Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Cooking Oil

তেলের ঝাঁঝে স্বাদ কমছে হেঁশেলের

আলু-পেঁয়াজের পাশাপাশি ভোজ্য তেলের ঊর্ধ্বমুখী দামে সমস্যায় পড়েছে আমবাঙালি। খাঁটি ভোজ্য তেল খেতে গিয়ে তাঁদের ‘নাকের জলে-চোখের জলে’ অবস্থা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

প্রকাশ পাল
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২০ ০৭:২৩
Share: Save:

ঘরে ঘরে এখন সর্ষের তেল কম দিয়ে রান্নার ফরমান দিচ্ছেন কর্তারা।

কোনও গিন্নির রাগ হচ্ছে। কোনও গিন্নি বিভ্রান্ত। রান্নার স্বাদ হবে?

প্রশ্ন পাত্তাই দিচ্ছেন না কর্তারা, ‘‘তেলের দাম যা বেড়েছে, আর পারছি না। স্বাদ কম হলে হোক।’’

বাস্তবিকই, আলু-পেঁয়াজের পাশাপাশি ভোজ্য তেলের ঊর্ধ্বমুখী দামে সমস্যায় পড়েছে আমবাঙালি। খাঁটি ভোজ্য তেল খেতে গিয়ে তাঁদের ‘নাকের জলে-চোখের জলে’ অবস্থা।

মার্চ মাসে যে সর্ষের তেলের লিটারপ্রতি দাম ছিল ১১০ টাকা, বছর শেষে তা কিনতে হচ্ছে ১৪০ টাকায়। মার্চে যে সাদা তেলের দাম ছিল ১১০ টাকা লিটার, এখন সেটাই হয়েছে ১৩০ টাকা।

দামের বহরে অনেকেই কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। কারবারিদের একাংশ বলছেন, এমনিতেই এই সময় সর্ষের তেলের দাম কিছুটা বাড়ে। তার উপরে এ বার সর্ষে চাষ কমেছে বলে তাঁরা শুনছেন। ভিন্ রাজ্যে পঙ্গপালের জ‌ন্য ফলনের ক্ষতি হয়েছে। এই সব কারণে দামও বেড়েছে। অনেকেরই অবশ্য অভিযোগ, মজুতদারির উপরে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় পরিস্থিতি আরও বিগড়েছে। এই অবস্থায় সরকার ভর্তুকি দিয়ে রেশনে কম দামে ভোজ্য তেল বিক্রি করুক, এই দাবিও উঠছে।

শীতকালে সর্ষের তেলের চাহিদা বাড়ে। এই সময় ভাজাভুজি খেতে মানুষ বেশি পছন্দ করেন। গৃহিণীদের বক্তব্য, এই সময়ে আনাজ সস্তা হয়। তাই বেগুন ভাজা বা বেগুনি, রসিয়ে রাঁধা ফুলকপির তরকারি, খিচুরির সঙ্গে মাছভাজা বা ডিমের অমলেট বাঙালির বেশ প্রিয়। অনেকে আবার ত্বকের রুক্ষতা দূর করার জন্য সারা গায়ে সর্ষের তেল মাখেন। ফলে, এই সময় সংসারে সর্ষের তেল ব্যবহার অনেকটাই বাড়ে।

শেওড়াফুলির নোনাডাঙার মুদি ব্যবসায়ী বিশু সাউ বলেন, ‘‘মার্চ মাস থেকে দু’তিন ধাপে লিটারপ্রতি তেলের দাম ২০ টাকারও বেশি বেড়ে গিয়েছে। কোনও কোনও ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধি ৩৫ টাকাও হয়েছে। অনিয়ন্ত্রিত দামের জন্য পাইকারি বা খুচরো সব ধরনের ক্রেতাদের সঙ্গেই অশান্তি হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, সর্ষের চাষ কমেছে, অনেকে বলছেন‌ চাষ নষ্ট হয়েছে। তাই এই অবস্থা। সাদা তেলের দামও বেড়েছে।’’

মশাটের প্রবীর সাধুখাঁর তেলের ঘানি রয়েছে। তিনি জানান, উত্তরপ্রদেশ থেকে এজেন্ট মারফত তাঁর ঘানিতে সর্ষে আসে। তেল হয় উৎকৃষ্ট মানের। ঝাঁঝ থাকে বেশ। প্রবীরবাবুর বক্তব্য, ‘‘এই সময় তো দাম একটু বেশিই থাকে। চৈত্র, বৈশাখ মাসে সর্ষে উঠলে দাম নামবে।’’

গৃহস্থ অবশ্য তেলের দামে নাকানিচোবানি খাচ্ছেন। কোন্নগরের বাসিন্দা শৈলেন পর্বতের কথায়, ‘‘যা পরিস্থিতি, গৃহস্থকে আর বাঁচতে হবে না। আলু-পেঁয়াজ ছোঁয়া যাবে না, ভোজ্য তেলে হাত দেওয়া যাবে না— মানুষ যাবে কোথায়? মানুষের জন্য কাঁদুনি না গেয়ে সরকার এ দিকে নজর দিক। তাতেই মানুষের প্রকৃত ভাল হবে।’’

শ্রীরামপুরের বাসিন্দা নরেন ঘটকের অভিযোগ, ‘‘আমার তো মনে হয় মজুতদারির উপরে নিয়ন্ত্রণ না-থাকাতেই এই বেলাগাম পরিস্থিতি। পকেট কাটা যাচ্ছে সাধারণ মানুষের। রাজ্য সরকার কেন্দ্রের আইনের দোহাই দিচ্ছে। তা না করে ভর্তুকি দিয়ে রেশনে তে‌ল বিক্রি করা হোক।’’

বাজারে অবশ্য তেলের দাম কমার ‌লক্ষণ নেই। বরং তা আরও বাড়বে কিনা, তা ভেবে দুশ্চিন্তা বাড়ছে হেঁশেলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cooking Oil High Price
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE