চন্দননগর ক্লক টাওয়ারের বন্ধ ঘড়ি। —নিজস্ব চিত্র
তিন দিন ধরে সময় থমকে গিয়েছে চন্দননগর স্ট্র্যান্ডের ক্লক টাওয়ারের ঘড়িতে। দম দেওয়ার লোক নেই।২৫-৩০ বছর ধরে প্রতিদিন সকালে রোদ-ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ফরাসি আমলের ওই ঘড়িতে দম দিয়ে আসছিলেন শহরের হাটখোলার বাসিন্দা সুশান্ত দত্ত। বহু পুরনো ঘড়ি সারানো তাঁর পেশা। ঘুরে ঘুরে সেই কাজ করেন। ক্লক টাওয়ারের ঘড়ি সচল রাখার জন্য ‘চন্দননগর হেরিটেজ’ নামে শহরের একটি সংস্থার থেকে ৫০০ টাকা মাসোহারা পেতেন তিনি। চলতি মাস থেকে মাসোহারা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে, আর দম দিতে যাচ্ছে্ন না বছর বাহান্নর সুশান্তবাবু। ২টো বেজে বন্ধ হয়ে গিয়েছে শহরের ঐতিহ্যবাহী ঘড়িটি।
সুশান্তবাবু বলেন, ‘‘ভালবেসেই কাজটা করতাম। সামান্য টাকাটাও যদি না পাই, আমার চলবে কেমন করে? আমাকে সহযোগিতা করা হলে ফের ঘড়িটা সচল করে তুলব।’’‘চন্দননগর হেরিটেজ’-এর সম্পাদক কল্যাণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ক্লক টাওয়ার একটা ‘হেরিটেজ’ সম্পত্তি। ঘড়িতে দম দিতে উপরে উঠতে গিয়ে সুশান্তবাবুর কোনও বিপদ হলে বর্তমান পরিস্থিতিতে চিকিৎসা পাওয়া বেশ কঠিন। সেই আশঙ্কাতেই তাঁকে দম দিতে বারণ করা হয়েছে। ঘড়িটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রশাসনের নজর দেওয়া একান্ত প্রয়োজন। সে কথা প্রশাসন এবং পুরসভাকে জানানোও হয়েছে।’’
যাঁরাই স্ট্র্যান্ডে বেড়াতে যান, তাঁদেরই চোখ যায় ওই ঘড়িতে। অনেকে নিজের ঘড়ির সঙ্গে সময়ও মিলিয়ে নিতেন। সেই ঘড়ি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শহরবাসীর একাংশের মন খারাপ। তাঁদের মধ্যে কুণাল দত্ত বলেন, ‘‘কুনাল দত্ত জানান," শহরে অনেক ফরাসি স্থাপত্য রয়েছে। ক্লক টাওয়ারের ঐতিহ্য কিছু কম নয়। প্রশাসনের উচিত এই ঐতিহ্যকে রক্ষা করা।’’
চন্দননগরের পুর কমিশনার স্বপন কুণ্ডু জানিয়েছেন, বিষয়টি তাঁদের গোচরে এসেছে। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ঘড়িটি মেরামতি এবং সচল রাখার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। প্রয়োজনে সুশান্তবাবুকেই কাজে লাগানো হবে।
সুশান্তবাবু জানান, টাওয়ারের দোতলার ছাদে উঠে তারপর কাঠের সিড়ি বেয়ে প্রায় ২০ ফুট উঠে ঘড়ি ও ঘণ্টার কাছে পৌছতে হয়। ১৮৪৫ সালে ফ্রান্সের জোসেফ ড্যুমেন ঘড়িটি দান করেছিলেন। গত কয়েক বছরে একাধিকবার বন্ধ হয়েছে ঘড়িটি। সচল করেছেন তিনিই। লকডাউনের সময়েও দম দিতে যেতে না-পারায় কিছুদিন ঘড়িটি বন্ধ ছিল। তখনও সুশান্তবাবুর মাসোহারা বন্ধ হয়নি। আবার সচল করেছেন তিনিই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy