Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
পাল্টা অভিযুক্ত মা-সহ ৪

বধূহত্যায় স্বামী বেকসুর খালাস

বছর তিনেক আগে স্ত্রীর অপমৃত্যুতে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে গ্রেফতার হন শ্রীরামপুরের লক্ষ্মীঘাটেরা বাসিন্দা উৎপল সর। দু’মাস হাজতবাসের পরে জামিন পান।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

প্রকাশ পাল
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:২২
Share: Save:

বছর তিনেক আগে স্ত্রীর অপমৃত্যুতে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে গ্রেফতার হন শ্রীরামপুরের লক্ষ্মীঘাটেরা বাসিন্দা উৎপল সর। দু’মাস হাজতবাসের পরে জামিন পান। এতদিনে আদালতে তিনি বেকসুর খালাস পেলেন। তদন্ত যথাযথ না-হওয়ায় বিচারকের কাছে পুলিশকে ভর্ৎসনা শুনতে হল। আবার স্ত্রীর বাবা, মা-সহ চার জনের বিরুদ্ধে ওই যুবক পাল্টা খুনের অভিযোগ দায়ের করায় আদালতের নির্দেশেই তদন্তে নামতে হয়েছে পুলিশকে।

উৎপলকে সম্প্রতি বেকসুর খালাস ঘোষণা করেন শ্রীরামপুর আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (ফার্স্ট ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট) প্রশান্ত মুখোপাধ্যায়। বিচারকের বক্তব্য, এই ধরনের তদন্তে নিরপরাধের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়, আসল অপরাধী বেঁচে যায়। উৎপলের আইনজীবী জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘শুনানিতে তদন্তকারী অফিসার জানান, আত্মহত্যা বাদে অন্য কারণের সম্ভাবনা তিনি খতিয়ে দেখেননি। অথচ, একটি বিয়ে বাড়ির জন্য মৃত্যুর এক মাস আগে থেকে বাপেরবাড়ির লোকজনের কাছেই ছিলেন উৎপলের স্ত্রী রূপা।’’

২০১৬ সালের ৭ এপ্রিল সকালে হিন্দমোটরের বিধান পল্লিতে বড়দি শম্পা ঘোষের বাড়িতে মারা যান রূপা ওরফে রিঙ্কি সর। বছর দশেক আগে উৎপল-রূপার বিয়ে হয়। রূপার বাপের বাড়ি রিষড়ার নতুনগ্রামে। মেয়ের মৃত্যুর দিনই তাঁর মা মিনতি দাস জামাই উৎপল-সহ ওই পরিবারের অন্যদের বিরুদ্ধে উত্তরপাড়া থানায় লিখিত অভিযোগে জানান, শ্বশুরবাড়ির নির্যাতনে রূপা গায়ে কেরোসিন ঢেলে অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। তিনটি ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ। উৎপলের পরিবারের লোকজন আগাম জামিন নেন।

হাজত থেকে বেরিয়ে উৎপল স্ত্রীর ময়ন‌াতদন্তের রিপোর্ট সংগ্রহ করেন। উৎপলের দাবি, ওই রিপোর্টে অগ্নিদগ্ধ হওয়া ছাড়াও রূপার কপালের বাঁ দিকে, গালে, দু’হাতে ক্ষত ছিল। পেটে অল্প তরল মিলেছিল। তবে মৃত্যুর কারণ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত জানাননি ময়নাতদন্তকারীরা। ওই বছরেরই অক্টোবরে শাশুড়ি মিনতিদেবী, শ্বশুর গোকুলচন্দ্র, রূপার বড়দি শম্পা এবং শম্পার স্বামী রামপ্রসাদের বিরুদ্ধে স্ত্রীকে খুন‌ এবং প্রমাণ লোপের অভিযোগ করে আদালতে তদন্তের দাবি জানান উৎপল। ততদিনে উৎপলের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ। ২০১৭ সালের ২৬ জুলাই উৎপ‌লের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশকে এফআইআর করার নির্দেশ দেন বিচারক। ২৪ সেপ্টেম্বর পুলিশ এফআইআর করে।

উৎপলের আইনজীবী জয়দীপবাবু জানান, আদালতে তাঁর প্রশ্নের জবাবে ময়নাতদন্তকারী অফিসার জানান, রূপার পেটে পাওয়া তরল অ্যালকোহল হতে পারে। শরীরে অন্য ক্ষত আগুন লাগার আগে হয়ে থাকতে পারে। আঘাতগুলি ধারাল অস্ত্রের হতে পারে। কব্জির ক্ষত হাত বেঁধে রাখার ফলেও হতে পারে। জয়দীপের বক্তব্য, ‘‘ঘটনাটি খুনও হতে পারে বলে ওই অফিসার জানান। যদিও নির্দিষ্ট করেননি।’’

উৎপলের দায়ের করা অভিযোগের তদন্ত চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। উৎপলের দাবি, ‘‘বিনা দোষে আমাকে হাজতে থাকতে হয়েছে। আমি চাই, স্ত্রীর হত্যাকারীদের মুখোশ খুলে যাক। আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন ভাল নয়। স্ত্রী বিয়ে বাড়ির জন্য অনেক গয়না নিয়ে গিয়েছিল। সে সব ফেরত পাইনি। তদন্ত হোক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Serampore Husband Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE