টোটো-জট: চুঁচুড়ায় তোলা নিজস্ব চিত্র
শুরুতে যাকে ‘মুশকিল আসান’ বলে ভাবা গিয়েছিল, সেই টোটো নিয়েই এখন জেরবার সকলে।
বছর কয়েক আগে হুগলির বিভিন্ন প্রান্তে টোটো চলাচল শুরু হয়। ব্যাটারি চালিত এই ছোট গা়ড়ি পথে নামায় শহর-গঞ্জের বাসিন্দারা খানিক স্বস্তিও পেয়েছিলেন। কারণ, রিকশার তুলনায় টোটোর ভাড়া কম, গতি বেশি। কিন্তু ক্রমে লাফিয়ে বাড়তে থাকে টোটোর সংখ্যা। যেখানে-সেখানে তৈরি হয়েছে স্ট্যান্ড। ফলে, বিভিন্ন রাস্তায় বেড়েছে যানজট। অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণ করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে। মৃত্যুও হয়েছে। অভিযোগ, বহু টোটোর বৈধ ছাড়পত্র নেই।
যাত্রী তোলা নিয়ে টোটোর সঙ্গে অটো ও রিকশা-চালকদের গোলমালের ঘটনাও আকছার ঘটে। সম্প্রতি চন্দননগর, ব্যান্ডেলে অটোচালকদের সঙ্গে টোটোচালকদের গোলমাল হয়। টোটোর দাপাদাপি কমাতে অটো ও বাস কর্মচারীরা আন্দোলনে নামেন। কিন্তু টোটোর বাড়বাড়ন্ত আটকানো যায়নি। অভিযোগ, শাসকদলের নেতাদের হাত মাথার উপরে থাকায় টোটোর সংখ্যা এবং দাপট— দু’টোই মাত্রাছাড়া হয়েছে।
টোটোর সংখ্যা নিয়ে প্রশাসনের একাংশও উদ্বিগ্ন। জেলা পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস ছয়েক আগেও চুঁচুড়া শহরে হাজার দেড়েক টোটো চলত। সেই সংখ্যা এখন প্রায় পাঁচ হাজারে দাঁড়িয়েছে। শহরের খড়ুয়াবাজার থেকে ঘড়ির মোড়, আখনবাজার, হাসপাতাল মোড়ে টোটোর দাপটে পথ চলা দায়। চুঁচুড়ার বাসিন্দা ছন্দা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘টোটো বের হওয়ায় কিছুটা সুবিধা হয়েছিল। কিন্তু এখন রাস্তাঘাটে এত টোটো যে, চলাফেরা করাই দুষ্কর। টোটোর দাপট রুখতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।’’
চন্দননগর কমিশনারেট হওয়ার পরে সম্প্রতি শ্রীরামপুর, বৈদ্যবাটি, রিষড়া, কোন্নগর বা উত্তরপাড়া পুর এলাকায় টোটোকে নিয়মে বাঁধার চেষ্টা হয়েছিল। শাসকদলের বিধায়ক থেকে পুলিশকর্তা, পরিবহণ দফতরের আধিকারিক, পুরসভার কর্তাব্যক্তি-সহ সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সংশ্লিষ্ট পুরসভা টোটোর সংখ্যা নির্ধারণ করে তাদের ছাড়পত্র দেবে। নির্দিষ্ট সংখ্যার বাইরে এবং যত্রতত্র টোটো চালানো যাবে না। কিন্তু সিদ্ধান্তই সার। কোনও পুরসভাই উচ্চবাচ্য করেনি।
শ্রীরামপুর শহরের অটোচালকদের অনুযোগ, পুলিশের তৈরি করা নয়া নিয়মে চার জনের বেশি যাত্রী তোলা যাচ্ছে না। সে জন্য ভাড়াও বাড়াতে হয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই টোটোতে অতিরিক্ত যাত্রী তোলা হচ্ছে। তা ছাড়া, যত্রতত্র টোটো দাপিয়ে বেড়ানোয় শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাটে দেদার যানজট হচ্ছে। শ্রীরামপুর, শেওড়াফুলি স্টেশন সংলগ্ন রাস্তায় যানজট সামাল দিতে পুলিশকে রীতিমতো ঘাম ঝরাতে হচ্ছে।
টোটোর সংখ্যা অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় চালকদের একাংশও ক্ষুব্ধ। চুঁচুড়ার টোটোচালক অমর দাসের ক্ষোভ, ‘‘প্রথম দিকে কিছু গরিব ছেলে ব্যাঙ্কঋণ নিয়ে টোটো কিনেছিলেন। কিন্তু এখন অনেকেই টোটো কিনে ব্যবসা করছেন। প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে সমস্যা বাড়বে বই কমবে না।’’
জেলার আঞ্চলিক পরিবহণ অধিকর্তা শুভেন্দুশেখর দাস জানান, টোটো গাড়িটিই অবৈধ। পরিবেশ-বান্ধব হিসেবে যাত্রী পরিবহণের জন্য ই-রিকশা স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু বর্তমানে হুগলি জেলায় ই-রিকশা খুব কমই রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘বেআইনি টোটো বন্ধের জন্য দফতরের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যেই অভিযান চালানো হয়। টোটো প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির উপরেও নজর রাখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy