জটিল: বেরিয়ে রয়েছে বিদ্যুতের তার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
বছর দুই আগের বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গিয়েছিল মধ্য হাওড়ার কদমতলা বাজার। তার পরে হাওড়ার মেয়রের নির্দেশে সব ক’টি বাজারের অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে টাস্ক ফোর্স তৈরি করেছিল হাওড়া পুরসভা। কিন্তু সেই টাস্ক ফোর্স বাজারগুলি ঘুরে অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে রিপোর্ট দেওয়া দূর আজ পর্যন্ত কোনও বৈঠকেই বসেনি। বাগড়ি মার্কেটের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড থেকে শিক্ষা নিয়ে সোমবার তড়িঘড়ি নতুন একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করে এক সপ্তাহের মধ্যে বাজারগুলির অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দিলেন মেয়র রথীন চক্রবর্তী। পাশাপাশি শহরের মাঝে থাকা মঙ্গলাহাট অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
হাওড়া পুরসভা সূত্রে খবর, হাওড়া শহরে বাজার রয়েছে ১০টি। এ ছাড়া রয়েছে মঙ্গলাহাট। যেখানে প্রতি সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ হাজার ব্যবসায়ী ও লক্ষাধিক মানুষ বেচাকেনা করতে আসেন। হাওড়ার প্রতিটি বাজার যেমন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মধ্যে অবস্থিত তেমনই মঙ্গলাহাটও বসে হাওড়া ময়দানের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার ৯টি জায়গায়। যার মধ্যে অধিকাংশই বহুতল বিল্ডিং। আগে ১৯৮৭ সালের নভেম্বরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গিয়েছিল মঙ্গলাহাট। ছাই হয়ে গিয়েছিল প্রায় চার হাজার স্টল। ওই অগ্নিকাণ্ডের পরেও টনক নড়েনি রাজ্য সরকার বা পুরসভার। বছর তিনেক আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলাহাটের পরিস্থিতি নিজে দেখে পুরসভাকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।
হাওড়ায় যে দশটি বাজার রয়েছে তার মধ্যে কালীবাবুর বাজার, কদমতলা বাজার, সালকিয়ার হরগঞ্জ বাজার-সহ অন্যগুলি অবস্থানগত দিক থেকে যেমন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মধ্যে অবস্থিত তেমনই কোনও বাজারেই আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। নেই কোনও জলাধার। অধিকাংশ বাজারের দোকানের কাঠামো তৈরি হয়েছে বাঁশ কাঠ, প্লাস্টিক দিয়ে। পাশাপাশি বাজারগুলিতে অস্থায়ী ভাবে নেওয়া বিদ্যুতের অজস্র তার বিপজ্জনক ভাবে চারদিকে ঝুলে থাকায় শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগার সম্ভাবনা সব সময়েই থাকে। ঠিক এমনই অবস্থা হাওড়া মঙ্গলাহাটের অধিকাংশ বিল্ডিংগুলির ভিতরে। সঙ্কীর্ণ বাড়ির ভিতরে অজস্র স্টল। চারদিকে ঝুলছে বিদ্যুতের তার। বৃষ্টি হলে মাঝেমধ্যেই শর্ট সার্কিট হয়। আগুন নেভানোর জন্য কয়েকটি বিল্ডিংয়ে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা থাকলেও তা অধিকাংশই অকেজো। অধিকাংশ বাড়িতে আগুন লাগলে জলের ব্যবস্থা নেই। আগুন লাগলে অপ্রশস্ত সিঁড়ি দিয়ে নামার উপায় নেই। সব বিল্ডিংই যেন এক একটা জতুগৃহ।
এ দিন মেয়রের নির্দেশে হাওড়ার হাট ও বাজারের অগ্নি-সুরক্ষা নিয়ে পুরসভার পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার ও অফিসারদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন হাওড়ার পুর-কমিশনার বিজিন কৃষ্ণা। পরে মেয়র রথীন চক্রবর্তী জানান, মঙ্গলাহাট সরানো নিয়ে পুলিশ ও পুরসভার তরফে আগেই বলা হয়েছিল। পুরসভার পক্ষ থেকে হাটগুলিতে ঠিক কত ব্যবসায়ী বসেন তার উপরে সমীক্ষা করা হয়েছে। কারণ তা না হলে নতুন জায়গায় ব্যবসায়ীদের পুর্নবাসন দেওয়া যাবে না। মেয়র বলেন, ‘‘সমীক্ষার কাজ শেষ হলে রিপোর্ট রাজ্য সরকারের কাছে পাঠিয়ে দেব। নতুন টাস্ক ফোর্স গঠন করে এক সপ্তাহের মধ্যে বাজারের অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy