Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
মশা মারার ব্যবস্থা কই, উঠছে প্রশ্ন
Dengue

ডেঙ্গিতে মৃত্যু ডোমজুড়ে, বাড়ছে ক্ষোভ

ফের ডোমজুড়ে ডেঙ্গিতে এক মহিলার মৃত্যুতে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের ক্ষোভ, মশা মারার ব্যবস্থা কই? কেন ব্লিচিং পাউডা়র ছড়ানো হচ্ছে না?

মৃত সুলতা নস্কর।নিজস্ব চিত্র

মৃত সুলতা নস্কর।নিজস্ব চিত্র

নুরুল আবসার
ডোমজুড় শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৭ ০২:২০
Share: Save:

এলাকার আনাচ-কানাচে যে ভাবে জমা জল এবং আবর্জনায় মশা বংশবৃদ্ধি করছে, তাতে এই ডেঙ্গি মরসুমে প্রমাদ গুনছিলেন অনেকেই। ফের ডোমজুড়ে ডেঙ্গিতে এক মহিলার মৃত্যুতে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের ক্ষোভ, মশা মারার ব্যবস্থা কই? কেন ব্লিচিং পাউডা়র ছড়ানো হচ্ছে না?

বৃহস্পতিবার সকালে সলপ-২ পঞ্চায়েতের মাঝের বটতলা গ্রামের বাসিন্দা, ডেঙ্গি আক্রান্ত সুলতা নস্করের (৩৯) মৃত্যু হয় কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। এই নিয়ে গত এক মাসে হাওড়া জেলায় ডেঙ্গিতে চার জনের মৃত্যু হল। তার মধ্যে তিন জনই ডোমজুড়ের বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।

শুক্রবার সকালে সুলতাদেবীর বাড়ি সংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেল, কোনও ‌নিকাশি নালা নেই। যত্রতত্র জল জমে রয়েছে। সেখানকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই জমা জলই মশার আঁতুড়ঘর। বর্ষার সময়ে রাস্তা এবং এলাকার জল বেরোতে পারেনি। সুলতাদেবীর বাড়ির পাশেই একটি খোলা জায়গা জমা জলে ভরে রয়েছে। তা আবর্জনায় ভরা। মহল্লার পিছনে একটি ফাঁকা জমিও বর্জ্যে ভর্তি। স্থানীয়েরা জানান, একসময়ে এলাকার সব জমা জল এই ফাঁকা জমিতে পড়ত। তার পরে নিবড়া, মুন্সিডাঙা হয়ে সেই জল বিভিন্ন খাল দিয়ে বেরিয়ে যেত। কিন্তু কয়েক বছর ধরে অপরিকল্পিত ভাবে বাড়ি তৈরির ফলে জল বেরোতে পারছে না।

শোকার্ত স্বামী।নিজস্ব চিত্র

সুলতাদেবীর মৃত্যুর পরে আতঙ্কিত বাসিন্দারা পঞ্চায়েতের কাছে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো এবং মশা মারার ব্যবস্থার দাবি জানান। শুক্রবার সকালেই পঞ্চায়েতের তরফে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো হয়। যদিও তা যথেষ্ট নয় বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। কৃষ্ণেন্দু পোড়েল নামে এক যুবক বলেন, ‘‘বাঁচার উপায় নিজেদেরই করতে হবে। আমরা পোড়া মোবিল এবং কেরোসিন সংগ্রহ করেছি। তা ছড়িয়ে দেব। মশার উপদ্রব কমবে। জঞ্জালও সাফাই করব সবাইকে নিয়ে।’’

এলাকায় দু’জন জ্বরে আক্রান্ত। তাঁদের এক জন আবার সুলতাদেবীরই ভাসুরের মেয়ে। দুই পরিবারেরই অভিযোগ, এ দিন আশাকর্মী এসে খোঁজখবর নিলেও এতদিন স্বাস্থ্য দফতরের কারও টিকি দেখা যায়নি। তাই তাঁরা নিজেরাই আক্রান্তদের রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করছেন।

যে এলাকায় তিন-তিন জন ডেঙ্গিতে মারা গেলেন, সেখানে কী করছে পঞ্চায়েত?

সুলতাদেবীর বাড়ির পাশের ডোবা। নিজস্ব চিত্র

উত্তর পাশ কাটিয়ে গিয়েছেন প্রধান তৃণমূলের কেয়া নস্কর। তিনি বলেন, ‘‘এলাকার পরিস্থিতি নিয়ে দলের নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ না করে একটি কথাও বলব না।’’ তবে, বিডিও রাজা ভৌমিক জানান, জরুরি ভিত্তিতে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরকে বলা হয়েছে প্রশাসনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে। ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ডোমজুড়ের ২৭৯টি গ্রাম সংসদে জরুরি বৈঠক করা হবে। ডেঙ্গি সচেতনতা এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা হবে। তিনি বলেন, ‘‘এর পরেও যদি ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো বা অন্য কোনও ব্যাপারে কারও অভিযোগ থাকে, আমাকে বলুন।’’

গত ২১ অক্টোবর ভাইফোঁটা দিতে মাকড়দহে বাপেরবাড়ি গিয়েছিলেন সুলতাদেবী। ওইদিন বিকেলে তাঁর জ্বর হয়। একবার বমিও হয়। চিকিৎসক রক্ত পরীক্ষার পরামর্শ দেন। পরে সুস্থ বোধ করায় তিনি সেই পরীক্ষা না-করিয়েই সোমবার বাড়ি ফিরে আসেন। কিন্তু ওইদিন সকালে ফের তিনি বমি করেন। রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি মেলে। কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। সুলতাদেবীর এক মেয়ে। নবম শ্রেণির ছাত্রী। স্বামী সূর্যবাবুর মুদিখানা রয়েছে। বিডিও জানান, তিনি সুলতাদেবীর মেয়ের পড়াশোনার দায়িত্ব নিতে চান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Dengue Mosquitoes
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE