আয়ের পথ খোলাই ছিল। কিন্তু কোনও এক অজানা কারণে এত দিন সেই অনুযায়ী আয় হয়নি।
হাওড়া পুর বোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে পুরসভার আয়ের পথ খুঁজতে গিয়ে এমনই তথ্য উঠে এল পুরকর্তাদের সামনে। তাঁরা
দেখলেন, যে সমস্ত জায়গা থেকে পুরসভার বিপুল টাকা আয় হওয়ার কথা, সেখানে আয় হয়েছে কোথাও এক-তৃতীয়াংশ, কোথাও বা অর্ধেকেরও কম। এমনকি, বেশ কয়েকটি এমন দফতরও রয়েছে, যেখানে এক টেবিল থেকে আর এক টেবিলে ‘ফাইল’ পৌঁছতে সময় লেগে যেত মাসের পর মাস। তাতে এক দিকে যেমন পুরসভার রাজস্ব আয়ের পথ বন্ধ থাকত, তেমনই সাধারণ মানুষেরও প্রবল হয়রানি হত।
হাওড়া পুরসভার দায়িত্ব নেওয়ার পরে পুর আয় কী ভাবে বাড়ানো যায়, তা নিয়ে সম্প্রতি অফিসার ও ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে বৈঠক করেন পুর প্রশাসক বিজিন কৃষ্ণ। আয় বাড়ানোর পথ খুঁজতে এর পরে
রাস্তায় নেমে পার্কিং, হোর্ডিং, লাইসেন্স-সহ বেশ কয়েকটি বিভাগের কাজকর্ম সরেজমিন দেখতে শুরু করেন তিনি। আর তা করতে গিয়েই চোখ কপালে উঠে গিয়েছে পুর প্রশাসকের। এর পরেই তিনি পুর অফিসারদের নির্দেশ দেন, ওই সমস্ত বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ তথ্য
জোগাড় করতে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে পাওয়া তথ্য বলছে, পার্কিং লটগুলি থেকে পুরসভার
আয় হত বছরে কমবেশি ৫০ লক্ষ টাকা। আর শহর জুড়ে থাকা কয়েকশো হোর্ডিং থেকে আয় হত মাত্র আড়াই কোটি। আর গোটা পুর এলাকা থেকে ট্রেড লাইসেন্স বাবদ আয় হত ১৪-১৫ কোটি টাকা।
পুর প্রশাসক বলেন, ‘‘আমি এলাকা ঘুরে দেখেছি, পার্কিং থেকে
যা আয় হত, তা অনেক কম। শৈলেন মান্না স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখেছি, গ্যালারির নীচে গাড়ির যা ভিড়,
তাতে সেখান থেকেই বছরে কয়েক লক্ষ টাকা আয় হওয়ার কথা। গোটা শহরে যত সংখ্যক বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং আছে, সেই হিসেব করলে আড়াই কোটির চেয়ে অনেক বেশি আয় হওয়ার কথা।’’
পুর প্রশাসক জানান, বিগত দিনে বছরে মাত্র ১৪-১৫ কোটি টাকা আয় হয়েছে ট্রেড লাইসেন্স ফি বাবদ। দিনের পর দিন কর্মীরা ফাইল আটকে রাখায় জমে গিয়েছে আট হাজারেরও বেশি লাইসেন্স। এর জেরে পুরসভার আয় বৃদ্ধি যেমন আটকে গিয়েছে, তেমনই সাধারণ মানুষও হয়রান হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘কেন এই ঘটনা ঘটেছে, তার কারণ জানতে আমরা খোঁজখবর শুরু করেছি। সাধারণ মানুষের সমস্যা মেটাতে ও পুরসভার আয় বাড়াতে কিছু ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।’’
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ট্রেড লাইসেন্স প্রক্রিয়াকে সহজ করার জন্য ৩১ জানুয়ারি থেকে লাইসেন্স ব্যবস্থাকে অনলাইন করা হচ্ছে। আগে শুধুমাত্র পুরনো ট্রেড লাইসেন্সের নবীকরণ অনলাইনে করা যেত। আগামী দিনে সব ধরনের
ট্রেড লাইসেন্স নবীকরণের পাশাপাশি নতুন ট্রেড লাইসেন্সের আবেদনও করা যাবে অনলাইনে। এই ব্যবস্থায় পুরসভার আয় অনেক বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়া, হাওড়া পুর এলাকায় যাঁদের সম্পত্তিকর কয়েক লক্ষ টাকা থেকে প্রায় কোটি টাকা পর্যন্ত বকেয়া রয়েছে, তাঁদের এ বার বিশেষ ছাড়ের সুযোগ দেওয়া হবে। কারণ, অনেক ক্ষেত্রে কর আদায়ে জটিলতার জন্যই করদাতাদের
ইচ্ছে থাকলেও তাঁরা কর জমা দিতে পারেন না। এ বার সেই সব জটিলতা দূর করা হচ্ছে।
এ সবের পাশাপাশি ৩১ জানুয়ারি থেকে পুরসভা চালু করতে চলেছে একটি টোল-ফ্রি নম্বর। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, যে কোনও বাসিন্দা ওই নম্বরে ফোন করে পুর পরিষেবা নিয়ে সমস্যার কথা জানাতে পারবেন। পরে ওই একই নম্বরে ফোন করে অভিযোগের রেফারেন্স নম্বরটি জানালে তাঁকে তাঁর অভিযোগের বিষয়ে কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে বা হতে চলেছে, তা-ও জানানো হবে বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy