Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

জুটমিল শ্রমিকের ঝুলন্ত দেহ

বিশ্বজিৎ গোন্দলপাড়া জুটমিলের ‘তাঁতঘর’ বিভাগের শ্রমিক ছিলেন। স্ত্রী, বছর দশেকের মেয়ে এবং বৃদ্ধা মাকে নিয়ে ছিল তাঁর সংসার। বিশ্বজিতের মৃত্যুর খবর ছড়াতেই ওই জুটমিলের শ্রমিক মহল্লায় শোকের ছায়া নেমে আসে।

শোকার্ত: মৃত বিশ্বজিৎ দে’র (ইনসেটে) স্ত্রী ও মেয়ে। —নিজস্ব িচত্র

শোকার্ত: মৃত বিশ্বজিৎ দে’র (ইনসেটে) স্ত্রী ও মেয়ে। —নিজস্ব িচত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
চন্দননগর শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৯ ০১:২০
Share: Save:

বন্ধ চন্দননগরের গোন্দলপাড়া জুটমিলের এক শ্রমিকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। শনিবার রাতে শহরের বুড়ো শিবতলার ভাড়াবাড়ি থেকে থেকে বিশ্বজিৎ দে (৩৮) নামে ওই শ্রমিকের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁর পরিবারের দাবি, মিল বন্ধ থাকায় বিশ্বজিৎ কাজ খুঁজছিলেন। কিন্তু ভাল কাজ না পেয়ে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। সেই কারণেই আত্মঘাতী হন।

বিশ্বজিৎ গোন্দলপাড়া জুটমিলের ‘তাঁতঘর’ বিভাগের শ্রমিক ছিলেন। স্ত্রী, বছর দশেকের মেয়ে এবং বৃদ্ধা মাকে নিয়ে ছিল তাঁর সংসার। বিশ্বজিতের মৃত্যুর খবর ছড়াতেই ওই জুটমিলের শ্রমিক মহল্লায় শোকের ছায়া নেমে আসে। ক্ষুব্ধ শ্রমিকদের অভিযোগ, মিলের মালিকপক্ষের জন্যই এই পরিণতি। অথচ, রাজ্য সরকার নীরব। চন্দননগরের সংগঠন ‘অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক কল্যাণ সমিতি’র কর্ণধার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় রবিবার মৃতের বাড়িতে গিয়ে তাঁর আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁরও অভিযোগ, ‘‘মিলের মালিকপক্ষ এই মৃত্যুর জন্য দায়ী। অদ্ভুত ভাবে সরকারও চুপ। শ্রমিকের এমন পরিণতি মেনে নেওয়া যায় না।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জন্মাষ্টমী উপলক্ষে গত শনিবার বিশ্বজিৎ স্ত্রী শুক্লা এবং মেয়ে কোয়েলকে নিয়ে চন্দননগরের বিবিরহাট চড়কতলায় শ্বশুরবাড়িতে যান। রাতে তিনি একাই বাড়ি ফেরেন। তার পরেই ফাঁকা ঘরে সিলিং ফ্যান থেকে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়েন। শুক্লা জানান, রাতে তিনি স্বামীর মোবাইলে ফোন করেন। কিন্তু মোবাইল বন্ধ ছিল। তার পরে দাদা এবং মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে স্বামীকে ওই অবস্থায় দেখেন। পুলিশ এসে দেহটি উদ্ধার করে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ময়নাতদন্তে পাঠায়।

শুক্লা বলেন, ‘‘মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ও কাজ খুঁজছিল। কিন্তু পছন্দসই কাজ না-জোটায় মানসিক অবসাদেও ভুগছিল। কিন্তু মনে মনে এমনটা ভেবে রেখেছিল, বুঝতে পারিনি। কাজ হারালে মানুষের কী পরিণতি হয়, নিজের জীবন দিয়ে বুঝলাম।’’ ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া মেয়ে এবং বৃদ্ধা শাশুড়ির দেখভাল কী করে করবেন, তা নিয়েই চিন্তায় পড়েছেন শুক্লা। তাঁর দাদা কল্যাণ দে বলেন, ‘‘মিল বন্ধের পর থেকে ওঁদের সংসারে অনটন দেখা দিয়েছিল। অবসাদগ্রস্ত হয়ে ভগ্নিপতি এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল।’’

২০১৮ সালের ২৭ মে গোন্দলপাড়া চটকলে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’-এর বিজ্ঞপ্তি ঝোলান কর্তৃপক্ষ। সেখানকার হাজার পাঁচেক শ্রমিক এবং তাঁদের পরিবারের লোকেরা সমস্যা পড়েন। ছোটখাটো কাজ করে কেউ কেউ সংসার চালাচ্ছেন। কিন্তু সেই আয়ে অনেকেই ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা পর্যন্ত চালাতে পারছেন না বলে অভিযোগ। ভিন্ রাজ্যের শ্রমিকদের অনেকেই ফিরে গিয়েছেন। লোকসভা ভোটের মুখে কয়েক দিনের জন্য মিল খোলে। ফের বন্ধ হয়ে যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Suicide Worker Jute mill
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE