Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

শেষ প্রহরে তাল কাটল চন্দননগরে

রবিবার ‘বাগবাজার চৌমাথা’র মাত্র একটি আলো দেখে এ বারের মতো চন্দননগরের জগদ্ধাত্রীর বিসর্জন শোভাযাত্রা দর্শন শেষ হল বৃদ্ধের। এবং তাঁর মতো আরও অনেকের।

থমকে: শোভাযাত্রার একটি মুহূর্ত। রবিবার রাতে চন্দননগরে। নিজস্ব চিত্র

থমকে: শোভাযাত্রার একটি মুহূর্ত। রবিবার রাতে চন্দননগরে। নিজস্ব চিত্র

প্রকাশ পাল ও তাপস ঘোষ
চন্দননগর শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৩১
Share: Save:

রাত সাড়ে ৮টা থেকে ষষ্ঠীতলা মোড়ের একধারে দাঁড়িয়েছিলেন বৃদ্ধ। সাড়ে ১০টাতেও শোভাযাত্রা এক ইঞ্চি এগোল না। বাড়ির পথ ধরলেন হতাশ মানুষটি।

রবিবার ‘বাগবাজার চৌমাথা’র মাত্র একটি আলো দেখে এ বারের মতো চন্দননগরের জগদ্ধাত্রীর বিসর্জন শোভাযাত্রা দর্শন শেষ হল বৃদ্ধের। এবং তাঁর মতো আরও অনেকের।

‘শোভাযাত্রার রাস্তা’র বিভিন্ন প্রান্তে রাতভর দফায় দফায় আলো-প্রতিমার ট্রাক বারেবারে থমকেছে। ফলে, এ বার এ শহরের বিখ্যাত শোভাযাত্রা বহু মানুষের কাছেই আনন্দের নয়, বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠে। অনেকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরে বাড়ি ফিরে যান। কেউ ঘুমিয়ে পড়েন। কেউ আবার দীর্ঘ পথ সপরিবার হেঁটেছেন। আর এই ‘অব্যবস্থা’র জন্য পুলিশ-প্রশাসন এবং চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটিকেই দুষছেন দর্শনার্থীদের একটা বড় অংশ। ক্ষুব্ধ কিছু পুজো উদ্যোক্তাও। রাস্তাতেই শোনা গিয়েছে, ‘প্রতি বছরই শোভাযাত্রা কোথাও না কোথাও থমকে যায়। কিন্তু এ বার রেকর্ড হয়েছে’।

কেন এমন হল?

চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট এবং কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী কমিটির কর্তাদের দাবি, শোভাযাত্রা শুরুর মুখে বড়বাজার সর্বজনীনের প্রতিমা বহনকারী ট্রাকের চালক চণ্ডী ধাড়়া (৪০) অসুস্থ হয়ে পড়েন। পোলবার মহেশ্বরবাটীর বাসিন্দা ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁর মৃত্যু হয়। অন্য চালক দিয়ে ওই ট্রাক নিয়ে যেতে হয়। তাতে কিছুটা দেরি হয়। তার পরে একটি পুজো কমিটির একটি ট্রাকের ট্যাঙ্কারে ফুটো ধরা পড়ে। এর পরে আবার বেশোহাটা মোড়ে সিসিক্যামেরার তারের জন্য একটি শোভাযাত্রা আটকে যায়। ভোর তিনটে নাগাদ শোভাযাত্রার একটি ট্রাকের টায়ার ফেটে যায়। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই অনেক সময় চলে যায়।

কিন্তু শহরবাসীর একাংশের দাবি, বিকল্প ব্যবস্থা না-থাকাতেই এই হাল। গোলমালের শুরু দুপুর থেকেই। যে সব পুজো কমিটি শোভাযাত্রায় যোগ দেয়নি, তাদের প্রতিমা ভাসান দেওয়ার সময়সীমা ছিল বিকেল তিনটে। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে তা শেষ করা যায়নি। শোভাযাত্রা সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা হয় অন্তত এক ঘণ্টা দেরিতে। চন্দননগর এবং ভদ্রেশ্বর মিলিয়ে মোট ৭৬টি পুজো কমিটি শোভাযাত্রায় সামিল হয়েছিল। প্রতিমা এবং আলো নিয়ে ট্রাকের সংখ্যা ছিল ২৫৫টি। এই পরিমাণ ট্রাককে সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করতে যে তৎপরতার দরকার ছিল, তা এ বার দেখা যায়নি বলে অভিযোগ।

পুজো উদ্যোক্তাদের অভিজ্ঞতা, অন্যান্য বার রাত ২টো নাগাদ যেখানে ৬০-৬৫টি প্রতিমা চন্দননগর থানার সামনে দিয়ে পার হয়ে যায়, এ বার ওই সময়ে সেই সংখ্যা ছিল মাত্র ২২। কলকাতার ভবানীপুর থেকে শোভাযাত্রা দেখতে এসেছিলেন গায়ত্রী বসু। তাঁর খেদ, ‘‘শোভাযাত্রা এগোচ্ছিলই না। প্যান্ডেলে ঠাকুর দেখার মতো হেঁটে শোভাযাত্রা দেখলাম।’’ শহরের রথের সড়ক এলাকার বাসিন্দা ধ্রুব হালদার বলেন, ‘‘এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি। একটা ঠাকুর যাওয়ার এক-দেড় ঘণ্টা বাদে পরের ঠাকুর আসছিল। পুলিশের ভূমিকা চোখে পড়ল না।’’ চন্দননগর স্টেশন রোডের একটি পুজো কমিটির এক কর্মকর্তার কথায়, ‘‘বিশৃঙ্খল অবস্থা হয়েছিল। পুলিশ তৎপর হলে এটা হত না।’’

অন্যান্য বার শোভাযাত্রা পরের দিন সকাল ৬টা-সাড়ে ৬টার মধ্যে শেষ হয়। এ বার সকাল ৯টা বেজে গিয়েছে। সোমবার দুপুর ১টার মধ্যে বিসর্জন শেষ করার সময় ধার্য হয়েছিল। এ ক্ষেত্রেও সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়। চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অজয় কুমার দাবি করেছেন, ‘‘কিছু জায়গায় ট্রাক খারাপ হওয়াতেই দেরি হয়েছে। যেখানেই প্রয়োজন হয়েছে, পুলিশকর্মীরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছেন।’’ কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী কমিটির শোভাযাত্রা উপ-সমিতির চেয়ারম্যান মানব দাসের বক্তব্য, ‘‘চালকের অসুস্থ হয়ে পড়়া, ট্রাকে গোলমাল, তারের জন্য আটকে পড়ার মতো নানা কারণে ঘণ্টাচারেক সময় নষ্ট হয়েছে। দ্রুততার সঙ্গে এবং অভিজ্ঞতাকে সম্বল করে সেই সময় অনেকটাই ‘ম্যানেজ’ করা গিয়েছে। শেষ বিচারে ঘণ্টাদেড়েক দেরি হয়েছে।’’

কিন্তু অনেকেই মনে করছেন, শেষ দিনে তাল কেটেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Carnival Jagadhatri Puja Chandannagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE