Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

টাকা আনতে না পারায় স্ত্রীকে লাথি, নষ্ট ভ্রূণ

বাপেরবাড়ি থেকে টাকা আনতে পারেননি, এই ছিল ‘অপরাধ’! তাই এক অন্তঃসত্ত্বার পেটে লাথি মেরে তাঁর ভ্রূণ নষ্ট করা এবং তাঁকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টার অভিযোগ উঠল স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির পাঁচ জনের বিরুদ্ধে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জয়পুর শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:২৫
Share: Save:

বাপেরবাড়ি থেকে টাকা আনতে পারেননি, এই ছিল ‘অপরাধ’! তাই এক অন্তঃসত্ত্বার পেটে লাথি মেরে তাঁর ভ্রূণ নষ্ট করা এবং তাঁকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টার অভিযোগ উঠল স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির পাঁচ জনের বিরুদ্ধে।

হাওড়ার জয়পুরের খালনা গ্রামের বাসিন্দা, বছর কুড়ির রূপসোনা খাতুন নামে ওই তরুণীর উপরে গত ১৫ জানুয়ারি ওই অত্যাচার হয় বলে অভিযোগ। রূপসোনা বর্তমানে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বৃহস্পতিবার ওই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার করে তাঁর ভ্রূণ বের করেন। তাঁরা জানান, প্রচণ্ড জোর আঘাতের জন্যই ভ্রূণ নষ্ট হয়েছে। সে দিনই গ্রেফতার করা হয় রূপসোনার খুড়শ্বশুর শেখ মোস্তাকিন খাঁ এবং তার স্ত্রী ফিরোজা বেগমকে।

পুলিশ জানায়, ধৃতদের শুক্রবার উলুবেড়িয়া আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক দু’জনকে ১৪ দিন জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। রূপসোনার স্বামী রহিম খাঁ-সহ বাকি তিন অভিযুক্ত পলাতক। তাদের খোঁজ চলছে। হাসপাতালে রূপসোনা বলেন, ‘‘ওরা বারবার টাকার দাবি করত। কিছুদিন আগে ১০ হাজার টাকা চায়। বাবা গরিব হওয়ায় দিতে পারেনি। সে জন্য রহিম আমার পেটে লাথি মেরে বাচ্চা নষ্ট করে দিল। ওর বাড়ির বাকিরা আমায় পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিল। কোনওমতে পালাই।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাসআটেক আগে রূপসোনা-রহিমের বিয়ে হয়। রহিম পেশায় রং মিস্ত্রি। রূপসোনার বাপেরবাড়িও খালনায়। বিয়ের মাসদুয়েক পর থেকে টাকার দাবিতে শ্বশুরবাড়িতে রূপসোনার উপরে নির্যাতন শুরু হয় বলে অভিযোগ। চার মাস আগে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন রূপসোনা। সেই অবস্থাতেই রহিমরা ১০ হাজার টাকা দাবি করে রূপসোনাকে বাপেরবাড়ি পাঠায় বলে অভিযোগ। কিন্তু টাকা না-নিয়ে যাওয়ার ‘অপরাধে’ রূপসোনাকে শ্বশুরবাড়িতে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তরুণী অসুস্থ হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে বাপেরবাড়ির লোকেরা এসে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। ১০ জানুয়ারি হাসপাতাল থেকে ছুটি পান রূপসোনা। শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁর বাবার কাছে ভুল স্বীকার করে রূপসোনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।

রূপসোনার পরিজনদের অভিযোগ, বাড়ি নিয়ে গিয়ে রহিম স্ত্রীকে গর্ভপাত করানোর জন্য জোর করে। কিন্তু রূপসোনা রাজি হননি। এর পরেই ১৫ জানুয়ারি তাঁর উপরে ওই অত্যাচার। তাঁকে প্রথমে জয়পুরের বি বি ধর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরে তাঁকে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়।

রূপসোনার বাবা কালো খাঁ দিনমজুরি করেন। তিনি বলেন, ‘ মেয়ের বিয়েতে যৌতুক হিসেবে তিন ভরি সোনার গহনা এবং নগদ ৩০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। তারপরেও ওদের টাকার দাবি থামেনি।’’ অভিযুক্তদের কঠিন শাস্তিও দাবি করেছেন রূপসোনার বাবা। তিনিই থানায় জামাই, মেয়ের শ্বশুর, শাশুড়ি-সহ পাঁচ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dowry Baby Murder Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE