ভয়াবহ: পিচ উঠে এমনই হাল হাওড়ার পঞ্চাননতলা রোডের। রবিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
এলাকায় জল জমার সমস্যা মেটাতে শুরু হয়েছিল ভূগর্ভস্থ নিকাশির পাইপ পাতার কাজ। তাতে ইতিমধ্যেই খরচ হয়ে গিয়েছে কয়েক লক্ষ টাকা। যেটুকু কাজ হয়েছে, তাতে সমস্যার সুরাহা তো হয়ইনি, উল্টে গোটা রাস্তা হয়ে গিয়েছে মরণফাঁদ। ভাঙাচোরা রাস্তায় বড় বড় পাথর ফেলে ক্ষত ঢাকার চেষ্টা করা হলেও দিন কয়েক আগের ভারী বৃষ্টিতে পিচের বাঁধন আলগা হয়ে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছে পাথরের টুকরো। সেই অসমান পাথরের উপরে মোটরবাইক, টোটো, সাইকেল পড়ে মাঝেমধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা। দফায় দফায় রাস্তা অবরোধ থেকে পুরকর্তাদের ঘেরাও— কিছুই বাদ দেননি এলাকার বাসিন্দারা। তা সত্ত্বেও রাস্তার হাল ফেরেনি। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ মেয়র তড়িঘড়ি বৈঠক ডেকে পুর কমিশনারকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
ঘটনাস্থল হাওড়া পুরসভা এলাকার পঞ্চাননতলা রোড। পুরসভা সূত্রের খবর, ঠিক বর্ষার আগে স্থানীয় বরো কমিটি মধ্য হাওড়ার সওয়া এক কিলোমিটার দীর্ঘ এই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় নিকাশি পাইপ বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়। বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীকালে দুর্নীতির অভিযোগও ওঠে। এ দিকে, রাস্তা খুঁড়ে পাইপ বসানোর কাজ শেষ হওয়ার আগেই চলে আসে বর্ষা। বৃষ্টিতে গোটা রাস্তা থেকে পিচের চাদর উঠে গিয়ে বেরিয়ে পড়েছে হাঁ-করা গর্ত। উপরন্তু, রাস্তার ধারের নর্দমাগুলি থেকে বহু দিন পাঁক পরিষ্কার না হওয়ায় সেগুলির জলধারণ ক্ষমতা গিয়েছে কমে। ফলে অল্প বৃষ্টিতেই হাঁটুজল জমছে এলাকায়।
সম্প্রতি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, গত সপ্তাহের রবিবারের বৃষ্টিতে যে জল জমেছিল, তা এখনও সব জায়গা থেকে নামেনি। অলিগলিতে নর্দমার পাঁক-জল জমে থাকায় দুর্গন্ধে টিকতে পারছেন না বাসিন্দারা। কোথাও কোথাও জল নামলেও বেরিয়ে পড়েছে রাস্তার কঙ্কাল। সব চেয়ে ভয়াবহ অবস্থা হয়েছে ভাঙা সেই রাস্তায় তড়িঘড়ি ২-৩ ইঞ্চি মাপের বড় পাথর ফেলে ক্ষত ঢাকার চেষ্টা করায়। কিছু দিন আগের ভারী বৃষ্টিতে সেই পাথর সারা রাস্তায় ছড়িয়ে যানবাহন চলাচল তো বটেই, প্রাণভয়ে হাঁটাচলা পর্যন্ত করতে হচ্ছে।
অবিলম্বে রাস্তা মেরামতির দাবি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা, পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। সুভাষবাবুর বক্তব্য, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে এলাকার দুরবস্থা নিয়ে অভিযোগ করছি। কিন্তু কোনও লাভ হয় না, কারণ পুরসভা তো কোনও চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার পর্যন্ত করে না!’’ আর এক বাসিন্দা শুভব্রত দাস বলেন, ‘‘চার মাস ধরে বিষাক্ত জল পেরিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। জানি না, কবে এই অবস্থা থেকে নিষ্কৃতি পাব।’’
হাওড়া পুরসভার রাস্তার দায়িত্বে থাকা এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘আমাদের না জানিয়েই ওই রাস্তা খুঁড়ে পাইপ বসানো হয়েছে। রাস্তার অবস্থা দেখে আমরা স্টোন মেটাল ফেলে তার উপরে স্টোন ডাস্ট দিয়ে রোলার চালিয়ে সমান করেছিলাম। কিন্তু, গত সপ্তাহের রবিবারের বৃষ্টিতে পাথরের বাঁধন আলগা হয়ে বর্তমান পরিস্থিতি হয়েছে।’’
রাস্তা দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের একাধিক বার বলার পরেও সমস্যার সমাধান না হওয়ায় ক্ষুব্ধ মেয়র রথীন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘পুর কমিশনারকে বলেছি সংশ্লিষ্ট দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের ডেকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে।’’ পুর কমিশনার বিজিন কৃষ্ণ বলেন, ‘‘ঠিক হয়েছে, বৃষ্টি একটু কমলেই ওই রাস্তার নিকাশি সংস্কারের কাজ শুরু হবে। পাশাপাশি গোটা রাস্তা ভাল করে সারানো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy