারেন।
পুলিশ মাধবীকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। তার পরে একে একে জেরা করা হয় মাধবীর স্বামী বিশু, সুফল কর্মকার নামে এক রাজমিস্ত্রি এবং গোর্খা পাসোয়ান নামে এক দুষ্কৃতীকে। পুলিশের দাবি, জেরায় চার জন অপরাধ কবুল করে জানায়, টাকা-গয়না এবং মূল্যবান জিনিস হাতিয়ে প্রমাণ লোপাটের জন্য ২৬ অক্টোবর রাতে সুলেখাদেবীকে তারা খুন করে। তার পরে ছাদ হয়ে পালায়। পুলিশ চার জনকেই গ্রেফতার করে। ধৃতেরা এখনও জেল হেফাজতেই রয়েছে।
ঘটনার তদন্তে এসেছিল ফরেন্সিক দল। ওই বাড়ি থেকে সংগ্রহ করেছিল নানা নমুনা। কিন্তু সেই রিপোর্ট এখনও মেলেনি। খুনের মামলাটি চলছে চুঁচুড়া আদালতে। ইতিমধ্যে কয়েক দফায় সাক্ষ্যগ্রহণও হয়েছে। কিন্তু ফরেন্সিক রিপোর্ট জমা না-পড়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন শুভেন্দুবাবুরা।
শুভেন্দুবাবু বলেন, ‘‘প্রায় এক বছর ধরে মামলা চলছে। এখনও ফরেন্সিক রিপোর্ট জমা পড়ল না। ফলে, মামলার নিষ্পত্তি হতেও দেরি হচ্ছে। ধৃতেরা কোনও ভাবে ছাড়া পেয়ে আমার পরিবারের সদস্য এবং সাক্ষীদের উপর হামলা করতে পারে। আতঙ্কে দিন কাটাতে হচ্ছে।’’
মনোজ দাস নামে সুলেখাদেবীর এক পড়শি বলেন, ‘‘বার্ধক্যজনিত কারণে সুলেখাদেবী অসুস্থ ছিলেন। তিনি তাঁর পরিচারিকাকে ভীষণ বিশ্বাস করতেন। আপদে-বিপদে ওদের পাশে দাঁড়াতেন। কিন্তু পরিচারিকা যে বিশ্বাসঘাতকতা করবে, এটা আমরা ভাবতে পারিনি। ওরা যেন ছাড়া না-পায়। ছাড়া পেলে হামলা করতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy