Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মানবিকতার পুরস্কার কবিতা, মিলন ও রাজীবকে

ভাল কাজের জন্য আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সংবর্ধনা পাচ্ছেন হুগলির গোঘাটের আশাকর্মী কবিতা মুখোপাধ্যায়। অজ্ঞাতপরিচয় মানসিক ভারসাম্যহীন প্রসূতি ও তাঁর সদ্যোজাতকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কামারপুকুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন কবিতাদেবী।

তিনজন: কবিতা মুখোপাধ্যায়, মিলন মালিক এবং রাজীব সিংহ। নিজস্ব চিত্র

তিনজন: কবিতা মুখোপাধ্যায়, মিলন মালিক এবং রাজীব সিংহ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
গোঘাট শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৭ ০৩:১৯
Share: Save:

ভাল কাজের জন্য আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সংবর্ধনা পাচ্ছেন হুগলির গোঘাটের আশাকর্মী কবিতা মুখোপাধ্যায়।

অজ্ঞাতপরিচয় মানসিক ভারসাম্যহীন প্রসূতি ও তাঁর সদ্যোজাতকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কামারপুকুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন কবিতাদেবী। সেদিন তাঁকে ওই কাজে সাহায্য করেছিলেন স্থানীয় ভিলেজ পুলিশ মিলন মালিক এবং সিভিক ভলান্টিয়ার রাজীব সিংহ। তাঁদেরও সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে। তিনজনকেই আগামী ১১ মার্চ বিধাননগরে জলসম্পদ ভবনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তাঁরা যাতে সেদিন সেখানে হাজির থাকতে পারেন সে জন্য জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়।

এমন সংবাদ শুনে কবিতাদেবীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আশাকর্মী হিসাবে মাত্র ১৫০০ টাকা বেতন পেলেও কাজটা ভালবাসি, সম্মান করি। সেই কাজের মূল্য পেয়ে আমি গর্বিত। সারাজীবন যেন এরকমই ভাল কাজ করতে পারি।’’ একইভাবে সংবর্ধনার খবর শুনে ভিলেজ পুলিশ মিলন ও সিভিক ভলান্টিয়ার রাজীববাবু উচ্ছ্বসিত। দু’জনেই বলেন, ‘‘এই সম্মান আরও ভাল কাজের জন্য উদ্বুদ্ধ করবে। এমনভাবেই যেন বার বার মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি।’’

কী ঘটেছিল সেদিন?

দিনটা ছিল ৮ জানুয়ারি।

গোঘাটের বেঙ্গাই সংলগ্ন বোড়ল গ্রামের সিভিক ভলান্টিয়ার রাজীব সকাল ৬টা নাগাদ বেঙ্গাইতে চা খেতে এসে দেখেন বছর পঁয়ত্রিশের মানসিক ভারসাম্যহীন অজ্ঞাতপরিচয় এক মহিলা রক্তে মাখামাখি হয়ে আছেন। নাড়ি না কাটা সদ্যোজাতকে নিয়ে প্রতীক্ষালয়ে নোংরা চটের উপর কখনও বসছেন, কখনও শুয়ে পড়ছেন। কনকনে ঠান্ডায় রীতিমতো কাঁপছেন ওই মহিলা। ঠান্ডায় মাটিতে শুয়ে সদ্যোজাত। এমন দৃশ্য দেখে আর থাকতে পারেননি রাজীব। সঙ্গে সঙ্গে ভিলেজ পুলিশ মিলনকে সব জানান। সদ্য নাইট ডিউটি সেরে বাড়িতে ফিরেছেন তিনি। কিন্তু সব শুনে তখনই ঘটনাস্থলে চলে আসেন। সব দেখার পর ডেকে আনেন স্থানীয় আশাকর্মী কবিতা মুখোপাধ্যায়কে। কালবিলম্ব না করে কবিতা নিজের বাড়ি থেকে প্রসূতির জন্য শাড়ি, ব্লাউজ এবং শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় কাপড় নিয়ে আসেন। মানসিক ভারসাম্যহীন প্রসূতি কাজে বাধা দেওয়া সত্ত্বেও তাঁর রক্তাক্ত পোষাক বদলে দেন। সদ্যোজাতকে কাপড়ে মুড়ে কামারপুকুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে খবর দেন দ্রুত অ্যাম্বুল্যান্স পাঠানোর জন্য। হাসপাতাল থেকে সকাল ৮টা নাগাদ একজন নার্স, একজন মহিলা সাফাই কর্মী সহ অ্যাম্বুল্যান্স পাঠান ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সুদীপ্ত মণ্ডল। চিকিৎসার ব্যবস্থা হয় মা ও শিশুর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE