Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ভাঙনের আতঙ্ক কেড়েছে ঘুম

কোথাও নদীবাঁধের পাইলেনের বোল্ডার ধুয়ে চলে গিয়েছে নদীতে। জোয়ার এলেই ঢেউয়ের ধাক্কায় ভাঙছে বাঁধ লাগোয়া রাস্তা।

উলুবেড়িয়ার কালীনগরে হুগলি নদীর ভাঙন। ছবি: সুব্রত জানা।

উলুবেড়িয়ার কালীনগরে হুগলি নদীর ভাঙন। ছবি: সুব্রত জানা।

মনিরুল ইসলাম
শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৪৪
Share: Save:

কোথাও নদীবাঁধের পাইলেনের বোল্ডার ধুয়ে চলে গিয়েছে নদীতে। জোয়ার এলেই ঢেউয়ের ধাক্কায় ভাঙছে বাঁধ লাগোয়া রাস্তা। আবার কোথাও বোল্ডার পাইলেনে চওড়া ফাটল জানান দিচ্ছে আগাম ভাঙনের খবর। হাওড়ার উলুবেড়িয়ায় হুগলি নদীর ধার ঘেঁষে থাকা জনপদ আতঙ্কের প্রহর গুনে চলেছে। সঙ্গতভাবেই বাঁধের উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাব নিয়ে সেচ দফতরকেই নিশানা করেছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা।

তাঁদের অভিযোগ, এমন বেহাল বাঁধের কারণে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পর্যন্ত পারেন না তাঁরা। বর্ষা সেই আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দেয়। অথচ ভাঙন আটকাতে বাঁধের মেরামতিতে তেমন জোর দেওয়া হয় না। সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, হুগলি নদীপথ জাতীয় জলপথ হিসাবে নথিভুক্ত। প্রতিদিন এই নদীতে জাহাজ চলাচল করে। ফলে তাঁরা সব সময়েই বাঁধে নজরদারি চালান। সেচ দফতরের কর্তাদের দাবি, বিভিন্ন সময় বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করা হয়। কয়েকটি জায়গায় কাজও চলছে। এ নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। সমস্যা মিটে যাবে। তবে কয়েকটি জায়গায় কাজ না হওয়ার জন্য তাঁরা অর্থের সমস্যাকেই দায়ী করেছেন।

সেচ দফতর এমন দাবি করলেও উলুবেড়িয়া জল প্রকল্পের কাছে নদীবাঁধের অন্য ছবি দেখা গেল। ১০০ ফুট এলাকা জুড়ে নদীবাঁধের বেশিরভাগ অংশের অবস্থা রীতিমত আশঙ্কাজনক। কয়েকটি জায়গায় নদীবাঁধে যে বোল্ডার ফেলা হয়েছিল (পাইলেন) তা জলের ধাক্কায় নদীতে মিশে গিয়েছে। বোল্ডার না থাকায় জলের তোড় থাবা বসিয়েছে বাঁধে। এরই কিছু দূরে প্রায়ই একই অবস্থা। সেখানে অবশ্য বাঁধ বাঁচাতে মাটির বস্তা ফেলেছিল সেচ দফতর। কিন্তু বস্তার মাটি ধুয়ে গিয়ে পড়ে রয়েছে কিছু বস্তা। এলাকাটি উলুবেড়িয়া পুরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের জগদীশপুরের মধ্যে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দা জিয়াউর রহমান মল্লিক বলেন, ‘‘এই এলাকায় বাঁধের অবস্থা খুবই খারাপ। বিশেষ করে বর্ষায় তো পরিবার নিয়ে আতঙ্কে রাত জেগে কাটাতে হয়। সেচ দফতর এখনই ব্যবস্থা না নিলে আর কিছু করার থাকবে না।’’

রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সারা বছর ধরেই সেচ দফতর নদীবাঁধ রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে। বহু জায়গায় কাজও চলছে। যেখানে যেখানে কাজ আটকে রয়েছে সেখানেও শীঘ্রই যাতে কাজ শুরু হয় সে ব্যবস্থা করা হবে।’’

উলুবেড়িয়ার কালীবাড়ি সংলগ্ল জগন্নাথপুর খেয়াঘাটের কাছেও বাঁধের অবস্থা বিপজ্জনক। নদীর পাড়েই মন্দির। মন্দিরের সামনে চওড়া ফাটল। মন্দির কমিটির সম্পাদক বিশ্বজিৎ দেবনাথ বলেন, ‘‘প্রতি মুহূর্তে আতঙ্কে থাকি। যে কোনও সময় হুগলি নদীর গর্ভে চলে যেতে পারে মন্দির। উল্টোদিকে রয়েছে জগন্নাথপুরের চর। যা আগে কয়েকশো ফুট ছিল। এখন তা ক্ষয়ে ক্ষয়ে অনেক কমে গিয়েছে। ক্ষয় রুখতে সেচ দফতর বোল্ডার দিয়ে পাইলেন করেছিল। কিন্তু কাজ হয়নি। ক্রমশ নদী এগিয়ে আসছে। খারাপ অবস্থা ফুলেশ্বর সেচ বাংলোর কাছেও। সেখানেও নদীর পাড়ে ফেলা বোল্ডারের পাইলেনে দেখা গেল দীর্ঘ ফাটল। অনেক জায়গায় বোল্ডারই নেই।

সেচ দফতর সূত্রে খবর, চককাশি, কালীনগর, গড়চুমুক-সহ কয়েকটি জায়গায় নদীবাঁধ সংস্কার হয়েছে। দফতরের এক কর্তা জানালেন, জল প্রকল্পের কাছে নদীর বাঁধ সংস্কারের জন্য টাকার অনুমোদন হয়ে গিয়েছে। পাশের কিছু জায়গায় কাজ চলছে। এখানেও শীঘ্রই সংস্কারের কাজ শুরু হয়ে যাবে। আর ফুলেশ্বর বাংলোর কাছে নদীবাঁধ সংস্কারের জন্য পরিকল্পনা পাঠানো হয়েছে। টাকা এলেই কাজ করা হবে। এ নিয়ে আশঙ্কার কিছু বলে তিনি জানালেও ফুলেশ্বরের ব্যাপারে টাকা কবে আসবে তা নিয়ে কিছু বলতে পারলেন না।

যদিও সেচ দফতরের আশ্বাসে আতঙ্ক কাটছে না বাসিন্দাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hooghly river erosion Uluberia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE