Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

নেতা চাই না, চিঠি প্রশাসনকে

মঙ্গলবার শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসক এবং শ্রম দফতরে চিঠি দিয়ে তাঁরা ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের ‘বাতিল’ করার দাবি জানালেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

প্রকাশ পাল
ডানকুনি শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৯ ০২:৪৪
Share: Save:

নেতাদের ‘খবরদারি’ মানবেন না ডানকুনির বিস্কুট কারখানা ‘গ্যাঞ্জেস ভ্যালি ফুডস প্রাইভেট লিমিটেড’-এর সাধারণ শ্রমিকরা। মঙ্গলবার শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসক এবং শ্রম দফতরে চিঠি দিয়ে তাঁরা ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের ‘বাতিল’ করার দাবি জানালেন।

ডানকুনির জগন্নাথপুরে দিল্লি রোডের ধারের এই কারখানায় সোমবার সাময়িক ভাবে বন্ধের (টেম্পোরারি ক্লোজার) বিজ্ঞপ্তি ঝোলান কর্তৃপক্ষ। ওই দিনই ছয় শ্রমিককে বহিষ্কারের (ডিসমিস) শাস্তি ঘোষণা করা হয়। এ নিয়ে শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ। সমস্যা সমাধানে মঙ্গলবার শ্রীরামপুরের উপ শ্রম কমিশনার পার্থপ্রতিম চক্রবর্তীর দফতরে বৈঠক থাকলেও তা হয়নি। পার্থপ্রতিমবাবু জানান, মালিকপক্ষ আসেননি। একটি শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার কলকাতায় শ্রম দফতরে বৈঠক ডাকা হয়েছে।’’ স্থানীয় সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, জট কাটাতে উত্তরপাড়ার পুরপ্রধান দিলীপ যাদব প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।

গত কয়েক দিন ধরেই নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানাচ্ছিলেন শ্রমিকরা। তাঁদের অভিযোগ, তিনটি স্বীকৃত সংগঠনের নেতারাই মালিকপক্ষের সঙ্গে ‘অনৈতিক চুক্তি’ করেছেন। এ দিন তাঁরা লিখিত ভাবে ওই নেতাদের ‘বাতিলের’ দাবি জানান। পার্থপ্রতিমবাবু বলেন, ‘‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে শ্রমিক সংগঠনগুলি বিব্রত। আইএনটিইউসি-র জেলা সভাপতি পবিত্র দেব বলেন, ‘‘বাইরে আছি। এমন ঘটনা শুনেছি বটে, তবে বিস্তারিত জানি না।’’ আইএনটিটিইউসি-র জে‌লা সভাপতি বিদ্যুৎ রাউতের প্রতিক্রিয়া, ‘‘ওখানে শ্রমিকরা নেতাদের প্রতি বীতশ্রদ্ধ। নেতারা ঠিক সময়ে শ্রমিকদের সমস্যা নিয়ে ঠিক পদক্ষেপ করেননি। ওঁদের দায়িত্বশীল‌ হওয়া উচিত ছিল।’’ কারখানার সিটু সম্পাদক হেমন্ত মাঝির বক্তব্য, ‘‘শ্রমিকরা যদি মনে করেন নিজেরাই কথা বলবেন, সেখানে আমাদের কী বলার থাকতে পারে? শ্রমিক স্বার্থেই আমরা আলোচনা চালাচ্ছিলাম।’’

শ্রম দফতরের আধিকারিকদের বক্তব্য, শ্রমিক সংগঠন থাকা সত্ত্বেও সাধারণ শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করা কঠিন। এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সংগঠন‌ না থাকলে শ্রমিকদেকে নিয়ে আলোচনা করা হত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তো আছে। নেতাদের উপরে ভরসা হারানোটা হয়তো ভাল ইঙ্গিত নয়।’’ শ্রমিকদের দাবি, নেতারা শ্রমিক স্বার্থের পরিপন্থী কাজ করছেন। সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত। এক শ্রমিকের কথায়, ‘‘কর্তৃপক্ষ জোর করে স্বেচ্ছাবসর দিতে চাইছেন। নেতারা তাতেই সম্মতি জানাচ্ছেন। ওঁরা আমাদের প্রতিনিধি না মালিকপক্ষের!’’

শ্রমিকরা জানান, ছয় শ্রমিককে বরখাস্তের কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, শনিবার স্বেচ্ছাবসর সংক্রান্ত চুক্তি হয়ে যাওয়ার পরে ওই ছয় শ্রমিক অন্যদের নিয়ে ভীতির পরিবেশ তৈরি করেন। এই পরিস্থিতিতে তাঁদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া সম্ভব নয়। শ্রমিকদের অভিযোগ, শ্রমিকদের ঘাড়ে দোষ চাপানো হচ্ছে।

কারখানায় একটি নামী ব্র্যান্ডের বিস্কুট তৈরি হয়। কয়েকশো শ্রমিক আছেন। গত ২৪ জানুয়ারি থেকে উৎপাদন বন্ধ। কর্তৃপক্ষের দাবি, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বরাত মিলছে না। তাই এই পরিস্থিতি। সম্প্রতি কিছু শ্রমিক স্বেচ্ছাবসর নেন। শনিবার স্বেচ্ছাবসরের ব্যাপারে মালিকপক্ষের সঙ্গে তিনটি শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের চুক্তি হয়। এর পরেই কারখানার সামনে শ্রমিকরা বিক্ষোভ দেখান। নেতাদের ভূমিকায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা।

স্থানীয় রিষড়া পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য মৃত্যুঞ্জয় মেটে বলেন, ‘‘গোটা পরিস্থিতি দলের উর্ধ্বতন নেতৃত্ব এবং প্রশাসনকে জানিয়েছি। আমরা চাই কারখানা চলুক। কাউকে যাতে কাজ হারাতে না হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Worker Union Biscuit Factory
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE