Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ট্রেন নেই, বাস কম, সঙ্গী দুর্ভোগ

বিকেল ৫টা বাজলেই বিপদ! উদয়নারায়ণপুর থেকে কেউ হাওড়া যেতে চাইলে নাকাল হতে হয় বিস্তর। কারণ, বাস নেই। গাড়ি ভাড়া করে আমতা বা রাজাপুর হয়ে যেতে হয়। কিন্তু তাতে খরচ অনেক। বকপোতা হয়ে যাতায়াতের সহজ রাস্তাটি বন্ধ। কারণ, বন্ধ বকপোতা সেতু।

নির্মীয়মাণ বাসস্ট্যান্ড ও বাজার চত্বর।

নির্মীয়মাণ বাসস্ট্যান্ড ও বাজার চত্বর।

নুরুল আবসার
উদয়নারায়ণপুর শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৫ ০১:০৬
Share: Save:

বিকেল ৫টা বাজলেই বিপদ!

উদয়নারায়ণপুর থেকে কেউ হাওড়া যেতে চাইলে নাকাল হতে হয় বিস্তর। কারণ, বাস নেই। গাড়ি ভাড়া করে আমতা বা রাজাপুর হয়ে যেতে হয়। কিন্তু তাতে খরচ অনেক। বকপোতা হয়ে যাতায়াতের সহজ রাস্তাটি বন্ধ। কারণ, বন্ধ বকপোতা সেতু।

বিকল্প হিসেবে ট্রেনও নেই। কারণ, এ শহরের সঙ্গে এখনও ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থাটাই গড়ে ওঠেনি।

শহর ক্রমশ বাড়লেও উদয়নারায়ণপুরের পরিবহণ ব্যবস্থা এখনও সেই তিমিরে। বিকেল পাঁচটার পর শহর কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে জেলার অন্য অংশের সঙ্গে। যোগাযোগ ব্যবস্থার এই প্রতিকূলতাই উদয়নারায়ণপুরকে অনেকটা পিছিয়ে দিচ্ছে বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাই তাঁরা যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের দাবি তুলেছেন।

উদয়নারায়ণপুরের তৃণমূল বিধায়ক সমীর পাঁজা বলেন, ‘‘এখানে বাসস্ট্যান্ড তৈরি হচ্ছে। তা হয়ে গেলে পরিবহণ ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হবে। আশা করি, তখন আর যাতায়াতের সমস্যা থাকবে না।’’

রামপুর-হাওড়া বা ডিহিভুরসুট-হাওড়া— এই দুই রুটের বেসরকারি বাস উদয়নারায়ণপুর ছুঁয়ে শেষবারের মতো চলে যায় পাঁচটার আগেই। ওই দুই রুটের বাসের সংখ্যা কম হওয়ায় দিনের বেলাতেও যাত্রীদের অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। উদয়নারায়ণপুর-ধর্মতলা রুটের সিটিসি বাসের সংখ্যাও কম। সকালে দু’টি, বিকেলে দু’টি। বিকেলের শেষ বাসটি ছাড়ে পাঁচটার সময়ে। গোদের উপরে বিষফোঁড়ার মতো এক বছর ধরে বন্ধ বকপোতা সেতু। ফলে, উদয়নারায়ণপুর থেকে বকপোতা, জগৎবল্লভপুর, বড়গাছিয়া হয়ে হাওড়া যাতায়াতের পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বকপোতায় দামোদরের উপরে পুরনো সেতুটিও জীর্ণ হয়ে পড়ায় এখান দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুরনো সেতুর পাশেই তৈরি হওয়ার কথা নতুন সেতুর। কিন্তু জমি-জটের কারণে আটকে যাওয়া সেতুর কাজ কবে শুরু হবে, সে বিষয়ে রাজ্য পূর্ত (সড়ক) দফতর বা জেলা প্রশাসনের থেকে কোনও উত্তর মেলেনি। উদয়নারায়ণপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে এক সময়ে হুগলির হরিপাল যাওয়ার বাস ছাড়ত। কিন্তু বকপোতা সেতু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেই রুটের বাসও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

উদয়নারায়ণপুর থেকে বকপোতা যাওয়ার বেহাল রাস্তা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, উদয়নারায়ণপুর থেকে সরাসরি ধর্মতলা যাওয়ার চারটি সিটিসি বাস ছাড়া আর কোনও সরকারি বা বেসরকারি বাস ছাড়ে না। ডিহিভুরসুট বা রামপুর থেকে যে সব বাস হাওড়ায় যায় তারাই উদয়নারায়ণপুর মোড়ে এসে কিছু ক্ষণ দাঁড়ায়। বাসস্ট্যান্ড থাকলেও সেখানে সেই সব বাস ঢোকে না।

সঙ্কট রয়েছে উদয়নারায়ণপুর-বকপোতা রাস্তাটি ঘিরেও। গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এক কিলোমিটার রাস্তাটির দু’দিক ভরে গিয়েছে আগাছায়। নিয়মিত কাটা না হওয়ায় বড় বড় গাছের ডাল ঝুলে পড়েছে রাস্তায়। সন্ধ্যার পরে ওই রাস্তা ব্যবহার করতে অনেকেই দুর্ঘটনার আতঙ্কে ভোগেন। অথচ, ওই রাস্তা দিয়েই উদয়নারায়ণপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে যাতায়াত করতে হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা গৌতম বাকুলি বলেন, ‘‘কলকাতা বা হাওড়ার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ বাড়ল‌ে এই শহরের আরও উন্নতি হতো। কিন্তু উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে সেই উন্নতি ব্যাহত হচ্ছে। সন্ধ্যার পরে শহর যদি ঘুমিয়ে পড়ে, তা হলে তো সমস্যা হয়।’’

বর্তমানে নতুন বাসস্ট্যান্ড তৈরির কাজ চলছে পুরোদমে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, শুধু বাসস্ট্যান্ড চালু করলেই হবে না। এখান থেকে হাওড়া বা কলকাতার বাস সরাসরি চালানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া রামপুর বা ডিহিভুরসুট রুটের বাসগুলি যাতে স্ট্যান্ডে ঢুকে কিছুক্ষণ দাঁড়ায়, সেই ব্যবস্থাও করতে হবে। বিধায়ক জানান, সংস্কারের পরে বাসস্ট্যান্ডের এক অংশে বাজার চত্বর তৈরি করা হবে। আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে বাজার চত্বর এবং বাসস্ট্যান্ড তৈরির কাজ শেষ হয়ে যাবে।

কিন্তু বাসস্ট্যান্ড থেকে নতুন রুটের বাস কী ছাড়বে?

জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের ভাইস-চেয়ারম্যান অজয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘উদয়নারায়ণপুরে পরিবহণ সমস্যার কথাটি আমরা জানি। ৩০ জুন বৈঠক আছে। সেখানে সমস্যাটি নিয়ে আলোচনা করা হবে।’’

আশায় রয়েছেন শহরের বাসিন্দারা।

(চলবে)

ছবি: সুব্রত জানা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Udaynarayanpur Transport system Train Bus car
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE