Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কোরপানের মৃত্যু বিচার পায়নি আজও

নয়ানজুলির উপরে কংক্রিটের ভাঙা চাঙড় ফেলে সাঁকো তৈরি হয়েছে। ছাউনির ঘরে ঢুকতে গেলে ভরসা সেটাই। ঝুঁকি জীবনে এ যেন একটা প্রতীক— মনে করেন উলুবেড়িয়ার বাণীতবলা শা’পাড়ার আরজিনা বেগম। 

অসহায়: কোরপানের তিন সন্তান। নিজস্ব চিত্র

অসহায়: কোরপানের তিন সন্তান। নিজস্ব চিত্র

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৫:০৪
Share: Save:

নয়ানজুলির উপরে কংক্রিটের ভাঙা চাঙড় ফেলে সাঁকো তৈরি হয়েছে। ছাউনির ঘরে ঢুকতে গেলে ভরসা সেটাই। ঝুঁকি জীবনে এ যেন একটা প্রতীক— মনে করেন উলুবেড়িয়ার বাণীতবলা শা’পাড়ার আরজিনা বেগম।

তাঁর স্বামী ছিলেন মানসিক প্রতিবন্ধী যুবক কোরপান শাহ। একসময় শহরে চলে যেতেন ভিক্ষা করতে। ঘরে বসে জরির কাজ করতেন আরজিনা। কোনও মতে সংসার চলত চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে। কিন্তু চার বছর আগে এনআরএস হাসপাতালের ছাত্রাবাসে খুন হয়ে যান কোরপান। তাঁর পঞ্চম সন্তান তখন মায়ের গর্ভে। তারপর থেকে নতুন করে লড়াই শুরু করেছেন আরজিনা। পাঁচ সন্তানের মুখে ভাত তুলে দিতে ডোমজুড়ের অঙ্কুহাটিতে একটি বোতলের কারখানায় কাজ নিয়েছেন। নিজের বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছেন মা রিজিয়ার কাছে। বৃদ্ধ বয়সে এখন ভিক্ষা করেন রিজিয়াও। নইলে মা-মেয়ের সংসার চলে না।

কোরপান খুনের ঘটনার পরে রাজ্য জুড়ে হইচই শুরু হয়েছিল। বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে আরজিনাকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। ২০১৫ সালের ৩ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসে রানি রাসমণি রোডে প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর মঞ্চ থেকে আরজিনার হাতে তুলে দেওয়া হয় ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএম দেয় ১ লক্ষ টাকা। ছিল আরও অনেক প্রতিশ্রুতি।

কিন্তু কিছুই তেমন কাজে আসেনি। রাজিয়া বলেন, ‘‘আমাদের মতো সংসারে ওই টাকা কাজে লাগে?’’ গলার স্বর নিচু করে তিনি বলেন, ‘‘আমরা কী বুঝি? তখন কত লোক এল, আমাদের বন্ধু হয়ে। পুরো টাকা আমরা কোনও দিনই হাতে পাইনি।’’ তাঁর দাবি, পড়শি-পরিজনেরা অনেকেই ভুল বুঝিয়ে নিয়ে গিয়েছেন টাকার ভাগ। পরে আর দেখতে আসেননি কেউ। তবে কিছু টাকা রাখা আছে কোরপানের দুই মেয়ের নামে। সে টাকায় হাত দিতে চান না মা-দিদিমা।

বছর পনেরোর বড় ছেলেটি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নিয়ে গিয়েছিল, হস্টেলে রেখে পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু সেখান থেকে পালিয়ে এসেছে ছেলেটি। বন্ধ হয়ে গিয়েছে পড়া। ছোট ছেলে এবং মেয়ে স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলে পড়ে।

২০১৪ সালের ১৫ নভেম্বর কলকাতায় ভিক্ষা করতে গিয়ে আর ফেরেননি কোরপান। ১৬ নভেম্বর বিকেলে এনআরএস হাসপাতালের ছাত্রাবাস থেকে উদ্ধার হয় তাঁর দেহ। পিটিয়ে খুনের অভিযোগে ছাত্রাবাসের দুই ক্যান্টিন কর্মী এবং ১০ জন ডাক্তারি ছাত্রের বিরুদ্ধে পুলিশ খুনের মামলা রুজু করে। ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। সেই মামলা এখনও চলছে। যদিও জামিন পেয়েছে ডাক্তারি ছাত্রেরা।

মামলার বিষয়ে তেমন খোঁজ রাখেন না রিজিয়া, আরজিনা। রিজিয়ার দাবি, ‘‘মাস দুই আগে দু’জন এসেছিল অভিযোগ তোলার চাপ দিচ্ছিল। তাঁরা কারা জানি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

RG Kar Korpan Shah Death Lunching Justice
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE