Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Singur

পুরনো সেই নিকাশি নালা ফেরানোর কাজ শুরু সিঙ্গুরে

সিঙ্গুরের সেই জমি থেকে হারিয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক নিকাশি নালা ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। আশায় রয়েছেন চাষিরা।

মাপজোক: সিঙ্গুরে চলছে জমি জরিপের কাজ। — ছবি: দীপঙ্কর দ।

মাপজোক: সিঙ্গুরে চলছে জমি জরিপের কাজ। — ছবি: দীপঙ্কর দ।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
সিঙ্গুর শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২১ ০২:২৩
Share: Save:

অবশেষে চার বছর পরে সিঙ্গুরের সেই জমি থেকে হারিয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক নিকাশি নালা ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। আশায় রয়েছেন চাষিরা। হয়তো এ বার চাষ হবে।

বাম আমলে টাটাদের গাড়ি কারখানার জন্য অধিগৃহীত সিঙ্গুরের প্রায় হাজার একর জমি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চার বছর আগে ফেরত পেয়েছেন চাষিরা। কিন্তু সাবেক নিকাশি নালাটি আর ফেরেনি। টাটাদের প্রকল্পের জন্য বুজিয়ে ফেলা হয়েছিল। ওই জমিতে জল জমে যাতে আর চাষের কাজে অন্তরায় না হয়, সে জন্য এ বার মাঠে নেমেছে জেলা সেচ দফতর। মঙ্গলবার দফতরের কর্তারা ওই জমি পরিদর্শন ও জরিপের কাজ করেন। বুধবার থেকে নালার পথ চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু হল।

ওই দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘মোট পাঁচটি মৌজার অন্তত ২৫০ একর কৃষিজমি অসমান রয়েছে। কোথাও কৃষিজমি খুব উঁচু, আবার কোথাও খুব নীচু। বর্ষার জল দাঁড়িয়ে যায়। ফলে, চাষের কাজে সমস্যা হচ্ছে। আমরা প্রাকৃতিক যে নিকাশি নালাটি ছিল, সেটাই আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে চাইছি।’’

স্থানীয় সূত্রে জনা গিয়েছে, জমি অধিগ্রহণের আগে সিঙ্গুরের পাঁচটি মৌজার চাষের জমিতে তিন কিলোমিটারেরও বেশি বিস্তৃত একটি নিকাশি নালা ছিল। বৃষ্টির জল সেই নালা হয়ে লাগোয়া জুলকিয়া খালে গিয়ে পড়ত। কিন্তু কারখানা তৈরির সময় মাটি ফেলে জমি উঁচু করা হয়। নালাটিও বুজে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১৬-তে বর্তমান রাজ্য সরকার ওই জমি চাষিদের ফিরিয়ে দেয়। রাজ্য সরকার দাবি করেছিল, জমি ‘চাষযোগ্য’ করে ফেরানো হয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত ওই জমিতে চাষ কার্যত হয়নি। বেশ কিছু জমিতে নিকাশির সমস্যা প্রকট বলে দীর্ঘদিন ধরেই চাষিরা অভিযোগ তুলছিলেন। অনেক জমিতে বড় বড় উলুখাগড়ার জঙ্গল হয়ে গিয়েছে। কয়েকবার সেই জঙ্গল সাফ করা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু পুরোদমে চাষ এখনও চালু হয়নি।

তাই, এ বার প্রশাসনের উদ্যোগে অনেকেই আশার আলো দেখছেন। যেমন, খাসেরভেড়ির মধুসূদন বারুই। ওই তল্লাটে তাঁর দেড় বিঘা জমি রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের কাছে জমিকে চাষযোগ্য করতে আমরা আবেদন করছিলাম। সেই কাজ আগে কিছুটা হলেও পুরোপুরি হয়নি। ফলে, চাষের কাজ করতে পারছিলাম না। প্রশাসন এ বার কাজ শুরু করেছে। হয়তো এ বার ফের চাষ করতে পারব।’’

তাপস দাস নামে খাসেরভেড়ি মৌজার আর এক চাষি বলেন, ‘‘খাসেরভেড়ির উত্তর ও দক্ষিণভেড়ি এলাকায় আমাদের জমি অসমান হওয়ায় চাষ করতে পারছিলাম না। এই কাজ শুরু হওয়ার আমরা বুকে বল পাচ্ছি। ফের ওই জমিতে চাষ করতে পারব বলেই আমাদের বিশ্বাস।’’

চাষিরা আশা প্রকাশ করলেও বিরোধীরা এই উদ্যোগকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাঁদের টিপ্পনী, পুরোটাই বিধানসভা ভোটের চমক। সিপিএমের জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘এক একটা ভোট আসে আর তখন সিঙ্গুরের চাষিদের আবেদনে সাড়া দেয় রাজ্য সরকার। আগামী বিধানসভা ভোটে অবশ্য সিঙ্গুর থেকে শূন্য হাতে ফিরতে হবে তৃণমূলকে। কারণ ওই জমিতে চাষ করা যাচ্ছে না। শিল্পকেও তাড়িয়েছে শাসকেরা।’’ বিজেপির হুগলি সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি সঞ্জয় পাণ্ডে বলেন,‘‘ সিঙ্গুর নিয়ে শুধুই রাজনীতি করার ফল তৃণমূল এ বারে বিধানসভা ভোটেই বুঝবে।’’

তৃণমূল অবশ্য দাবি করেছে, ওই জমির বেশিভাগটাই প্রথম দফায় ‘চাষযোগ্য’ করে দেওয়া হয়। কিছু জমিতে সমস্যা রয়েছে। তা সমধান করা হচ্ছে। দলের পক্ষে সিঙ্গুর পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ দুধকুমার ধাড়া বলেন, ‘‘এর আগে জমিকে চাষযোগ্য করার কাজ হলেও বহু চাষি জমি অসমান থাকায় চাষ করতে পারছিলেন না। আমরা সেইসব অসমান জমিকে চিহ্নিত করে রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করে ছিলাম। আমাদের সেই আবেদন গৃহীত হওয়ার ফলেই এখন কাজ শুরু হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Singur irrigation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE