Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পুকুর সংস্কারের পরে মাছ চাষ করে ‘স্বাবলম্বী’ হচ্ছেন মহিলারা

অবশেষে সেই দুর্নাম ঘুচিয়ে সে ফিরেছে পুরনো পরিচয়ে। কয়েক মাস আগেও যেখানে এলাকার যাবতীয় জঞ্জাল, আবর্জনা জমে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হয়েছিল।

নব কলেবর: এই পুকুরে চলছে মাছ চাষ। লিলুয়া অগ্রসেন স্ট্রিটে। নিজস্ব চিত্র

নব কলেবর: এই পুকুরে চলছে মাছ চাষ। লিলুয়া অগ্রসেন স্ট্রিটে। নিজস্ব চিত্র

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৮ ০১:২৫
Share: Save:

একটা সময়ে তকমা জুটেছিল ‘ভাগাড়’-এর!

অবশেষে সেই দুর্নাম ঘুচিয়ে সে ফিরেছে পুরনো পরিচয়ে। কয়েক মাস আগেও যেখানে এলাকার যাবতীয় জঞ্জাল, আবর্জনা জমে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। মশা, মাছির সেই আঁতুড় ঘরেই এখন এসেছে পরিবর্তন। হাওড়া পুরসভার ৬২ নম্বর ওয়ার্ডের সেই পুকুর সংস্কারের পরে এখন সেখানেই মাছ চাষ করে ‘স্বাবলম্বী’ হচ্ছেন এলাকার ৩৫ জন মহিলা। পুরসভার তরফে ওই পুকুরের নাম দেওয়া হয়েছে ‘আদর্শ সরোবর’।

পুরসভা সূত্রের খবর, লিলুয়া অগ্রসেন স্ট্রিটে প্রায় ১০ কাঠা পুকুরটি রয়েছে। অভিযোগ, বাম আমলে পুকুরটি নিজের পরিচয় হারিয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে এলাকার যাবতীয় আবর্জনা পুকুরে ফেলার ফলে তা ভাগাড়ে পরিণত হয়েছিল। পুরোপুরি মজে গিয়েছিল পুকুরটি। চলতি বছরের প্রথম দিকে পুকুরটি সংস্কারের বিষয়ে হাওড়া পুরসভার জলসম্পদ দফতরে আবেদন জানান স্থানীয় কাউন্সিলর কৈলাস মিশ্র। তিনি বলেন, ‘‘শুধু সংস্কার করলেই তো হবে না, রক্ষণাবেক্ষণেরও প্রয়োজন আছে। তাই প্রতিনিয়ত সেটি দেখভালের জন্য মাছ চাষের পরিকল্পনা করে এলাকার ৩৫ জন মহিলাকে নিয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করা হয়।’’ পুকুরটি উদ্বোধনের সময়ে সেখানে প্রায় ৫০ কেজি মাছের চারা ছাড়েন রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায়। স্থানীয় জেলেদের সহযোগিতা ও পরামর্শ নিয়ে লিলুয়ার ওই আদর্শ পুকুরে প্রতিদিন মাছদের দেখভাল, খাবার দেওয়া থেকে শুরু করে প্রজননের সব কাজই সামলাচ্ছেন ওই ৩৫ জন মহিলা। তাঁরা জানান, আদর্শ পুকুরে যে মাছ চাষ হবে, তা স্থানীয় কয়েকটি বাজারে বিক্রির বিষয়েও কথা হয়েছে। বিক্রি করে যে আয় হবে, তার একটি অংশ রাখা থাকবে ব্যবসার জন্য। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর এক সদস্য শম্পা চৌধুরী বলেন, ‘‘এলাকার মজে যাওয়া পুকুর সাজিয়ে তুলে যে আমরাও কাজ পেতে পারি, তা আগে ভাবিনি।’’

তবে লিলুয়ার ওই পুকুরই প্রথম নয়। এর আগেও এ ভাবে মাছ চাষে মহিলাদের যুক্ত করা হয়েছিল লিলুয়া হোমে। সেখানকার পুকুরে মাছ ছেড়ে তার প্রজননে কাজে লাগানো হয়েছিল আবাসিক মেয়েদের। স্থানীয় বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়া বলেন, ‘‘হোমের পরে এই প্রথম লিলুয়ার ওই ওয়ার্ডে পুকুর সংস্কার করে তাতে মাছ চাষে মেয়েদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে কাজে লাগানো হয়েছে। রাজ্য মৎস্য দফতর ও জেলা পরিষদের তরফে যাতে মাছের চারা বিনামূল্যে পাওয়া যায়, সে বিষয়েও কথা বলেছি।’’ তিনি জানান, বিভিন্ন ওয়ার্ডে যে স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করা হচ্ছে, এ বার থেকে প্রয়োজন মতো তাদেরও মাছ চাষে যুক্ত করা হবে। কারণ অনেক সময়ে দেখা যায়, পুকুর সংস্কারের পরে তা দেখভালের অভাবে ফের কচুরিপানায় ভরে যাচ্ছে।

হাওড়ার মেয়র পারিষদ (জলসম্পদ) অরুণ রায়চৌধুরী জানান, পুকুরে এত পরিমাণ আবর্জনা জমেছিল, যা তুলতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় পুরকর্মীদের। প্রায় সাত মাস ধরে ‘জল ধরো জল ভরো’ প্রকল্পে কাজটি করার পরে ফের আগের অবস্থায় পুকুরটি ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। পুকুর সংস্কারের পাশাপাশি আশপাশের এলাকার সৌন্দর্যায়নও করা হয়েছে। গাছ লাগানো থেকে শুরু করে পুকুরের চারপাশে বয়স্কদের বসার ও হাঁটার জায়গা করা হয়েছে। লাগানো হয়েছে আলো। পুকুরের এক পারে একটি উঁচু জায়গা তৈরি করে তাতে শিবের মূর্তি বসানো হয়েছে। চারপাশের দেওয়াল সাজানো হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও স্বামী বিবেকানন্দের ছবি এবং লেখায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Howrah Economy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE