গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
সমকামিতা অপরাধ নয় বলে কিছুদিন আগেই রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শ্যামপুরের উদ্ভবপুর গ্রামের আজিজুল রহমান অবশ্য স্ত্রীর ‘সমকামিতা’ কোনও দিনই মানতে পারেননি। দীর্ঘদিন ধরে আপত্তি জানাচ্ছিলেন। তাই শায়েস্তা করতে ‘বান্ধবী’র সাহায্য নিয়ে আজিজুলকে অ্যাসিড মারার অভিযোগ উঠল তাঁর স্ত্রী পিয়ারন বিবির বিরুদ্ধে। পুলিশের কাছে লিখিত ভাবে ওই অভিযোগ করেছেন আজিজুল।
বৃহস্পতিবার রাতে শ্যামপুরেরই তেঁতুলবেড়িয়ার রাস্তায় আক্রান্ত বছর বত্রিশের ওই যুবককে উলুবেড়িয়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তাঁর মুখের অনেকটা অংশ পুড়ে গিয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। পুলিশ জানিয়েছে, পিয়ারন বিবিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর ‘বান্ধবী’, ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সাবিনা খাতুন পলাতক। তার খোঁজ চলছে। সে কোথা থেকে অ্যাসিড পেল, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শুক্রবার পিয়ারনকে উলুবেড়িয়া আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাঁকে ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
সমকামিতার অভিযোগ মানেননি পিয়ারন। এ দিন আদালতে যাওয়ার পথে তাঁর দাবি, ‘‘সমকামিতা নিয়ে আজিজুল আমার নামে মিথ্যা কথা বলছে।’’ একই সঙ্গে তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘আজিজুলের স্বভাব ভাল নয়। ও আমাকে মারধর করত। তাই রাগে চলে যেতাম। ও সাবিনাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। সাবিনা রাজি না-হওয়ায় ও বিরক্ত করত। সেই রাগে সাবিনা অ্যাসিড ছুড়েছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৭ সালে পেশায় ডাব বিক্রেতা আজিজুলের সঙ্গে শ্যামপুরের মহম্মদপুরের বাসিন্দা পিয়ারনের বিয়ে হয়। তাঁদের দু’টি সন্তান। ২০১২ সালে পড়শি সাবিনা খাতুনের সঙ্গে পিয়ারনের বন্ধুত্ব হয়। দু’জনে সমকামিতায় জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ। তার জেরে আজিজুলের সংসারে অশান্তি শুরু হয়। ওই বছরই দুই ছেলেকে নিয়ে পিয়ারন পালিয়ে যান। আজিজুল থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ মাসছয়েক পরে পূর্ব মেদিনীপুরের সুতাহাটা থেকে পিয়ারন ও সাবিনাকে উদ্ধার করে। পিয়ারন ফের সংসার শুরু করেন। কিন্তু সাবিনার সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করেননি বলে আজিজুলের অভিযোগ। ফলে, দম্পতির অশান্তিতেও ছেদ পড়েনি। বছর দুয়েক আগেও ফের ঘর ছাড়েন পিয়ারন। বছরখানেক আগে আজিজুল দ্বিতীয় বিয়ে করেন। মাসতিনেক আগে পিয়ারন ফিরে আসেন। ফের শুরু হয় গোলমাল। বৃহস্পতিবার ওই কাণ্ড।
আজিজুলের দাবি, ‘‘আমি সাইকেলে বাড়ি ফিরছিলাম। ভীমতলার কাছে সাবিনার সঙ্গে দেখা। ও আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে বলে। আমি রাজি না-হওয়ায় প্রায় জোর করেই সাইকেলে চাপে। তেঁতুলবেড়িয়ায় পৌঁছে থামতে বলে। তার পরেই সঙ্গে আনা অ্যাসিড আমার মুখে ছুড়ে পালায়।’’ একই সঙ্গে আজিজুলের অভিযোগ, ‘‘বেশ কয়েকবার সাবিনার সঙ্গে স্ত্রীকে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে ফেলেছিলাম। ওর সঙ্গে মিশতে নিষেধ করলেও স্ত্রী শুনত না। একাধিকবার বাড়ি ছাড়লেও স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়েছিলাম। দুই স্ত্রীকে নিয়েই থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সাবিনাকে মানতে পারিনি। সেটাই আমার অপরাধ।’’ সাবিনাকে জড়িয়ে তাঁর বিরুদ্ধে পিয়ারন যে অভিযোগ তুলেছেন, আজিজুল তা উড়িয়ে দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy