Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

‘অসুস্থতার জন্য বদলির আবেদন কি অজুহাত?’

প্রতিদিন শ্রীরামপুর থেকে ট্রেনে গোঘাট, গোঘাট থেকে বাসে জয়রামবাটী সারদা মিশন বিদ্যাপীঠে পৌঁছন সেখানকার জীববিদ্যার শিক্ষিকা কাবেরী ঘোষ।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়, পীযূষ নন্দী
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৯ ০২:০৯
Share: Save:

বেশ ক্ষুব্ধই হয়েছেন সোমা মণ্ডল।

গোঘাটের ভগবতী গার্লস স্কুলের ওই সংস্কৃত শিক্ষিকা উত্তর কলকাতার ডানলপের বাসিন্দা। অটো, ট্রেন ধরে স্কুলে পৌঁছতে তাঁর প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা লাগে। বদলির আবেদন করেছেন। এখনও মঞ্জুর হয়নি। বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রীর স্ত্রীরোগ নিয়ে মন্তব্য শুনে তিনি ক্ষুব্ধ। সোমাদেবীর কথায়, ‘‘ধকলে অসুস্থ হয়ে পড়ছি। সে জন্যই বদলির আবেদন করেছি। এটা কি অজুহাত মনে হচ্ছে? মহিলাদের সমস্যগুলো নিয়ে কি শিক্ষামন্ত্রীর কোনও ধারণাই নেই?”

প্রতিদিন শ্রীরামপুর থেকে ট্রেনে গোঘাট, গোঘাট থেকে বাসে জয়রামবাটী সারদা মিশন বিদ্যাপীঠে পৌঁছন সেখানকার জীববিদ্যার শিক্ষিকা কাবেরী ঘোষ। শিক্ষামন্ত্রীর মন্তব্যে তিনিও অসন্তুষ্ট। তিনি বলেন, ‘‘সাংবাদিক বৈঠক করে খোলামেলা শিক্ষিকাদের স্ত্রীরোগ নিয়ে মশকরা করার অধিকার ওঁর নেই। বরং দুর্নীতি নিয়ে সরব হোন। আমি ন’বছর ধরে সাড়ে ৩ ঘণ্টা জার্নি করে স্কুল যাতায়াত করছি। লোকাল ট্রেনে শৌচাগার নেই। স্ত্রীরোগ হওয়া কি অস্বাভাবিক? মহিলাদের আরও অনেক

অসুবিধা আছে।”

একে তো ধকল রয়েছে, তার উপরে স্কুলে পৌঁছেও শিক্ষিকারা অনেকে শৌচাগারে যেতে ভয় পান। কারণ, হুগলি জেলার সিঙ্গুর, চণ্ডীতলা, হরিপাল-সহ গ্রামাঞ্চলের বহু স্কুলে মাত্র একটাই শৌচালয়। তা-ও নিয়মিত পরিষ্কার হয় না। শিক্ষিকা এবং ছাত্রীদের জন্য তা দু’টি ভাগে ভাগ করা। বেলা বাড়লে স্কুল চত্বর দুর্গন্ধে ম ম করে। আবার বহু স্কুলের শৌচালয়ে জলের জোগান ঠিকমতো থাকে না। তার ফলেও অনেকে শৌচাগার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন।

হুগলির শহরাঞ্চলে একটি স্কুলে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করছেন, এমন এক শিক্ষিকা বলেন, ‘‘মন্ত্রীমশাই কী বলেছেন, জানি না। তবে স্কুলের শৌচালয়ে গিয়ে আমার শারীরিক সমস্যা হয়েছে। তাই খুব সমস্যায় না-পড়লে স্কুলের শৌচালয় এড়িয়ে চলি। এত বছরের চাকরি জীবনে এ ভাবেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি।’’ ওই শিক্ষিকার সুর শোনা গিয়েছে সিঙ্গুরের একটি হাইস্কুলের এক নবম শ্রেণির ছাত্রীর মুখেও, ‘‘আমি স্কুলের বন্ধুদের মুখে শৌচাগারের যে ভয়ঙ্কর অবস্থার কথা শুনি, তাতে আমি ভয়ে ওখানে যাই না। আমার মতো আরও অনেকেও যায় না শুনেছি।’’

আরামবাগের বড়ডোঙ্গল হরনাথ ইনস্টিটিউশনের ভূগোল শিক্ষিকা শমীপর্ণা রায়চৌধুরীর বলেন, ‘‘মেয়েদের বাইরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে পুরুষদের চেয়ে বাড়তি অনেক সমস্যাই থাকে। আর দূর থেকে যাতায়াত করলে শুধু দিদিমণিরাই অসুস্থ হন না, শিক্ষকরাও কাহিল হন। যাতায়াতেই সমস্ত উদ্যম চলে গেলে আমাদের তো ক্লাসে সবটা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি থাকে না। সে জন্য কাছাকাছি বদলি চান অনেকেই। এতে স্ত্রীরোগের প্রসঙ্গ

তুলে শিক্ষামন্ত্রীর মন্তব্য আমাদের পছন্দ হয়নি।”।

খানাকুলে রাজহাটি বন্দর হাইস্কুলের শিক্ষিকা জয়শ্রী ধোলে গুড়াপ থেকে প্রতিদিন যাতায়াত করেন। স্কুলে পৌঁছতে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লাগে। তিনি বলেন, “আমি কখনও বদলির আবেদন করিনি। তা বলে তো এই নয় যে, প্রতিদিনের জার্নিতে আমি অসুস্থ হই না! শিক্ষামন্ত্রীর স্ত্রীরোগ নিয়ে মন্তব্য আমাদের ভাল লাগেনি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Partha Chatterjee TMC Teachers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE