Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ছেলের সঙ্গেই সময় কাটছে অরুণাভর, ঘরকন্নায় মজে মীনা

ভোট খতম। কিন্তু টেনশন তো এখনও তালাবন্ধ ভোট মেশিনে। তাই কর গুনে দিন কাটছে ওঁদের, আর কত দিন! হাপিত্যেশ করে বসে থাকা প্রার্থীদের কথা আনন্দবাজারের পাতায়। দু’মাস চোখে-কানে দেখতে পাননি। শয়নে-স্বপনে ভোটই ছিল পাখির চোখ। সংসারেও যেন অচেনা মানুষ হয়ে উঠেছিলেন। বাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক বলতে খাওয়ার সময়টুকু। কিন্তু সেও কতটুকু, প্রচারের চাপে বেশিরভাগ সময়ে দুপুরের খাওয়া সারতে হয়েছে কোনও না কোনও কর্মীর বাড়িতে।

নিজের অফিস ঘরে ছেলের সঙ্গে ব্যস্ত অরুণাভ (বাঁদিকে)। ডানদিকে, রান্নার বাসনপত্র গুছিয়ে রাখছেন মীনাদেবী। ছবি: সুব্রত জানা।

নিজের অফিস ঘরে ছেলের সঙ্গে ব্যস্ত অরুণাভ (বাঁদিকে)। ডানদিকে, রান্নার বাসনপত্র গুছিয়ে রাখছেন মীনাদেবী। ছবি: সুব্রত জানা।

নুরুল আবসার
বাগনান শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৬ ০২:৫১
Share: Save:

দু’মাস চোখে-কানে দেখতে পাননি। শয়নে-স্বপনে ভোটই ছিল পাখির চোখ। সংসারেও যেন অচেনা মানুষ হয়ে উঠেছিলেন। বাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক বলতে খাওয়ার সময়টুকু। কিন্তু সেও কতটুকু, প্রচারের চাপে বেশিরভাগ সময়ে দুপুরের খাওয়া সারতে হয়েছে কোনও না কোনও কর্মীর বাড়িতে।

কিন্তু ২৫ এপ্রিলের পর দু’মাসের সেই ব্যস্ততা উধাও। সকালে ঘুম থেকে উঠে চায়ে চুমুকের পর ছয় বছরের ছেলে অস্মিতের সঙ্গে খুনসুটি আর আদরের পালা। বেলা হলে নিজের অফিসে এসে বসা, তবে হাল্কা মেজাজেই। বিধায়ক, তাই কিছু কাজ থেকেই যায়। তার উপর দেখা করতে আসছেন অনেকে। তাঁদের সঙ্গে গল্পেও অনেকটা সময় কেটে যাচ্ছে বাগনানের তৃণমূল প্রার্থী অরুণাভ সেনের। হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘অফিসে বসেও রেহাই নেই ছেলের হাত থেকে। এখানেও এসে হামলা করছে। আসলে দু’মাস ওর সঙ্গে মুখ দেখাদেখিই প্রায় ছিল না। এখন দলীয় কর্মীদের সঙ্গে আড্ডা মারছি। কেউ নিমন্ত্রণ করলে অনুষ্ঠানবাড়ি যাচ্ছি। আর পরিবারের সঙ্গে একটু বেশি সময় কাটাচ্ছি।’’

খালোড় গ্রামে অরুণাভবাবুর সাদামাঠা দোতলা বাড়ির নীচের বৈঠকখানায় সকাল থেকে মানুষের বিরাম নেই। কেউ আসছেন মেয়ের বিয়ের সাহায্য চাইতে। কেউ আসছেন শংসাপত্রের জন্য। তবে যাঁরা সরকারি কোনও সহায়তা চাইতে আসছেন তাঁদের ১৯ মে’র পরেই আসতে বলছেন। কৌতূহল নিয়েই প্রশ্নটা ছুড়ে দিলাম, ‘‘১৯ মে’র পর যে আসতে বলছেন, তা হলে কী জেতা নিয়ে নিশ্চিত?’’

উত্তর এল, ‘‘প্রার্থী হিসাবে আমার নাম ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই আমি প্রচারে নেমে পড়েছিলাম। সারা বছর যোগাযোগ থাকায় মানুষের কাছ থেকে বিপুল সাড়া পেয়েছি। তা ছাড়া এখন টেনশন করার তো মানে হয় না। যা হওয়ার তা তো হয়েই গিয়েছে।’’

ভোটের আগে হলে হয়তো এমন ঘরোয়া ছবি দেখা যেত না। কিন্তু আর ভোট নেই, তাই ঘর-সংসারে একেবারে বুঁদ হয়ে গিয়েছেন মীনা দেবী। বাগনানে জোটের হয়ে সিপিএম প্রার্থী মীনা মুখোপাধ্যায় ঘোষ। সর্বক্ষণ রাজনীতিই তাঁর সঙ্গী। আর ভোটের কারণে তো নাওয়া-খাওয়া শিকেয় তুলে মাস দু’য়েক ধরে নিজের কেন্দ্রে চষে বেরিয়েছেন। এখন ভোটের ফল না বের হওয়া পর্যন্ত একটু জিরান। নিজের দল সিপিএমের দলীয় কাজকর্মের চাপও এই ক’দিন একটু হাল্কা। আর সেই সুযোগে নজর পড়েছে সংসারে। বেলা ১১টা। শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামে বাড়িতে গিয়েই দেখা গেল, রীতিমত ব্যস্ত ঘরকন্নায়। বাসনপত্র গোছাতে গোছাতে বললেন, ‘‘দলের কাজে এ দিকটায় তো তেমন নজর দিতে পারি না। এখন কয়েকদিন একটু হাল্কা। তাই...।’’

১৯ মে কী হবে, তা নিয়ে কোনওরকম টেনশন হচ্ছে না?

প্রশ্ন শুনে হাসলেন টানা কুড়ি বছর হাওড়া জেলা পরিষদের সদস্য থাকা মীনাদেবী। তার মধ্যে শেষ সাত বছর জেলা সভাধিপতি ছিলেন। বললেন, ‘‘ভোটে লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা নতুন নয়। তবু বিধানসভা তো, অনেক বড় ক্ষেত্র। তাই প্রচার, জনসংযোগে সময় দিতে হয়েছে অনেক বেশি। জোটের কর্মীরাও সমানে গা ঘামিয়েছেন। তবে এ ধরনের টেনশনে অভ্যস্ত, তাই বাড়তি কিছু মনে হচ্ছে না। তা ছাড়া জেতা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী আমি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE