অভিযুক্তের সংখ্যা ২১। ধরা পড়েছে মাত্র ৩ জন। ফেরারদের মধ্যে রয়েছে মূল অভিযুক্তও। এই অবস্থাতেই হাওড়ার বাগনানের নপাড়ার তৃণমূল নেতা মহসিন খান খুনের মামলার তদন্ত আপাতত শেষ হয়ে গিয়েছে বলে দাবি করল পুলিশ। এমনকী সম্প্রতি এ নিয়ে চার্জশিটও জমা পড়ে গিয়েছে।
পুলিশের দাবি, চার্জশিটে ছ’জনের নাম রয়েছে তার মধ্যে ধরা পড়েছে তিনজন। বাকিদের পলাতক ঘোষণা করা হয়েছে। তার মধ্যেই রয়েছে মূল অভিযুক্ত আসরাফ আলি মিদ্যা। বাকি ১৫ জনকে গ্রেফতারের প্রয়োজনই মনে করেনি পুলিশ। তাদের শুধুমাত্র সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে।
হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘তদন্তে কোনও ফাঁক নেই। ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট দেওয়া না হলে যে তিনজনকে ধরা হয়েছে তারাও জামিন পেয়ে যেত। বাকিদেরও ধরা হবে।’’
কিন্তু পুলিশের এমন তদন্তে ক্ষোভ জানিয়েছেন নিহতের পরিজনরা। মহসিনের স্ত্রী নুরউন্নেসার অভিযোগ, ‘‘তদন্ত তড়িঘড়ি শেষ করতেই এমন করা হয়েছে। চর্জশিটে অনেক ফাঁক রয়েছে। আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন ছিল। মামলায় সাক্ষী হিসাবে অনেকের নাম রয়েছে, যাকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদই করেনি।’’ স্বামীর খুনের প্রকৃত তদন্তের জন্য তিনি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হবেন বলেও জানিয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরের গত ৪ জুন রাত সাড়ে নটা নাগাদ বাড়ির খুন হন বাগনানের নপাড়ার তৃমমূল নেতা মহসিন খান। প্রাক্তন কংগ্রেস কর্মী মহসিন চলতি বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। আসরাফ আলি মিদ্যা এলাকার তৃণমূল কর্মী বলেই পরিচিত। অভিযোগ, মহসিনের দাপটে আসরাফের প্রভাব কমছিল। সেই আক্রোশেই আসরফ, মহসিনকে খুন করে বলে অভিযোগ ওঠে।
আসরাফকে গ্রেফতারের দাবিতে রাতেই আমতা মোড়ে প্রায় তিন ঘণ্টা অবরোধ করেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা। পরের দিনও বাগনান-আমতা রোড অবরোধ করা হয়। আসরাফকে ধরতে না পারার জন্য সরে যেতে হয় বাগনান থানার আইসি উজ্জ্বল দাসকে। তাঁকে দক্ষিণ দিনাজপুরে হোমগার্ড দফতরে বদলি করা হয়। চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট থেকে বাগনানে আনা হয় অভিজিৎ সরকারকে। তৃণমূল কর্মীদের বিক্ষোভ সামলাতে উলুবেড়িয়ার তৎকালীন এসডিপিও রাণা মুখোপাধ্যায় অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতিও দেন।
কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি যে একেবারেই কথার কথা, তার প্রমাণ মিলেছে পুলিশের চার্জশিটেই। মহসিনের স্ত্রী নুরউন্নেসার অভিযোগ ছিল, আসরাফ তাঁর স্বামীকে গুলি করেছিল। তাঁর বাকি পাঁচ ভাই মহসিনকে ঘিরে ধরেছিল। ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিল আরও ১৫ জন। কিন্তু পুলিশ গ্রেফতার করে শুধুমাত্র আসরাফের তিন ভাই সইফুল, সিরাজুল এবং হাফিজুলকে। আসরাফ-সহ বাকি দুই ভাইয়ের টিকিও ছুঁতে পারেনি পুলিশ। বাকি ১৫ জনের নাম চার্জশিট-এ রাখা তো দূরের কথা, তাদের পুলিশ গ্রেফতারও করেনি। যদিও পুলিশের দাবি, প্রয়োজনে ওই ১৫ জনকে ফের তদন্তের আওতায় আনা হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy