অতীত: গত বছরের এই ছবি দেখা যাচ্ছে না এ বার। ফাইল ছবি
পুজো মিটেছে। বর্ষাও বিদায় নিয়েছে। বন্যা না-হওয়ায় স্বস্তিতে আরামবাগ। তবু তার মধ্যেও হাহাকার শোনা যাচ্ছে। বালি কোথায়!
হুগলি জেলার এই মহকুমায় বন্যা বেশিরভাগ মানুষের কাছে ‘সর্বনাশ’। কিন্তু বালি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত অন্তত ৩০ হাজার মানুষের কাছে ‘পৌষ মাস’। কারণ, বন্যার জল নেমে যাওয়ার পরে মোটা বালির স্তর পড়ে। বছরভর সেই বালির ব্যবসা চলে। তার সঙ্গে যুক্ত বালিখাদ মালিক এবং শ্রমিকদের ওই উপার্জনেই সংসার চলে। কিন্তু এ বার বন্যা না-হওয়ায় নদীপাড়ে নতুন করে মোটা বালির স্তর জমেনি। গত বন্যায় জমা বালিও প্রায় নেই বললেই চলে। আর তাই দিশাহারা বালিখাদ মালিক এবং শ্রমিকেরা।
মহকুমার উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে দ্বারকেশ্বর, দামোদর এবং মুণ্ডেশ্বরী নদী। এই তিন নদীর চরেই বালি জমে। মহকুমায় বৈধ বালিখাদ রয়েছে ১২টি। আরামবাগের বালি শিল্পকে বাঁচাতে সরকারি স্তরে প্রতি বছর দু’লক্ষ কিউসেক জল মহকুমার নদীগুলিতে ছাড়ার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের মতে, এতে বালি শিল্পেও ভাটা আসবে না। কিন্তু ওই পরিমাণ জলে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে বলে প্রশাসন জানিয়েছে।
খাদ-মালিকদের পক্ষে চাঁদুরের শেখ ইসরাফিল বা বাইশ মাইলের প্রবীর ঘোষের ক্ষোভ, ‘‘একেই তো বছরভর বালি চুরি চলে। তা রোখা যাচ্ছে না। তার উপরে নদী চরে এ বার মোটা বালির স্তর নেই। খালি হালকা (থিস) বালি পাওয়া যাচ্ছে। যা শুধু ভরাটের কাজে লাগে। কয়েক হাজার শ্রমিকের রুটিরুজি বন্ধ হওয়ার মুখে। আমরা লোকসানে ডুবছি। সরকার ব্যবস্থা নিক।’’
ওই শিল্পে সঙ্কটের কথা মেনে নিয়েছেন মহকুমা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিক কমলাকান্ত পোল্লে। তিনি জানান, বিকল্প ব্যবস্থা তো কিছু নেই। তবে, নিয়মিত নজরদারি চালিয়ে মহকুমায় বালি চুরি অনেকটাই রোখা গিয়েছে। অবৈধ বালি কারবার থেকে গত বছর ২৫ লক্ষ টাকার উপর রাজস্ব আদায় হয়েছে।
সমস্যাটা অবশ্য এ বারই প্রথম নয়। এর আগেও যে সব বছর বন্যা হয়নি, সেই বছরগুলিতেও একই সমস্যায় পড়েছিলেন বালি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মানুষজন। তাঁরা জানান,অতীতে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন শহর এবং গ্রামের বাড়ি তৈরিতে আরামবাগের বালিরই বেশি চাহিদা ছিল। এখন সেই জায়গা দখল করেছে বাঁকুড়া-বিষ্ণুপুরের বালি। অনেক বছর ধরেই আরামবাগে ভাল বালির আকাল। তার উপরে রয়েছে চুরির সমস্যা।
প্রশাসনের একাংশও মানছে, আরামবাগের নদীর চর থেকে বালি চুরির রেওযাজ দীর্ঘদিনের। এমনকি, সেতুর স্তম্ভের গা থেকেও বালি সাফ হয়ে যায়। এখন সেই চুরি অনেকটা রোখা গিয়েছে বলে প্রশাসনের কর্তারা দাবি করলেও ব্যবসায়ীরা তা মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, অন্তত ১৫০টি অবৈধ বালিখাদ এখনও চলছে। তা বন্ধ হয়নি। কিছু নেতার মদতে ওই ব্যবসা চলছে বলে অভিযোগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy