Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

শিলাবৃষ্টিতে ঝরল আম, শঙ্কায় ‘দ্বিতীয় মালদহ’র চাষিরা

মাঘ-ফাগুনে গাছভরা মুকুল, চৈত্রের মাঝামাঝিতে ছোট ছোট আম দেখে এ বার ব্যাপক ফলনের আশা করেছিলেন হুগলির আমচাষিরা। কিন্তু তাঁদের সেই আশায় বাদ সাধল বুধবারের ঝড় এবং শিলাবৃষ্টি। বলাগড়, পাণ্ডুয়া-সহ জেলার বেশ কিছু এলাকায় ওই দুর্যোগে ঝরে গিয়েছে প্রচুর ছোট আম।

ঝরে পড়া আম কুড়োতে ব্যস্ত এক বালিকা। পাণ্ডুয়ায় নিজস্ব চিত্র।

ঝরে পড়া আম কুড়োতে ব্যস্ত এক বালিকা। পাণ্ডুয়ায় নিজস্ব চিত্র।

প্রকাশ পাল
বলাগড় শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৪৪
Share: Save:

মাঘ-ফাগুনে গাছভরা মুকুল, চৈত্রের মাঝামাঝিতে ছোট ছোট আম দেখে এ বার ব্যাপক ফলনের আশা করেছিলেন হুগলির আমচাষিরা। কিন্তু তাঁদের সেই আশায় বাদ সাধল বুধবারের ঝড় এবং শিলাবৃষ্টি। বলাগড়, পাণ্ডুয়া-সহ জেলার বেশ কিছু এলাকায় ওই দুর্যোগে ঝরে গিয়েছে প্রচুর ছোট আম।

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সার্বিক চিত্র এখনও পরিষ্কার নয়। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বলাগড়ের বিডিও রঞ্জিৎ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘আমের ক্ষতি নিয়ে দফতরে কেউ লিখিত ভাবে কিছু জানাননি। নির্দিষ্ট ভাবে কেউ জানালে প্রশাসনের তরফে সরেজমিনে বিষয়টি দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ একই বক্তব্য পাণ্ডুয়ার বিডিও নবনীপা সেনগুপ্তেরও।

আমের ফলনের নিরিখে হুগলির গুপ্তিপাড়াকে স্থানীয় লোকজন ‘দ্বিতীয় মালদহ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বলাগড়ের গুপ্তিপাড়া, সোমড়া, চরকৃষ্ণবাটিতে ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়। চাষিদের দাবি, দু’দফায় মিনিট দশেক শিলাবৃষ্টি হয়। এ বারে গুপ্তিপাড়ায় গাছে গাছে প্রচুর আম হয়েছে। চাষিদের বক্তব্য, ছোট ছোট আমে গাছ ছেয়ে গিয়েছিল। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আম বড় হয়ে যাবে বলে তাঁরা আশা করে বসেছিলেন। কিন্তু এ দিনের শিলাবৃষ্টি কিছুটা হলেও তাঁদের সেই আশায় জল ঢেলে দিয়েছে।

গুপ্তিপাড়ার চারাবাগান এবং ফতেপুরে মোট ১৫ বিঘা জমিতে আম চাষ করেছেন শিশির দাস। তিনি বলেন, ‘‘গত বছর আমের ফলন আশানুরূপ হয়নি। কিন্তু এ বার প্রচুর ফলন হবে বলে নিশ্চিত ছিলাম। মুকুল থেকে সবে আম ধরেছে। এমন সময়ে শিলাবৃষ্টি প্রচুর ক্ষতি করে দিল। প্রচুর আম ঝরে পড়ে গিয়েছে। গাছে রয়েছে, এমন আমেও দাগ ধরে গিয়েছে। দিন কয়েকের মধ্যে এই আমগুলিও পড়ে যাবে। সব মিলিয়ে অর্ধেক আম নষ্ট।’’

চরকৃষ্ণবাটিতে বিঘা দশেক জমিতে আম চাষ করেন সজল মণ্ডল এবং তাঁর ভাই সুব্রত। এ বার তাঁরা হিমসাগর, বোম্বাই, ফজলি, সরিখাস জাতের আম চাষ করেছেন। শিশিরবাবুর মতোই তাঁদের বাগানেও একই অবস্থা। সজলবাবু বলেন, ‘‘যে হারে গাছে আম ধরেছিল, তাতে ভেবেছিলাম যে এ বার আমে ভাল লাভ হবে। কিন্তু তা আর হল না। ঝ়ড়ে যাওয়া আম এতই ছোট যে বাজারে বিক্রিও করা যাবে না।’’

কৌশিক বিশ্বাস নামে গুপ্তিপাড়ার আর এক আমচাষি জানান, নিজের জমিতে এবং কয়েকটি বাগান ‘লিজ’ নিয়ে তিনি নানা প্রজাতির আম চাষ করেছেন। তিনিও ক্ষতিগ্রস্ত। তাঁর কথায়, ‘‘প্রচুর আম নষ্ট হয়েছে। গাছে থাকা যে সমস্ত আমের গায়ে শিলার আঘাত লেগেছে, পচন ধরে দু’দিন পরে সেগুলিও পড়ে যাবে। ঠিক কত ক্ষতি হয়েছে, তখন বোঝা যাবে।’’

বলাগড়ের পাশাপাশি পাণ্ডুয়ার সিমলাগড়, বৈচিঁ, জামগ্রাম, তিন্না, চুঁচুড়া, চন্দননগর-সহ নানা এলাকাতেও বুধবার শিলাবৃষ্টি হয়। চাষিরা জানান, দু’দফায় বেশ কিছুক্ষণ করে শিলা পড়ে। তিন্না এলাকায় বিন্দু হীরা এবং সিন্ধু হীরা নামে দুই ভাইয়ের আমবাগান রয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, ছোট ছোট প্রচুর আম মাটিতে পড়ে রয়েছে। ছোটরা সেই আম কুড়োচ্ছে। বিন্দুবাবু বলেন, ‘‘আমগুলো সবে বেড়ে ওঠা শুরু করেছে। এমন সময় শিলাবৃষ্টিতে বেশ ক্ষতি হয়ে গেল। একে তো প্রচুর আম ঝরে গিয়েছে। তা ছাড়া, গাছে থাকা অনেক আমও নষ্ট হয়েছে। পড়ে যাওয়া আম এতই ছোট, বাজারে বিক্রি করা সম্ভব নয়। অগত্যা ক্ষতি মেনে নেওয়া ছাড়া কিছু করার নেই।’’

একই বক্তব্য আরও অনেকের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE