Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
দূষণ ঠেকাতে উদ্যোগ কোন্নগরে

পাইপের জলে ‘ভাসান’ কালীরও 

গঙ্গা দূষণ আটকাতে দুর্গাপুজোর পরে কালীপুজোতেও কোন্নগর পুরসভার ডাকে সাড়া দিল বেশ কিছু পুজো কমিটি। গঙ্গায় বিসর্জন না দিয়ে হোস পাইপ দিয়ে প্রতিমা ধুয়ে ফেলা হল। মাটি ধোওয়া জ‌ল পড়ল গঙ্গায়।

উদ্যোগ: গঙ্গাজলে ধোওয়া হচ্ছে প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র

উদ্যোগ: গঙ্গাজলে ধোওয়া হচ্ছে প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র

প্রকাশ পাল
কোন্নগর শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৪৮
Share: Save:

গঙ্গা দূষণ আটকাতে দুর্গাপুজোর পরে কালীপুজোতেও কোন্নগর পুরসভার ডাকে সাড়া দিল বেশ কিছু পুজো কমিটি। গঙ্গায় বিসর্জন না দিয়ে হোস পাইপ দিয়ে প্রতিমা ধুয়ে ফেলা হল। মাটি ধোওয়া জ‌ল পড়ল গঙ্গায়।

বিসর্জনের ফলে গঙ্গাদূষণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সরব পরিবেশকর্মীরা। তার ফলে কিছু জায়গায় সংশ্লিষ্ট পুরসভা ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রতিমার ফুল-বেলপাতা গঙ্গার পাড়ে ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কয়েকটি জায়গায় প্রতিমা ফেলার পরে দ্রুত তা তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু বহু জায়গাতেই প্রতিমার কাঠামো মুখ থুবড়ে গঙ্গায় পড়ে থাকে বলে অভিযোগ। তাতে দূষণও ছড়ায়।

এই দূষণ আটকাতেই কোন্নগর পুরসভা যে ব্যবস্থা করেছে, তাতে গঙ্গায় প্রতিমা ফেলাই হচ্ছে না। প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে গোটা নিরঞ্জন প্রক্রিয়াটি দূষণমুক্ত করা হচ্ছে। শহরের হাতিরকুল এলাকায় গঙ্গাপাড়ে লোকনাথ ঘাটে প্রায় পনেরো ফুট চওড়া এবং দশ ফুট লম্বা অংশে ফুট তিনেক গর্ত খুঁড়ে সেখানে ঝামা, পাথর, চুন, পাথুরে ইট, ব্লিচিং পাউডার, ইট, ক্লোরিন, ফটকিরি প্রভৃতি জিনিসের স্তর করা হয়। এখানে প্রতিমা রেখে গঙ্গা থেকে জল তুলে হোস পাইপের মাধ্যমে প্রতিমা গলিয়ে ফেলা হয়। তার আগে ফু‌ল-বেলপাতা, শোলার সাজ, অস্ত্রশস্ত্র খুলে কঠিন বর্জ্য প্রতিস্থাপন প্রকল্পে পাঠানো হয়। মাটি গলানোর পরে প্রতিমার কাঠামো প্রতিমা শিল্পীদের জন্য সরিয়ে রাখা হয়। রবিবার ছিল এই বিসর্জন পর্ব।

পুর-কর্তৃপক্ষ জানান, দুর্গাপুজোয় সাতটি প্রতিমা এ ভাবে নিরঞ্জন করা হয়েছি‌ল। কালীপুজোয় করা হয়েছে পঁচিশটি। পুরসভার সাফাই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অলোক মুখোপাধ্যায় বিষয়টি তদারকি করেন। সংশ্লিষ্ট পুজো কমিটিগুলিকে পুর-কর্তৃপক্ষের তরফে শংসাপত্র দেওয়া হয়।

পুরপ্রধান বাপ্পাদিত্য চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোয় এই ব্যবস্থার কথা জেনে দেশ-বিদেশ থেকে অনেকেই যোগাযোগ করেছেন। গঙ্গাদূষণ আটকানোর এই চেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। অনেকেই মাটি ধোওয়া জল শোধন নিয়ে আরো কী করা যায়, তা নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। দুর্গাপুজোর সময় এই ব্যবস্থায় ফটকিরি, ক্লোরিন ছিল না। কালীপুজোয় তা দেওয়া হয়েছে।’’ পুরকর্মী সুজিত রায় জানান, ‘‘অনেক কমিটিই আমাদের হাতে প্রতিমা তুলে দেওয়ার কথা জানিয়েছে। পরের বার থেকে সংখ্যা আরও বাড়বে।’’ পুরপ্রধানের কথায়, ‘‘পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা যে ভাবে এগিয়ে আসছেন, তাতে আমরা কৃতজ্ঞ। সব কিছুই হচ্ছে, দূষণও আটকানো যাচ্ছে।’’

পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরেই গঙ্গা দূষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন। কোন্নগর পুরসভার এই উদ্যোগকে ‘মডেল’ করার দাবি

জানিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE