Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

কারও জ্বর হয়েছে? প্রশ্ন নিয়ে হাজির কচিকাঁচারা

গ্রামের নাম মধ্যকূল। হাওড়ার আমতার এই গ্রামের বাসিন্দারা গত ১১ জুলাই থেকে বেশ সতর্ক হয়ে রয়েছেন। খুদেদের ভুল উত্তর দিয়ে কোনও বিপত্তি হবে না তো! উত্তর যে লিখেও নেওয়া হচ্ছে!

সংগ্রাহক: সব তথ্য নিচ্ছে খুদে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র

সংগ্রাহক: সব তথ্য নিচ্ছে খুদে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র

নুরুল আবসার
আমতা শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৯ ০২:০৭
Share: Save:

আচমকা গ্রামের কোনও বাড়িতে হাজির হয়ে একদঙ্গল খুদে ছুড়ে দিচ্ছে প্রশ্ন!

কারও জ্বর হয়েছে? বাড়ির কাছে কোথাও জমা জল আছে? বাড়িতে শৌচাগার আছে? প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়েছেন?— এমনই সব প্রশ্ন।

গ্রামের নাম মধ্যকূল। হাওড়ার আমতার এই গ্রামের বাসিন্দারা গত ১১ জুলাই থেকে বেশ সতর্ক হয়ে রয়েছেন। খুদেদের ভুল উত্তর দিয়ে কোনও বিপত্তি হবে না তো! উত্তর যে লিখেও নেওয়া হচ্ছে!

খুদেরা সকলেই মধ্যকূল প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রী। ডেঙ্গি ও প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ে গ্রামের প্রকৃত অবস্থা জানতে তারা সমীক্ষায় নেমেছে। প্রায় প্রতিদিন দুপুরে জনাকুড়ি পড়ুয়া মিড-ডে মিল খেয়ে বেরিয়ে পড়ছে এই বিশেষ কর্মসূচিতে। তাদের সঙ্গে থাকছেন শিক্ষক এবং আশাকর্মীরা।

স্কুল সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই গ্রামের ১০০টি পরিবারকে সমীক্ষার আওতায় আনা হয়েছে। সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, জ্বর কারও হয়নি। কোনও কোনও বাড়িতে বদ্ধ জায়গায় জমা জল এবং সেখানে মশার লার্ভা দেখা গিয়েছে। বেশিরভাগ বাড়িতে শৌচাগার আছে। তবে, যাঁদের বাড়িতে শৌচাগার আছে, সেই রকম একাধিক পরিবারের কোনও কোনও সদস্য এখনও মাঠে শৌচকর্ম করতে যান। প্লাস্টিক ব্যবহার কমেছে। অনেকে কাপড় বা কাগজের ব্যাগ ব্যবহার করছেন। যদিও তা সংখ্যায় কম।

কেন এই উদ্যোগ?

স্কুল সূত্রের খবর, গত বছর ২৭ এবং ২৮ ডিসেম্বর বার্ষিক অনুষ্ঠানে প্লাস্টিক বর্জনের জন্য প্রচার চালানো হয়। গ্রামে গ্রামে ঘুরে ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকেরা প্লাস্টিক ব্যবহারে বিপদ নিয়ে প্রচার চালান। প্রধান শিক্ষক দীপক মালিক বলেন, ‘‘তখনই ঠিক করি, ছাত্রছাত্রীদের প্রচারে কী ফল হল সেটা ছ’মাস পরে গ্রামে ঘুরে দেখা হবে। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্কুলগুলিকে ডেঙ্গি প্রতিরোধে প্রচারে শামিল হতে বলা হয়। ফলে, প্লাস্টিক বর্জন এবং ডেঙ্গি প্রতিরোধ কর্মসূচি দু’টি মিলিয়ে ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে সমীক্ষা করানোর সিদ্ধান্ত নিই।’’

স্কুলে মোট ১২৮ জন পড়ুয়া। মিড-ডে মিল পরিচালনা, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়, পঠনপাঠন ও পরিবেশ এবং ক্রীড়া— এই চার বিষয়ে ছাত্রছাত্রীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের ব্যবস্থা আছে। চারটি বিষয়ের প্রতিটিতে পাঁচ জন করে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে স্থায়ী সমিতি গঠন করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক জানান, স্থায়ী সমিতিগুলির সঙ্গে আলোচনা করে ডেঙ্গি ও প্লাস্টিক নিয়ে সমীক্ষার খুঁটিনাটি স্থির করা হয়। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে কুড়ি জনের সমীক্ষক দলও গঠন করা হয় বিভিন্ন স্থায়ী সমিতির সঙ্গে আলোচনা করে।

উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন আমতা-১ ব্লকের বিডিও লোকনাথ সরকার। তিনি বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষককে বলেছি সমীক্ষায় কী মিলল তার রিপোর্ট দিতে। প্রয়োজনে আমরা তা সংশোধন করব। তার ভিত্তিতে ওই গ্রামে ডেঙ্গি প্রতিরোধ এবং প্লাস্টিক বর্জনে আর কী করণীয় তা ঠিক

করা হবে।’’

প্রধান শিক্ষক জানান, তিনি দ্রুত বিডিওকে রিপোর্ট জমা দেবেন। স্কুলটি জেলা স্কুল পরিদর্শকের অফিসের সিরাজবাটী চক্রে পড়ে। চক্রের পরিদর্শক দীপঙ্কর কোলে বলেন, ‘‘এখানে ৭২টি প্রাথমিক এবং ১৬টি হাইস্কুল আছে। সব স্কুলকে সমীক্ষার কাজ করতে বলা হয়েছে। অনেকে করছেও। তবে মধ্যকূল প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা যা করছে, তা বিশেষ প্রশংসার দাবি রাখে।’’

ছাত্রছাত্রীরাও খুশি পঠনপাঠনের বাইরে এই রকম কাজে যুক্ত হতে পেরে। বিতিসা নামে চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রী বলে, ‘‘মিড-ডে মিল খাওয়া হয়ে গেলে কখন গ্রামে যাব, তার জন্য মুখিয়ে থাকি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Kids Survey
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE