Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

কর্মীর অভাব, বন্ধ ১৮টির বেশি গ্রামীণ পাঠাগার

হাওড়ায় জেলা ও শহর গ্রন্থাগারগুলির চেহারা অনেকটা ভাল হলেও গ্রামীণ গ্রন্থাগারগুলির চেহারা একেবারেই দুয়োরানির দশা।

কর্মীর অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া শ্যামপুরের একটি পাঠাগার। ছবি: সুব্রত জানা

কর্মীর অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া শ্যামপুরের একটি পাঠাগার। ছবি: সুব্রত জানা

মনিরুল ইসলাম
হাওড়া শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৬ ০৪:১২
Share: Save:

হাওড়ায় জেলা ও শহর গ্রন্থাগারগুলির চেহারা অনেকটা ভাল হলেও গ্রামীণ গ্রন্থাগারগুলির চেহারা একেবারেই দুয়োরানির দশা।

দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ বন্ধ। কাজ চালাচ্ছেন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। কোথাও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীও না থাকায় বছরের পর বছর তালা বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে গ্রন্থাগার। গ্রন্থাগার বন্ধ থাকায় স্থানীয় মানুষ থেকে ছাত্রছাত্রীরা পরিষেবা পাচ্ছেন না। যেগুলি খোলা আছে, সেগুলিতেও কোনও গ্রন্থাগারিক না থাকায় বি‌ভিন্ন পত্রপত্রিকা থেকে বইপত্তর কোনও কিছুই ঠিকমতো পাচ্ছেন বলে ওই সব গ্রন্থাগারের সদস্যদের অভিযোগ। সেইসঙ্গে দেখভালের অভাবে বহু গ্রন্থাগারেই নষ্ট হচ্ছে দামী, গুরুত্বপূর্ণ বই। আসবাবপত্র।

হাওড়া জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক তুষার কান্তি চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কর্মী সংখ্যা কম থাকা বা গ্রন্থাগার বন্ধ থাকার কথা বিভিন্ন সময় গ্রন্থাগার দফতরকে জানিয়েছি। দফতর থেকে কর্মী নিয়োগের আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। কর্মীনিয়োগ হলেই ওই সব গ্রন্থাগারে কর্মী পাঠানো হবে। তবে তিনি আরও জানান, অবসরপ্রাপ্ত গ্রন্থাগার কর্মীদের দিয়ে কিছু গ্রন্থাগার খুলে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। যাতে লোকেরা অন্তত পরিষেবা পায়।

জেলা গ্রন্থাগার দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে হাওড়ায় মোট গ্রন্থাগারের সংখ্যা ১৩৬টি। এর মধ্যে গ্রামীণ পাঠাগার ১২৩টি। শহর পাঠাগার ১২টি ও জেলা গ্রন্থাগার ১টি। জেলা বা শহর পাঠাগারের অবস্থা মোটামুটি ভাল হলেও শোচনীয় অবস্থা গ্রামীণ পাঠাগারগুলোর। হাওড়া জেলায় একটি-দুটি নয় এই রকম বন্ধ হয়ে যাওয়া গ্রন্থাগারের সংখ্যা কমপক্ষে ১৮টি। কোনওটি বছর পাঁচেক বন্ধ তো কোনটি তারও বেশি। গ্রন্থাগারিক নেই এ রকম গ্রন্থাগারের সংখ্যা কমপক্ষে ৪০টি। সেগুলো হয় চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের দ্বারা কোনও রকমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। নয়তো অন্য কোনও গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিককে ওই সব গ্রন্থাগারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও সমস্যা হলো, সময়াভাবে তাঁরাও সব গ্রন্থাগারে ঠিকঠাক সময় দিতে পারছেন না। সপ্তাহে অর্ধেক দিন নিজের গ্রন্থাগারে, আর অর্ধেক দিন অন্য গ্রন্থাগারে এই ভাবেই ৪০টি গ্রন্থাগার চলছে।

বাগনান ১ ব্লকের কল্যাণপুরের বঙ্কিম পাঠাগার বছর তিনেকের বেশি বন্ধ। শ্যামপুর ২ ব্লক এলাকার নাউল প্রগতি পাঠাগার বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে পাঁচ বছরের বেশি। একই অবস্থা উলুবেড়িয়ার বৃন্দাবনপুর কল্যাণব্রত সংঘ পাঠাগার সহ আরও অনেক পাঠাগারের। কল্যাণপুর বঙ্কিম পাঠাগারটি দোতলা। বছর কয়েক আগে সেটা সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু এখন সেখানে কোনও পরিষেবা পান না ছাত্রছাত্রীর থেকে বইপ্রেণীরা। কারণ না আছে গ্রন্থাগারিক, না আছে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। গ্রন্থাগার দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রন্থাগারটি ভালই চলত। কয়েকশো গ্রাহক ছিল এখানে। স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করতে আসত গ্রন্থাগারটিতে।

কিন্তু পরিকাঠামো বেহাল হয়ে এখন তা কার্যত ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। কল্যাণপুরের বাসিন্দা দেবাশিস দত্ত বলেন, ‘‘এক সময় নিয়মিত এখানে এসে নানা ধরনের বই পড়তাম। প্রচুর ছাত্রছাত্রীকে দেখেছি এখানে এসে পড়াশোনা করতে। অনেকে চাকরি সংক্রান্ত নানা পত্রিকা পড়তে আসত। এখন গ্রন্থাগারের হাল দেখলে কান্না পায়। বইপ্রমীদের কাছে এটা একটা বড় আঘাত। আমরা চাই সরকার এই গ্রন্থাগার-সহ আরও যে সব গ্রন্থাগারের এমন অবস্থা হয়ে রয়েছে সে সবের উন্নতির জন্য ব্যবস্থা নিলে ভাল হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

school library
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE