কার্নিভাল হওয়ার কথা শোনার পর রবিবার স্ট্র্যান্ডে প্রতিবাদ। —ফাইল ছবি।
ঘোষণার শুরু থেকেই সঙ্গ নিয়েছিল বিতর্ক। তোলপাড় হচ্ছিল সোশ্যাল মিডিয়া। শেষ পর্যন্ত বাতিল হল চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর কার্নিভালের সরকারি পরিকল্পনা। ফলে, শহরে যাঁরা শোভাযাত্রার পরম্পরা ধরে রাখার পক্ষে আন্দোলন শুরু করেছিলেন, তাঁরা খুশি। তাঁরা মনে করছেন, আন্দোলনের চাপেই শেষ পর্যন্ত পিছু হটল সরকার।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে সরকারি ভাবে কার্নিভাল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কার্নিভালের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন তথ্যসংস্কৃতি মন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক ইন্দ্রনীল সেন। কিন্তু তা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে শুক্রবার মন্ত্রীর কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএসেরও জবাব দেননি। তবে, চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অজয় কুমার বলেন, ‘‘কার্নিভালের বিষয়টি আলোচনার স্তরে ছিল। সরকারি সিদ্ধান্ত কিছু হয়নি। ঠিক হয়েছে, আগের মতোই শোভাযাত্রা সহকারে ভাসান হবে।’’ চন্দননগরের পুর কমিশনার স্বপন কুণ্ডু বলেন, ‘‘কার্নিভাল হওয়ার কথা চলছিল। শুনছি হচ্ছে না। আমি ছুটিতে আছি। শনিবার অফিসে গিয়ে পুরো বিষয়টি বুঝতে পারব।’’ তবে, চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পূজা কমিটির কার্যকরী সভাপতি নিমাইচন্দ্র দাস দাবি করেছেন, কার্নিভাল হওয়া বা বন্ধ হওয়া নিয়ে সরকারি ভাবে তাঁদের কিছুই জানানো হয়নি।
দশমীতে রাতভর আলো সহযোগে জগদ্ধাত্রী প্রতিমা নিয়ে শোভাযাত্রার ঐতিহ্য চন্দননগরের দীর্ঘদিনের। শুধু শোভাযাত্রা দেখার জন্য দশমীর রাতে এ শহরে কয়েক লক্ষ মানুষের ভিড় হয়। সেই পরম্পরাকেই এ বার কার্নিভালের রূপ দিতে উদ্যোগী হয় সরকার। বরাদ্দ হয় টাকাও। মন্ত্রী ইন্দ্রনীল কয়েকদিন আগে জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশমতো জগদ্ধাত্রী পুজোর শোভাযাত্রাকে কার্নিভালের মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেওয়া হবে। প্রতিবারের মতো একই পদ্ধতিতে প্রতিমা নিরঞ্জন হবে। তবে, আগে মানুষ দাঁড়িয়ে উপভোগ করতেন। এ বার স্ট্র্যান্ডে ছাউনি দেওয়া বসার ব্যবস্থা হবে। নিরাপত্তা বাড়ানো হবে, জৈব শৌচাগার, ওয়াচ টাওয়ার এবং নিরঞ্জনের জন্য ঘাটেরও সু-বন্দোবস্ত করা হবে। শোভাযাত্রার সামিল পুজো উদ্যোক্তাদের পুরস্কৃতও করা হবে।
কিন্তু সে কথা জানার পরেই শহরের বহু বাসিন্দা প্রতিবাদ জানান। তাঁরা মনে করেন, এতে শোভাযাত্রার ঐতিহ্য ক্ষুণ্ণ হবে। কেউ কেউ আবার সরাসরি সরকারি হস্তক্ষেপেরও অভিযোগ তোলেন। রবিবার বিকেলে জনাপঞ্চাশ ‘ফেসবুক বন্ধু’ স্ট্র্যান্ডে প্রতিবাদ-মিছিলও করেন। এ বার কার্নিভাল বন্ধের কথা জানতে পেরে তাঁরা স্বস্তিতে। শহরের বাসিন্দা তরুণ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘কী কারণে এখানকার শোভাযাত্রার চরিত্র বদলের কথা ভাবা হচ্ছিল, তা বোধগম্য হয়নি। আগেকার মতো শোভাযাত্রা হলে ঐতিহ্য এবং পরম্পরা বজায় থাকবে।’’
তবে, তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ মানছেন, কার্নিভালের বিরোধিতায় যাঁরা সবচেয়ে বেশি সরব হয়েছিলেন, তাঁরা মন্ত্রীর নিজের দলেরই স্থানীয় নেতা। ফলে, লড়াইটা যে বাইরের থেকে ইন্দ্রনীলকে ঘরেই বেশি লড়তে হয়েছে। কার্নিভাল বন্ধের দাবিতে রাজনৈতিক অভিসন্ধির অভিযোগ আগেই তুলেছিলেন ইন্দ্রনীল। ঘনিষ্ঠ মহলে মন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি চেয়েছিলেন চন্দননগর, শ্রীরামপুরের বাইরের মানুষও কার্নিভালের মধ্যে দিয়ে জগদ্ধাত্রী পুজো তো বটেই ঐতিহাসিক শহরটির সঙ্গে পরিচিত হন। পর্যটনে এই শহরের যে সম্ভাবনা রয়েছে, তা কার্নিভালের মাধ্যমে তুলে ধরার সুযোগ ছিল। সরকারি স্তরে আয়োজন হলে কলকাতায় বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের কর্তাদের সেখানে আমন্ত্রণ জানানো যেত। ফলে, শহরে পর্যটনের দুয়ার বিদেশিদের কাছে নতুন করে খুলে যেত।
তথ্য সহায়তা: তাপস ঘোষ ও প্রকাশ পাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy