মিড-ডে মিলে দুর্নীতির অভিযোগে অবসরের মাত্র দু’দিন আগে, গত রবিবার গ্রেফতার হয়েছেন খানাকুলের নতিবপুর ভূদেব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নগেন্দ্রনাথ দাস। তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন মহকুমার ২১৫টি স্কুলের প্রধান শিক্ষককেরা। কিন্তু নগেন্দ্রনাথবাবুর স্কুলের সহকর্মী, গ্রামবাসী এবং অভিভাবকদের অনেকেই তাঁর বিপক্ষে। তাঁরা মনে করছেন, অভিযোগ যথাযথ। সঙ্গে তাঁরা নগেন্দ্রনাথবাবুর বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগও তুলেছেন।
নতিবপুর ভূদেব বিদ্যালয় আরামবাগ মহকুমার সবচেয়ে পুরনো স্কুল। কাশীনাথ মণ্ডল নামে স্কুলের এক অভিভাবক কোনও সমস্যা নিয়ে সম্প্রতি নগেন্দ্রনাথবাবুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। কাশীনাথবাবুর অভিযোগ, সেই সময় তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে অফিস থেকে বের করে দেন প্রধান শিক্ষক। কাশীনাথবাবু বলেন, ‘‘নগেন্দ্রনাথবাবুর দুর্ব্যবহার মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছিল। তাই শেষ পর্যন্ত কেউ পাশে দাঁড়াল না।’’ শ্যামল সরকার নামে এক গ্রামবাসী মনে করছেন, “প্রধান শিক্ষক এ বার জব্দ হলেন।’’
বহু স্কুলেই মিড-ডে মিলের উপভোক্তার সংখ্যা প্রশাসনের কাছে বাড়িয়ে দেখানো হয় দাবি করে নগেন্দ্রনাথবাবুর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মানতে চাননি বহু প্রধান শিক্ষক। কিন্তু নগেন্দ্রনাথবাবুর সহকর্মীরা মনে করছেন, এখানে ‘পুকুর চুরি’ হয়েছে। স্কুলের বর্তমান টিচার ইনচার্জ মানসকুমার সামন্ত বলেন, “খাবারের মান ঠিক রাখতে বাড়তি তহবিলের জন্য সব স্কুলেই হয়তো ১০-১৫ জন উপভোক্তা বাড়িয়ে দেখানো হয়। কিন্তু এখানে সংখ্যাটা অনেক বেশি দেখানো হত।’’
স্কুলেরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর বাৎসরিক অনুষ্ঠানে নির্দিষ্ট সূচির বাইরে কিছু অনুষ্ঠান হওয়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত এক শিক্ষককে সর্বসমক্ষে নগেন্দ্রবাবু অপমান করেন বলে অভিযোগ। সেই শিক্ষকই প্রথম মিড-ডে মিলে দুর্নীতি নিয়ে সরব হন। শিক্ষকেরা জোট বাঁধতে শুরু করেন। প্রথমে স্কুল সভাপতি সুভাষ দিন্দার কাছে মৌখিক অভিযোগ জানান। তারপরে নথি-সহ রিপোর্ট পাঠান পরিচালন সমিতির কাছে। প্রথম প্রথম অভিযোগ স্কুলের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকলেও শিক্ষকদের সঙ্গে নগেন্দ্রনাথবাবুর সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় অভিযোগ পৌঁছয় জেলা শিক্ষা দফতরে।
শিক্ষকদের দাবি, ২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিল ইউনিট টেস্ট ছিল। সে দিন মাত্র ৩০ জন পড়ুয়ার মিড-ডে মিল খাওয়ার কথা ছিল। তাঁদের তত্ত্বাবধানে সেই ৩০ জন মিড-ডে মিল খায়। কিন্তু ওই দিন সরকারি খাতায় রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিল ৩০৩ জন পড়ুয়া মিড-ডে মিল খেয়েছে বলে। ওই বছরেরই জুলাই মাসে স্কুল পরিচালন সমিতির তরফে দুর্নীতির সমস্ত তথ্য-সহ লিখিত অভিযোগ জানানো হয় জেলা প্রশাসন ও শিক্ষামন্ত্রীকে। স্কুল সভাপতি সুভাষ দিন্দা ছাড়াও অভিযোগপত্রে সই করেন অভিভাবক প্রতিনিধি বিকাশ ভৌমিক, বৃন্দাবন শাসমল, শিক্ষক প্রতিনিধিদের মধ্যে মানসকুমার সামন্ত, কল্যাণকর রায়, অরবিন্দ কররা। গত শুক্রবার জেলা শিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে নগেন্দ্রনাথবাবুর বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy